ভারতবর্ষের ইতিহাসে মৌর্য যুগ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মৌর্যযুগে প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থা গৌরবময় যুগের সূচনা করে। মৌর্য আমলে মৌর্য সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম বিশ্বধর্মে রূপায়িত হয় এবং বৌদ্ধধর্মের মাধ্যমেই প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি বহির্বিশ্বে প্রচার লাভ করে। মৌর্যবংশের প্রথম সম্রাট ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। দীর্ঘ ২৪ বছর রাজ্য শাসন করে তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র বিন্দুসারও পিতার ন্যায় কৃতিত্বের সাথে রাজ্য শাসন করেন। সম্রাট অশোক ছিলেন বিন্দুসারের পুত্র। ভারতবর্ষের ইতিহাসে সম্রাট অশোক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট হিসেবে পরিচিত। বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসারে সম্রাট অশোক যে অবদান রেখেছিলেন তা চিরস্মরণীয়।
অশোকের পরিচয়
মৌর্য সাম্রাজ্যের একজন সফলতম শাসক হলেন সম্রাট অশোক । তিনি ভারতের মৌর্য রাজবংশের তৃতীয় সম্রাট। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩০৪ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিন্দুসার এবং মাতার নাম ছিল ধর্মা বা শুভ্রাদাঙ্গি। বৌদ্ধ কিংবদন্তি অনুসারে বিন্দুসারের ষোড়শ মহিষী ও একশত পুত্র ছিল। বৌদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় অশোকাবদানে বলা হয়েছে, অশোকের মাতা অশোকের জন্মের পর মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি শোকহীনা, তাই তাঁর নাম অশোক হয়েছে। অশোকের তিস্স ব্যতীত বীতশোক নামে অপর এক সহোদর ভাইয়ের নাম পাওয়া যায়। জানা যায়, অশোক পিতার মৃত্যুর পর একমাত্র তিস্স ব্যতীত তাঁর শত ভ্রাতাকে হত্যা করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ কারণে অশোক প্রথমে “চণ্ডাসোক” নামে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরক্ত ও আকৃষ্ট হলে অত্যন্ত জনহিতকর ও কল্যাণমূলক কাজকর্মের দ্বারা তিনি ”ধম্মাসোক” (ধর্মাশোক) নামে পরিচিতি পান। তাছাড়া তিনি ভারত ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে ঐতিহাসিকগণ অশোককে “নৃপতিগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ” বলে উল্লেখ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: রূপ বলতে কি বুঝ? বৌদ্ধ দর্শনের আলোকে রূপের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর
অশোকের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ
কিংবদন্তী অনুসারে অশোক প্রথম জীবনে হিন্দুরাজাদের ন্যায় প্রচলিত দেবপূজার অনুরাগী ছিলেন এবংব্রাক্ষ্মণ্য ধর্মেরও ভক্ত ছিলেন। অপরদিকে তিনি আজীবিক সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। চীনা পরিব্রাজক ইৎসিং এর ভ্রমণবৃত্তান্তে বলা হয়েছে যে ভগবান বুদ্ধ অশোকের বিশাল সাম্রাজ্য ও তাঁর ধর্মপ্রচারের সম্পর্কে পূর্বেই ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন। অশোকের রাজ্য অভিষেকের নয় বৎসর অতিবাহিত হলে তিনি কলিঙ্গরাজ্য আক্রমণ করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে জয়লাভ করলে তাঁর জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে। যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতাই ছিল উক্ত পরিবর্তনের মূল কারণ। কিংবদন্তী অনুসারে, অশোক তাঁর ভাগিনেয় “নিগ্রোধ শ্রামণের” কর্তৃক “অপ্পমাদ বগ্গ” দেশিত হলে তা শুনে অতিশষ সন্তুষ্ট হয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তিনি বৌদ্ধধর্মের একনিষ্ঠ সেবক হয়ে পড়েন। অশোক তাঁর রাজত্বের অষ্টম বছরে বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্তের নিকট দীক্ষা গ্রহন করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।