১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট যে একুশ দফা দাবি পেশ করেছিল, তাতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসনের দাবি অন্তর্ভূক্ত করে ছয় দফা দাবি পেশ করে। তবে একুশ দফা এবং ছয় দফা দাবির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
প্রথমত, একুশ দফা ও ছয় দফা দাবি বেশ আলাদা ধরনের পটভূমিকায় পেশ করা হয়। মুসলিম লীগ সরকারের কুশাসন ও ভাষা আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেই একুশ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
অন্যদিকে আইয়ুব খানের আমলে পূর্ব বাংলার উপর যে অবাধ শাসন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছিল, তার প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবি পেশ করে। আঞ্চলিক শোষণ ও বৈষম্যই ছয় দফা দাবির পটভূমি তৈরি করে।
আরও পড়ুন: কেন ছয় দফাকে মুক্তির সনদ বলা হয়? ম্যাগনা কার্টা ও ছয় দফার তুলনা
দ্বিতীয়ত, একুশ দফা ও ছয় দফা দাবি উভয়ই লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে চায়। একুশ দফায় কেন্দ্রের হাতে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও মুদ্রা – এ তিনটি বিষয় রেখে বাকি সব বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়।
কিন্তু ছয় দফায় প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া অন্যসব বিষয় প্রদেশগুলোর হাতে ন্যস্ত করার দাবি জানানো হয়। ছয় দফায় কেন্দ্রকে কর ধার্যের ক্ষমতা দেয়া হয় নি।
তৃতীয়ত, একুশ দফার তুলনায় ছয় দফায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বাস্তবায়নের অধিকতর কার্যকর উপায় সন্নিবেশ করা হয়। ছয় দফায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ হয়ে উঠে। ছয় দফাতেই প্রদেশগুলোতে কর ধার্য করা, বিদেশের সাথে পৃথক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা এবং নিজস্ব অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ক্ষমতা দেয়া হয়। কিন্তু একুশ দফায় প্রদেশগুলোকে এরূপ ক্ষমতা দেয়া হয় নি।
চতুর্থত, নির্বাচনী ইশতেহার হওয়ায় একুশ দফায় স্বায়ত্তশাসনের দাবিসহ ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষের দাবিদাওয়া উল্লিখিত ছিল। কিন্তু ছয় দফায় স্বায়ত্তশাসনের দাবিই প্রাধান্য লাভ করে।
পঞ্চমত, একুশ দফায় পূর্ব পাকিস্তানকে প্রতিরক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলা হলেও এতে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব করা হয় নি। কিন্তু ছয় দফায় এরূপ আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব করা হয়।