Home » বঙ্গভঙ্গ কি? বঙ্গভঙ্গের ঐতিহাসিক পটভূমি কি ছিল?

বঙ্গভঙ্গ কি? বঙ্গভঙ্গের ঐতিহাসিক পটভূমি কি ছিল?

by TRI

বঙ্গভঙ্গ কি?

বঙ্গভঙ্গ বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি অনন্য সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে ব্রিটিশ শাসকদের অনুসৃত ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতি জয়যুক্ত হয় এবং ভারতের বৃহত্তম দু’টি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমান চিন্তাচেতনার দিক থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে। লর্ড কার্জনের শাসনকালের বিভিন্ন সংস্কারের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল বঙ্গভঙ্গ বা বাংলা বিভাগ।

বঙ্গভঙ্গের ঐতিহাসিক পটভূমি

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলেও এর একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। বঙ্গভঙ্গের পূর্বে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সি’ তখন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ প্রদেশ ছিল। বাংলা, বিহার, ছোট নাগপুর ও উড়িষ্যা নিয়ে এ প্রদেশ গঠিত ছিল। এর শাসনভার ন্যস্ত ছিল একজন গভর্নর বা ছোটলাটের উপর।

১৮৬৬ সালে উড়িষ্যায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। এ দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেন যে, বিশালায়তন এ প্রদেশের প্রশাসনিক অসুবিধাই হচ্ছে এ দুর্ভিক্ষের অন্যতম প্রধান কারণ। 

আরও পড়ুন:  ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি ১৮৮৫

বাংলার ছোটলাট স্যার উইলিয়াম গ্রে ১৮৬৭ সালে এবং স্যার ক্যাম্পবেল ১৮৭২ সালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেন যে, বাংলার মত বিশালায়তন প্রদেশের শাসন পরিচালনা একজন গভর্নরের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শীঘ্রই সিলেট, কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলা একজন চীফ কমিশনারের শাসনাধীনে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তবুও প্রশাসনিক সমস্যার সুরাহা হয় নি। 

১৯০১ সালে মধ্য প্রদেশের চীফ কমিশনার এনড্রো ফ্রেজার ভারতীয় বিভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা বড়লাট লর্ড কার্জনের নিকট পেশ করেন। লর্ড কার্জন এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা অনুধাবন করেন।

১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বড়লাট লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ অঞ্চল পরিদর্শনে এসে ঢাকায় নবাব স্যার সলিমুল্লাহর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। স্যার সলিমুল্লাহ পূর্ববঙ্গ ও আসামের মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক প্রদেশ দাবি করেন। লর্ড কার্জন এনড্রো ফ্রেজারের পরিকল্পনা ও পূর্ববঙ্গ অঞ্চল সফরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেন যে, সুবৃহৎ বাংলা প্রদেশের প্রশাসনিক সমস্যা দূর করার জন্য বঙ্গভঙ্গ করে পূর্ববাংলা ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা উচিত। লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১০ জুলাই বঙ্গভঙ্গের এ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা অনুযায়ী তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ (দার্জিলিং, পার্বত্য ত্রিপুরা ও মালদহ জেলা বাদ দিয়ে) ও আসাম নিয়ে ‘পূর্ববাংলা ও আসাম’ প্রদেশ গঠিত হয়। 

১৯০৫ সালের ১৫ অক্টোবর সরকারিভাবে এ নবগঠিত প্রদেশের নাম ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থাপিত হয়। এ নবগঠিত প্রদেশের আয়তন ১,০৬,৫০৪ বর্গমাইল, লোকসংখ্যা ছিল তিন কোটি ১০ লক্ষ এবং এর দুই-তৃতীয়াংশ ছিল মুসলমান। নবগঠিত প্রদেশের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হন স্যার ব্যাম্পফিল্ড ফুলার। একটি ব্যবস্থাপক পরিষদ ও একটি রাজস্ব বোর্ডও গঠিত হয়। তবে নবগঠিত প্রদেশের বিচার বিভাগ কলিকাতা হাইকোর্টের অধীনে রাখা হয়। প্রাক্তন ‘বাংলা প্রেসিডেন্সির’ অবশিষ্টাংশ অর্থাৎ পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় ‘বাংলা প্রদেশ’ যা ‘পশ্চিম বাংলা’ নামেই সমধিক পরিচিত হয়ে উঠে। এ প্রদেশের রাজধানী হয় কলিকাতা এবং প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হন এনড্রো ফ্রেজার। এ প্রদেশের আয়তন ছিল ১,৪১,৫৮০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি চল্লিশ লক্ষ। এর মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল চার কোটি বিশ লক্ষ এবং মুসলমান জনসংখ্যা ছিল ৯০ লক্ষ।

 

Related Posts