Home » যাকাত কি? যাকাত আদায়ের উৎস সমূহ কি কি?

যাকাত কি? যাকাত আদায়ের উৎস সমূহ কি কি?

by TRI

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। গুরুত্বের দিক থেকে এটির স্থান নামাজের পরেই। আর্থিক ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলামে যাকাতের বিকল্প নেই। তাই যাকাতকে ইসলামি অর্থব্যবস্থার মেরুদন্ড বলা হয়। সম্পদের সুষম বণ্টন, সামাজিক সমতাসহ সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থায় যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম।

যাকাতের সংজ্ঞা

যাকাত শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি ও পবিত্রতা। ইসলামি অর্থনীতির পরিভাষায় ঋণ ও যাবতীয় প্রয়োজন নির্বাহরে পর বছরান্তে যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে, তবে উক্ত ধন-সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রদান করাকে যাকাত বলে।

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যাকাতের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-

সুফিয়ান সাওরীর ভাষায়, “যাকাত বলতে বুঝায় স্ব-উপার্জিত পুঞ্জীভূত সম্পদ থেকে প্রত্যেক বছর কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ইসলামি শরিয়ার বিধান অনুযায়ী বের করে দেওয়া।”

ইসলামি শরিয়তের আইনানুযায়ী, “কোনো ব্যক্তির গৃহে বাৎসরিক সমুদয় খরচাদির পর সঞ্চিত সম্পদ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব, মিসকিন, অসহায়দেরকে দান করাই যাকাত।”

আরও পড়ুন:  মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসের উৎস বা উপাদানসমূহ কি কি?

আল্লামা কোস্তলানী (রহ.) বলেন, “বিশেষ কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ বের কর নেওয়াকে যাকাত বলে।”

যাকাত আদায়ের উৎসসমূহ

যাকাত আদায়ের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। নিম্ন সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১. গবাদিপশু

গবাদিপশু থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত আদায় করা হয়ে থাকে বলে এটি যাকাতের একটি বৃহৎ উৎস। এক্ষেত্রে গবাদিপশুগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া, গাধা, খচ্চর ইত্যাদি।

২. স্বর্ণ

অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূ্র্ণ সম্পদ হচ্ছে স্বর্ণ। স্বর্ণ যাকাত আদায়ের বৃহত্তম উৎস। কারো নিকট যদি সাড়ে সাত তোলা অর্থাৎ ২০ মিসকাল স্বর্ণ পূর্ণ এক বছর সঞ্চিত থাকে তাহলে অর্ধেক মিসকাল যাকাত প্রদান করতে হবে।

LEXUPA Muslim Abaya Dress

Muslim women dress যাকাত

৩. রৌপ্য

রৌপ্যও সোনার ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এ সম্পদ থেকেও প্রচুর পরিমাণ যাকাত আয় করা হয়ে থাকে। নিঃসন্দেহে এটিও একটি যাকাত আদায়ের অন্যতম উৎস। ইসলামি বিধান অনুযায়ী যদি কারো নিকট সাড়ে ৫ তোলা রৌপ্য পূর্ণ বছর অতিক্রম করে তাহলে ঐ রৌপ্যের ক্ষেত্রে ৪০ ভাগের এক ভাগ হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পৃথক পৃথকভাবে নিসাব পরিপূর্ণ না হলেও উভয়ে সম্মিলিত ভাবে নিসাবের সীমারেখা স্পর্শ করলে যাকাত আদায় করতে হবে।

৪. ব্যবসায়ের সম্পদ

ইসলাম ব্যবসায়ের সম্পদ বা পণ্যের উপর যাকাতের বিধান আরোপ করে যাকাত আদায়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎসের সৃষ্টি করেছে। ব্যবসায়ের পণ্যগুলো (গবাদিপশু ব্যতীত) যদি স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাবের সমতা লাভ করে তাহলে ঐ ব্যবসায়ী পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করার পর একটি নির্দিষ্ট অংশ যাকাত প্রদান করবে।

৫. খনিজ সম্পদ

ইসলামি শরিয়া খনিক সম্পদের উপর যাকাতের বিধান আরোপ করে যাকাত আদায়ের উৎস সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। যাকাত আদায়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে খনিজ সম্পদের বিধান হচ্ছে যদি কারো ভূসম্পদে কোনো খনিজ দ্রব্যের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে ইসলামি বিধান অনুযায়ী তাকে ঐ প্রাপ্ত সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ যাকাত প্রদান করতে হবে।

৬. জমিতে উৎপাদিত ফসল

ইসলাম জমির উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংস যাকাত হিসেবে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করে। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফসলের উপর এক-দশমাংশ এবং কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপন্ন ফসলের ২০ ভাগের এক ভাগ হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে।

৭. মুদ্রা

প্রচলিত মুদ্রার ক্ষেত্রে ইসলাম স্বতন্ত্র কোনো যাকাতের বিধান আরোপ করে নি। স্বর্ণ ও রৌপ্য যে যুগে প্রচলিত হয়ে যাকাতের নিসাবে পদার্পণ করে যাকাতের আওতাভুক্ত হতো এবং যে হারে যাকাত ওয়াজিব হতো বর্তমানে মুদ্রার ক্ষেত্রেও সোনা-রূপার মতোই যাকাতের বিধান প্রযোজ্য।

Related Posts