Home » উন্নয়ন প্রশাসন কি? উন্নয়ন প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রবণতা সমূহ কি কি?

উন্নয়ন প্রশাসন কি? উন্নয়ন প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রবণতা সমূহ কি কি?

by TRI

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশসমূহে লোকপ্রশাসনের উপ-শাখা হিসেবে উন্নয়ন প্রশাসন নামে একটি নতুন ধারণা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাম্প্রতিক কালে উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনপ্রিয় ধারণা হিসেবে উন্নয়ন প্রশাসন ধারণাটি একটি নবতর সংযোজন।

উন্নয়ন প্রশাসন

উন্নয়ন প্রশাসন হল একটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতি ও কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো, সংগঠন ও সাংগঠনিক ব্যবহার।

অন্য কথায়, উন্নয়ন প্রশাসন হল পরিকল্পিত পরিবর্তনের প্রশাসন।

‘উন্নয়ন প্রশাসন’ শব্দটি প্রথম রচনা করেন ভারতীয় প্রশাসন পন্ডিত গোস্বামী ১৯৫৫ সালে। কিন্তু এই শব্দের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও পূর্ণাঙ্গ অর্থ প্রদান করেন আমেরিকান পন্ডিতগণ। এই ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক অবদান রেখেছেন ‘তুলনামূলক প্রশাসনিক গোষ্ঠী’। এই গোষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০-৬১ সালে USA লোকপ্রশাসন সমিতির উদ্যোগে গঠিত হয়।

উন্নয়ন প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রবণতাসমূহ

উন্নয়ন প্রশাসনে সাম্প্রতিক যে প্রবণতাসমূহ লক্ষ্য করা যায় নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল-

বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর উন্নয়ন

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের সীমিত সম্পদ দ্বারা এই বর্ধিত চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না; যার দরুণ প্রতিটি দেশকেই বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়। ক্রমান্বয়ে এই নির্ভরশীলতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক সাহায্যে নির্ভর উন্নয়ন – একটি খুবই বিতর্কিত ইস্যু হিসেবে বর্তমানে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য, মৌলিক চাহিদা পূরণ, সামগ্রিক উন্নয়ন প্রভৃতির জন্য বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন একথা অনস্বীকার্য। আবার এটাও সত্য যে, বিভিন্ন শর্তের বিপরীতে গৃহীত বৈদেশিক ঋণ একটা দেশের সংস্কৃতিতে বিকৃতি ঘটায়, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়, স্বাধীন চিন্তা-চেতনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং দরিদ্রতায় পতিত করে।

আরও পড়ুন:  সংগঠনের ভেতরে যোগাযোগ প্রবাহে সমস্যা এবং সমাধানের উপায়

মানব সম্পদ উন্নয়ন

যে কোন দেশের সার্বিক উন্নয়নে সে দেশের জনসাধারণ প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তাই মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যতীত একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অদক্ষ ও পুষ্টিহীন শ্রমিক কম উৎপাদনশীল হয় এবং নিরক্ষরতা উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে। যথাযথ শিক্ষা, কারিগরি জ্ঞান, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো প্রভৃতি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যহত হয়।

টেকসই উন্নয়ন

টেকসই উন্নয়ন বলতে পরিবেশের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে যে উন্নয়ন করা হয় তাকেই বুঝায়। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন, ভূ-মন্ডলীয় চাপ, ওজন স্তরের অবক্ষয় প্রভৃতির বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সংগতি রেখে যে মিল-কারখানাগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না। এতে করে সাময়িক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও টেকসই উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে।

মুক্তবাজার অর্থনীতি

দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই অবাধে ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালিত হলে তাকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলে। মুক্ত বাজার অর্থনীতি হলো এমন একটি নীতি যার মধ্যে শুল্ক, কোটা, বিনিময়, নিয়ন্ত্রণ, কর ও ভর্তুকির ন্যায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণসমূহ স্থান পায় না। এর সুবিধা যেমন লক্ষণীয়, তেমনি অসুবিধাও বেশ উল্লেখযোগ্য।

লিঙ্গ সমতা

লিঙ্গ সমতা হল সমাজের সকল স্তরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমানভাবে কাজ করবে। এটি বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এর দ্বারা একটি দেশের সার্বিক উন্নয় গতি পায়।

এনজিও কর্মকান্ড

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত বিষয়ের মধ্যে এনজিও কর্মকান্ড অন্যতম। গত দুই দশক ধরে এনজিওগুলো তাদের কার্যাবলি যেসব বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত করেছে সেগুলো হলো- দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী অধিকার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি। সরকারের কার্যাবলির পরেই এনজিওদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এরকম এনজিও হলো ব্র্যাক, প্রশিকা, কেয়ার, আশা ইত্যাদি।

বেসরকারিকরণ

কোন রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে ও সরকারি মালিকানায় পরিচালিত শিল্প কারখানা থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানায় হস্তান্তর করাকে বেসরকারিকরণ বলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, ব্যাংক-বীমা, যে হারে বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে দ্বিমত লক্ষ্যণীয়।

 

Related Posts