সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগুলো সম্পর্কের ক্ষেত্র বিশেষে ব্যক্তির সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। এই সম্পর্ক ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রেই সমানুভূতি প্রকাশ পায়।
সমানুভূতি
সমানুভূতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Empathy’ যার অর্থ হলো ‘to feel with’ বা একই অনুভূতি অনুভূত হওয়া।
সুতরাং আমরা সাধারণত বলতে পারি যে, সমানুভূতি হলো এমন এক প্রকার সামর্থ, যার মাধ্যমে অন্যের দৃষ্টিতে দেখা পৃথিবীকে আমরা নিজেদের মাধ্যমে অন্যের দৃষ্টিকোণ অনুভব করি।
সমানুভূতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে Daniel Goleman বলেন, ‘Empathy is awareness of others feelings, needs and concerns.’
সমানুভূতি বাচনিক ও অবাচনিক উভয়ই হতে পারে। এটি অর্জন করা বেশ কঠিন। এর জন্য বিভিন্ন প্রকারের সামর্থ অর্জন করা প্রয়োজন হয়। এর জন্য নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যক্তিকে অবশ্যই পুরনো অভিজ্ঞতা বা আবেগ কীভাবে নির্দিষ্ট আচরণকে প্রভাবিত করেছিল তা পুনরায় নিজের মাঝে আনয়নে সক্ষম হতে হবে। ব্যক্তিকে অবশ্যই সূক্ষ উপলব্ধীকারক হতে হবে ঐসব বিষয়ে যা অন্যের কাছ থেকে সে প্রাপ্ত হয়েছে। অর্থাৎ সমানুভূতির বিষয়টির ব্যাপারে সে অবশ্যয়েই সংবেদনশীল হবে।
আরও পড়ুন: আগ্রহের ত্রিবলয় – ফিচার লেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হয়
বাচনিক দক্ষতা
অন্যের জন্য ব্যক্তির সমানুভূতি প্রকাশের সামর্থ বিভিন্ন বাচনিক দক্ষতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে। বাচনিক দক্ষতার মাধ্যমে অন্যের মধ্য হতে তথ্য ও অনুভূতি বের করে আনতে সাহায্য করে। যার মাধ্যমে ব্যক্তির মনোভাব বুঝা যায়। বাচনিক দক্ষতা হলো আবেগের কথ্য রূপ। নিম্নে বাচনিক দক্ষতাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১) অতিরিক্ত বিবৃতি আহ্বান
এই স্তরে ব্যক্তি অন্যকে তার বক্তব্য আরো প্রাণান্ত করতে আহ্বান করে। অনুভূতিকে আরো বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করতে বা আত্ম উন্মোচনকে উৎসাহিত করতে ব্যক্তি বিছু প্রশ্ন করে থাকে বা প্রবাদ ব্যবহার করে। যেমন-
কথোপকথন চলার ফাঁকে প্রশ্নকর্তা কৌতুহল প্রকাশ করার জন্য বলতে পারেন- “তারপর?”
অথবা বলতে পারেন, “আমাকে আরো জানাও।”
ব্যক্তি এমনও প্রশ্ন করতে পারেন যে, “তুমি ব্যাপারটা নিয়ে এখন কী ভাবছো?”
২) সাধারণ অভিজ্ঞতা
এই স্তরে শ্রোতা ও বক্তা উভয়ের অভিজ্ঞতা এক হয়ে দাঁড়ায়। তখন শ্রোতা সমানুভূতি প্রকাশের স্বার্থে অতীতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবে এবং কীভাবে বিষয়টি থেকে শ্রোতা পরিত্রাণ পেয়েছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করবে।
৩) স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রদান
এই ক্ষেত্রে লম্বা ও জটিল বাক্য বিনিময় এড়িয়ে যেতে হবে। ভাসা ভাসা ভাবে কোন বক্তব্য প্রদান না করা। ব্যক্তি এমন বক্তব্য প্রদান করবে না যার মাধ্যমে দ্ব্যর্থবোধক বা নির্দিষ্ট কিছু বুঝায় না। যদি এ ধরণের কোন বক্তব্য প্রদান করে, তাহলে তাতে সমানুভূতি প্রকাশ পায় না। যেমন-
ব্যক্তি বলল, “কিছুই সহজভাবে আসে না।”
এর দ্বারা স্পষ্ট কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তাই এমন উত্তর দিতে হবে যা বিষয়টিকে আলোকিত করে।
৪) বিস্তারিত বিবৃতি প্রদান
ব্যক্তি যখন মানুষের “কী করা উচিত” তা বলার চেষ্টা করে, তখন ব্যক্তি নিজেকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে গিয়ে ও নিজের সামর্থকে কমিয়ে এনে মানুষের দৃষ্টিকোণ পর্যবেক্ষণ করে।
এই ক্ষেত্রে উপদেশ প্রদান করা পরিহার করতে হবে। কোন ধরণের বিচারিক বিবৃতি প্রদান করা যাবে না। নাহলে সমানুভূতি প্রকাশ ঘটবে না।
৫) ইতিবাচক বিবৃতি
ব্যক্তি সমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হবে। এবং ইতিবাচক কথোপকথন করবে। এই ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান বা ইতিবাচক মন্তব্যের ব্যবহার করা যায়। ইতিবাচক ফলাবর্তন সমানুভূতির মাত্রাকে বৃদ্ধি করে। যেমন- “আমি জানি, তুমি তা পারবে।”
৬) উপলব্ধি প্রদান করা
ব্যক্তি সুস্পষ্ট বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে নিজের উপলব্ধি উপস্থাপন করতে পারে। যেমন-
“আমি বুঝি, তুমি কী অনুভব করছো!”
