রপ্তানিমুখী শিল্প
সম্পূর্ণরূপে বিদেশের বাজারে রপ্তানির উদ্দেশ্যে দেশে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে শিল্পায়নকে রপ্তানিমুখী শিল্প বলে। যে সকল দেশের আমদানি ব্যয় অপেক্ষা রপ্তানি আয় অধিক অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত থাকে, সে সকল দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত-এর উপর প্রতিষ্ঠিত।
একটি দেশ যদি ক্রমাগত দীর্ঘকালব্যাপী বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ভোগ করে, তখন সে দেশকে দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশ না বলে, উন্নত দেশ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় অপেক্ষা আমদানি ব্যয় অধিক এবং ক্রমাগতভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঘাটতি বিদ্যমান। এর কারণ হলো বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান এবং সস্তা শ্রমনির্ভর শিল্প উৎপাদনে জড়িত। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পের প্রাথমিক উপকরণ তথা কাঁচামাল (চামড়া, পাট) ইত্যাদি রপ্তানি করে। এসব পণ্যের দাম কম থাকে বিধায় আমাদের রপ্তানি আয় স্বল্প।
বাংলাদেশের কুটির শিল্পের সমস্যা ও সমাধান |
রপ্তানিমুখী শিল্পের গুরুত্ব
ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি উপনিবেশ হতে শুরু করে বর্তমানেও ধনী দেশসমূহ বাংলাদেশের মতো দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশ হতে স্বল্পমূল্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তা দ্বারা নিজেরা উন্নতমানের শিল্প পণ্য উৎপাদন করে বেশি দামে আবার উন্নয়নশীল দেশে বিক্রয় করে। এর ফলে দরিদ্র দেশগুলোর রপ্তানি আয় স্বল্প কিন্তু আমদানি ব্যয় অধিক হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো আমদানি ব্যয় অপেক্ষা রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের গুরুত্ব নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
১. উৎপাদনে বিশেষায়ন
যে দেশ যে পণ্য উৎপাদনে অন্যান্য দেশ অপেক্ষা তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা (উৎপাদন খরচ কম) ভোগ করবে সে দেশ সে পণ্য উৎপাদনে বিশেষায়িত হবে। যেমন বাংলাদেশে তৈরী পোশাক ও হোসিয়ারি শিল্পে সস্তা শ্রমিক ব্যবহার হওয়ার কারণে এই পণ্য রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে।
২. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
দেশের চাহিদার অতিরিক্ত রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের ফলে শ্রমের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে শ্রমনিবিড় রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করা হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
৩. দেশীয় শিল্পের প্রসার
রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটে, দেশ শিল্পনির্ভর হয়।
৪. সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার
রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রসার ঘটলে একই সাথে দেশীয় শিল্পজাত পণ্যদ্রব্যের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। এরূপ পরিবেশে বিদ্যমান অব্যবহৃত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
৫. দক্ষতা বৃদ্ধি
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য এরূপ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে শিল্পপণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।
৬. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রসারের ফলে আমদানি হ্রাস পায়, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি একটি নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন।
৭. কৃষকবান্ধব কৌশল
দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সন্তায় বিদেশে কাঁচামাল হিসেবে বিক্রি না করে দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি পায়।
৮. কৃষি আধুনিকায়ন
দেশে শিল্পায়নের ফলে কাঁচামাল হিসেবে কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ তথ্য আধুনিকায়ন ঘটে। এর ফলে শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে কৃষি উন্নয়নও সাধিত হয়।
৯. মুলধনী দ্রব্য আমদানি
রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের ফলে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলে তা দ্বারা ধীরে ধীরে মূলধনী দ্রব্য আমদানি করে দেশে শিল্পায়নের গতি আরও প্রসারিত এবং মজবুত করা যায়।
১০. বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ
রপ্তানিমুখী শিল্পে দেশ সমৃদ্ধ হলে নিট রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সহজ হয়।
১১. মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
রপ্তানিমুখী শিল্পে সমৃদ্ধ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেশি হয়, তারা প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য ভোগ জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়। করতে পারে, প্রয়োজনে বিদেশ হতে আমদানিও করতে পারে। এর ফলে জনগণের
১২. দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি
রপ্তানিমুখী শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ এবং উক্ত দেশের জনগণের মর্যাদা অপরাপর দেশসমূহের নিকট বৃদ্ধি পায়। যেমন-জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশের সুনাম ও মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।