একটি সার্থক ফিচার লেখার ক্ষেত্রে ’ষড়মাত্রিক নীতি’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইচ. এম. প্যাটারসন তাঁর “Writing and Selling Feature Articles” গ্রন্থে ‘ষড়মাত্রিক নীতি’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এটি কোন structure নয়। তবুও structure হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
নিম্নে ষড়মাত্রিক নীতি সমূহ আলোচনা করা হলো-
১) দৃষ্টি আকর্ষণ (Catch the Eye)
একটি ফিচারের প্রথম দিকে ব্যবহৃত শব্দাবলী কিংবা বাক্য পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এমন একটি শিরোনাম হবে যা দেখেই পাঠক থমকে যাবেন। পাঠকের দৃষ্টিতে একটি দৃশ্য কল্পনায় চলে আসতে হবে। এমন হতে হবে যেন কোন পথচারীর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিলে পথচারীর পার্শ্ববর্তী লোক ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুনোর দৃশ্য দেখে যেভাবে আঁতকে ওঠে, ঠিক সেভাবে আঁতকে ওঠে।
আরও পড়ুন: ফিচারের উদ্দেশ্য কী? একটি সুন্দর ফিচার কীভাবে লিখবেন?
এই ক্ষেত্রে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করা হবে। সেই সাথে পাঠককে প্রলুব্ধ করে তুলতে হবে।
ফিচারের শিরোনামটি হবে তীরের মত। কারো চোখে গিয়ে পড়লে তার আর নিস্তার নেই। পাঠক অবশ্যই বাধ্য হবেন ফিচারটি পড়তে।
২) মনোযোগ ধরে রাখা (Hold the Attention)
প্যাটারসনের ষড়মাত্রিক নীতির দ্বিতীয় নীতিটি হলো মনোযোগ ধরে রাখা। ফিচারের সূচনা পড়তে পড়তেই পাঠক হারিয়ে যাবেন অজানা এক অনুভূতিতে। যত পড়বেন ততই ভালো লাগবে। আর চোখের সামনে ভাসবে পঠিত তথ্যগুলোর বাস্তব দৃশ্য। পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে এই স্তরে নতুন তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। এমন সব তথ্যাদি উপস্থাপন করতে হবে যা পাঠকের জানা নেই।
এছাড়াও ফিচারের সবচেয়ে উৎকৃষ্টগুণ হলো তুলনা করা। তুলনার মাধ্যমে একটি বাস্তবতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরা যায়। যেমন-
“পেঁজা তুলোর মেঘ জমে আছে গাছের ডালে। হাত বাড়ালেই নরম বরফ। এ হলো সাজেক ভ্যালী।”
৩) আগ্রহ জাগানো (Arouse Interest)
ফিচারের লিড পড়তে পড়তেই পাঠক ফিচারের বিষয় সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। এই ধারণাটি পেয়েই যেন পাঠকের তৃপ্তি না মিটে, ফিচার লেখককে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে হবে যেন-
“শেষ হয়েও হলো না শেষ।”
সূচনার ক্ষেত্রে এমন তথ্য উপস্থাপন করতে হবে যা পাঠকের আগ্রহকে আরো বৃদ্ধি করে থাকে। পাঠকের অবস্থা ঐ অ্যাম্বুলেন্স সন্ধানী ব্যক্তির মত হবে যার পার্শ্ববর্তী লোক ছুরিকাঘাতে আহত। হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েই তার আগ্রহ শেষ হবে না। বরং ব্যক্তি জানতে চাইবে ‘কী কারণে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল!’
এই ক্ষেত্রে পাঠকের সামনে এমন তথ্য উপস্থাপন করতে হবে, যা পাঠকের মনে আরো প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়। পাঠক আরো জানতে চাইবে। পাঠকের কৌতুহল শতগুণে বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: ফিচার কি? সংবাদ ও ফিচারের মধ্যে পার্থক্য কি কি?
৪) আস্থা প্রদান (Gave Confidence)
স্বাভাবিকভাবেই ফিচারে কল্পনা ও সাদৃশ্য ব্যবহৃত হয়। তবে এই কল্পনা ও সাদৃশ্যের মাফে একটি মাত্রা রাখতে হবে। এই কল্পনা যেন “আলাদীনের চেরাগ” কিংবা “হ্যারি পটার” গল্পের মত না হয়ে যায়। কেননা এতে পাঠক বিনোদন পেলেও ফিচারটি মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।
একটি ফিচার পাঠের পর পাঠকের অবশ্যই ঐ স্থান দর্শনের প্রতি একটি টান কাজ করবে। কল্পনা ও সাদৃশ্যই পারে একমাত্র ঐ টান সৃষ্টি করতে। যদি অতি কল্পনা ও সাদৃশ্য কমানো প্রয়োজন হয়, তবে যথাসময়ে কিংবা ফিচারের জায়গায় জায়গায় তথ্য উপাত্ত সমানভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এতে পাঠক সাদৃশ্য ও কল্পনার উপর আস্থা খুঁজে পায়।
৫) পাঠককে বশ করা (Convince the Reader)
প্রতিটি ফিচার লিখনের পিছনে লেখকের এক সাধারণ উদ্দেশ্য থাকে। আর তা হলো পাঠককে বিষয়ের প্রতি দুর্বল করে দেয়া। ফিচারে উপস্থাপিত তথ্য ও সাদৃশ্যের মাধ্যমে পাঠককে বশ করা। পাঠকের মননকে এভাবে ধরে রাখা যাতে এই ফিচার পড়ার সময় পাঠক অন্য কিছু ভাবতে না পারে। অর্থাৎ পাঠকের ভাবনার জগৎকে কব্জা করা।
উল্লেখিত তথ্য, নির্দেশনা ও বিনোদন প্রদান করার পাশাপশি পাঠককে উক্ত বিষয়গুলো পালনে কিংবা স্থান ভ্রমণে বাধ্য করা। এর মাধ্যমেই একজন ফিচার লেখক ফিচার লক্ষ্য অর্জন করলো কিনা তা বিচার করা যায়। যেমন-
“ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়।”
এই শিরোনামের ফিচার পড়ে পাঠককে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী কর্ম সম্পাদনে বাধ্য করা।
৬) খসড়া পরীক্ষা করা (Test the Outline)
ষড়মাত্রিক নীতির সর্বশেষ নীতি হলো খসড়া পরীক্ষা করা। এই ক্ষেত্রে লিখনি শক্তির মান যাচাই করা হয়।
ফিচার লেখক একটি ফিচার লেখার পর কয়েকটি বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ করেন। তা হলো-
ক) সম্পূর্ণ লেখাটি নিরীক্ষণ করা।
খ) ফিচারের উদ্দেশ্য ফুটিয়ে তোলা।
গ) তথ্য-উপাত্ত সঠিক কিনা যাচাই করা।
ঘ) পাঠককে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট কিনা বিচার করা।
ঙ) বানান শুদ্দ আছে কিনা যাচাই করা।
চ) নির্ভোজাল আনন্দের মাত্রা সঠিক আছে কিনা যাচাই করা। এবং
ছ) সর্বোপরি বিনোদন দেয়া।