যখন অন্যান্য মানুষের অনুভূতি আমরা এড়িয়ে যাই, তখন বুঝতে হবে আমাদের মাঝে সমানুভূতি প্রকাশের অভাব আছে।
অবাচনিক দক্ষতা
সমানুভূতি অবাচনিক দক্ষতার সাহায্যেও প্রকাশ করা যায়। নিম্নে অবাচনিক দক্ষতাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১) শারীরিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন
অঙ্গভঙ্গি এবং শারীরিক নড়াচড়া প্রদর্শনের মাধ্যমে বক্তাকে এই বার্তা প্রদান করা যে, ব্যক্তি তার কথা শুনছে। শুধু শুনছে না, সে শারীরিক ভঙ্গির মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছে।
আরও পড়ুন: ফিচার লেখার পিরামিড কাঠামো
২) Lean forward
একজন বক্তার প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ ও কৌতুহল কিংবা বক্তার বার্তার প্রতি কৌতুহল তখনই প্রকাশ পাবে যখন ব্যক্তি Lean forward করবে। অন্যথায় অসমানুভূতি প্রকাশ পাবে।
৩) শারীরিক নড়াচড়া প্রদর্শন
সরাসরি শারীরিক অঙ্গ নড়নের মাধ্যমে ব্যক্তি তার পূর্ণ মনোযোগ প্রকাশ করতে পারে। তাছাড়া এই অঙ্গভঙ্গি বক্তার আশপাশের অন্যান্যদের চেয়ে বক্তার উপর বেশি ফোকাস করে।
৪) ইতিবাচক মুখভঙ্গিমা প্রকাশ
সমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে মুখভঙ্গিমা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ‘হাসি’ দিয়ে বক্তার বক্তব্যকে সমর্থন করতে পারি। এই ক্ষেত্রে শ্রোতাকে কটাক্ষ করে তাকানো, অমনোযোগিতা, রাগান্বিত হওয়া বা কুঁচকানো সব এড়িয়ে চলতে হবে।
৫) বক্তার পাশে বসা বা দাঁড়ানো
ব্যক্তি নিজের সমানুভূতিকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যেতে পারে অবাচনিক দক্ষতার মাধ্যমে। তন্মধ্যে একটি হলো বক্তার পাশে বসা বা অবস্থান করা। এত বক্তা বুছতে পারে যে, ব্যক্তি তার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। যার কারণে বক্তা আরো বলতে উৎসাহ পায়।
৬) স্পর্শে থাকা
বক্তার বক্তব্য প্রকাশের সময় তার সংস্পর্শে থাকলে বক্তা ব্যক্তিকে আরো নির্ভরযোগ্য মনে করে। একটা বন্ধুত্বের বাড়ানো হাতের স্পর্শ বক্তাকে সান্ত্বনা পেতে সাহায্য করে। যার দরুণ, বক্তা পাশের বন্ধুটির জন্য বিস্তারিত বলার প্রয়াস পায়।
৭) গলার স্বর ব্যবহার করা
এই ক্ষেত্রে মৌনতা একঘেঁয়ে হয়ে উঠতে পারে। বক্তা মনে করতে পারে ব্যক্তি তার কথায় বিরক্তবোধ করছে। তাই মাঝে মাঝে গলার স্বর ব্যবহার করে বক্তাকে নিশ্চিন্ত করতে হবে এবং বুঝাতে হবে যে, ‘আরো কিছু থাকলে বলো’।
৮) সরাসরি দৃষ্টি ব্যবহার
অবাচনিক দক্ষতার সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হলো চোখ। দৃষ্টি অনেক কথা বলে। বক্তার বক্তব্যের সময় দৃষ্টিকে বক্তার দিকে উপস্থাপন করলে বক্তা বুঝতে পারে ব্যক্তি তার প্রতি মনোযোগী।