সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তার ভূমি রাজস্বনীতি। আকবর বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাম্রাজ্যের মূল চাবিকাঠি হলো রাজস্ব ব্যবস্থা। কারণ রাজস্ব আয়ের উপরেই সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে। তাই তিনি একটি আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থঅর প্রচলন করেন। তার প্রবর্তিত ভূমি রাজস্বনীতির ফলে সাম্রাজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। এজন্য সমসাময়িক ঐতিহাসিকরা সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত ভূমি রাজস্বনীতির প্রশংসা করেছেন।
সম্রাট আকবরের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা
সম্রাট আকবর রাজস্ব ব্যবস্থার পুনর্গঠনের জন্য প্রথমেই দেওয়ান খাজা আব্দুল মজিদ খানকে রাজস্ব সংস্কারের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে ১৫৭১ সালে আকবর মুজাফফর খান তুরবতীকে দেওয়ান নিযুক্ত করে তার উপর ভূমি রাজস্ব সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করেন। পরবর্তীতে ১৫৭৩ সালে সম্রাট আকবর রাজা টোডরমলের উপর রাজস্ব সংস্কারের দায়িত্ব দেন। টোডরমল সর্বপ্রথম সাম্রাজ্যের সমস্ত জমি জরিপ করে জমির গুণ ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে নতুনভাবে রাজস্ব নির্ধারণ করেন।
সম্পর্কিত বিষয়
আকবরনামা গ্রন্থের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লিখ
খারাজ কি? সুলতানি আমলে খারাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
রাজা টোডরমল অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আবাদি জমি জরিপ করেন এবং উৎপাদিকা শক্তির উপর ভিত্তি করে তিনি আবাদি জমিকে চার ভাগে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো-
১. পোলাজ : এই জমি প্রতিবছর চাষাবাদ করা হতো।
২. পারাউতি : এই জমি চাষের পর জমির উর্বরতা রক্ষার জন্য কিছুদিন পতিত রাখা হতো।
৩. চাচর : এই জমি ৩-৪ বছরের জন্য পতিত রাখা হতো।
৪. বঞ্জর : এই জমি পাঁচ বছর বা তার চেয়েও বেশিদিন পতিত রাখা হতো।
এছাড়া টোডরমল পোলাজ ও পারাউতি জমিকে উৎপন্ন ফসলের পরিমাণের ভিত্তিতে উৎকৃষ্ট, মধ্যম এবং নিকৃষ্ট এই তিন ভাগে ভাগ করেন। এছাড়া সম্রাট আকবরের সময় ‘জাবতী’ প্রথা প্রচলন চিল। এছাড়াও গাল্লাবখশ এবং নাসাখ নামে আরও দুটি প্রথায় খাজনা আদায় করা হতো। আকবরের সময়ে রাজস্ব আদায়ে সাহায্য করতেন বিতিরুচি, পোদ্দার, মুকাদ্দাম, পাটোয়ারি, কানুনগো প্রমুখ কর্মচারী। এসময় রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা হতো।
পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যকে কতগুলো প্রদেশে ভাগ করেন এবং প্রদশেগুলোকে কতকগুলো সরকার ও সরকারগুলোকে কতকগুলো পরগনায় বিভক্ত করেন। প্রত্যেক সরকার এবং পরগনার রাজস্ব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন আমিল। সম্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রায়ত বা কৃষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার জন্য আমিলদের নির্দেশ দেন।