Home » দারিদ্র্য কাকে বলে? দারিদ্র্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
দারিদ্র্য কাকে বলে, দারিদ্র্য কী, দারিদ্র্য, দারিদ্র্যের প্রকারভেদ,

দারিদ্র্য কাকে বলে? দারিদ্র্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

by TRI

দারিদ্র্য কী?

যে সকল মানুষ তার মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় তাকে দারিদ্র্য বলে। অন্যভাবে বলা যায়, দারিদ্র্য বলতে মানুষের জীবন ধারণ প্রক্রিয়ার এমন একটা অবস্থাকে নির্দেশ করা হয় যেখানে মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের ন্যূনতম মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। সামগ্রিক আর্দ্র, নিরক্ষরতা, ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর কষ্টকর সংগ্রামের চিত্রই হলো দারিদ্র্য।

আরও পড়ুন:   কৃষি ঋণ কি? বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎসগুলো কি কি?

দারিদ্র্যের সংজ্ঞা

বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে, দারিদ্র্য বলতে জীবনযাত্রার ন্যূনতম মানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিকানা ও ব্যবহারের অধিকার হতে বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক অবস্থ বুঝায়।”

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. এ. কে. সেন-এর মতে, “শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সেবা ব্যয় যারা মিটাতে পারে না তারাই দরিদ্র। “

সুতরাং পরিশেষে সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, দারিদ্র্য হলো সমাজের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার এমন একটি রূপ, পর্যায় বা স্তর যেখানে কোন ব্যক্তি বা পরিবার তার ন্যূনতম শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রয়োজনসমূহ পূরণে ব্যর্থ হয় এবং এই অবস্থাটি তার শারীরিক ও মানসিক কর্মদক্ষতা অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

দারিদ্র্যের বৈশিষ্ট্য

মানুষ তার আয়-উপার্জন দ্বারা মৌলিক অভাব পূরণ করতে না পারার অবস্থাকে দারিদ্র্য বলে। দারিদ্র্যের যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিলক্ষিত হয় তা হলো নিম্নরূপ :

১। দারিদ্র্য সমাজের মানুষের জীবনযাত্রার নিম্নমানের এক স্তরকে নির্দেশ করে।

২। দারিদ্র্যের ধারণাটি আপেক্ষিক এবং সমাজ ও রাষ্ট্র ভেদে দারিদ্র্যের মাত্রা ও ধারণাগত তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।

৩। এটি হলো জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের অক্ষমতা।

৪। দারিদ্রাবস্থায় জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য দ্রব্য ও সেবাসমূহের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

৫। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প আয় এবং আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন ব্যয়- এ দু’য়ের মাঝে দারিদ্র্যের বিষয়টি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত

৬। এটি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক কার্যদক্ষতা অর্জন ও বজায় রাখার পথে অন্তরায়।

৭। এটি ব্যক্তির যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালনকে ব্যাহত করে।

৮। এটি কেবলমাত্র নিজেই এক সমস্যা নয়, একটি আবার অন্যান্য অনেক সমস্যার উৎস এবং প্রভাবও বটে।

দারিদ্র্যের প্রকারভেদ

দারিদ্র্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : (১) অনপেক্ষ দারিদ্র্য (Absolute poverty), এবং (২) আপেক্ষিক দারিদ্র্য Relative poverty)।

অনপেক্ষ দারিদ্র্য (Absolute poverty)

অনপেক্ষ দারিদ্র্য’ বলতে মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের অক্ষমতাকে বুঝায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা-এগুলো একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একান্ত আবশ্যক। এই মৌল চাহিদাগুলো পূরণের অক্ষমতা বা অপারগতাই হলো মানুষের ‘অনপেক্ষ দারিদ্র্য’। অনপেক্ষ দারিদ্র্যকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা : (ক) দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং (খ) চরম দারিদ্র্য।

(ক) দারিদ্র্যসীমার নিচে (Below poverty line ) : দৈনিক মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের ভিত্তিতে দারিদ্র্যের প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়। একজন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নৈদিক কমপক্ষে ২১২২ কিলো ক্যালরির প্রয়োজন হয়। যে সমস্ত মানুষ দৈনিক ২১২২ কিলো ক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করে তাদেরকে ‘দারিদ্র্যসীমার নিচে’ বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০.৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তন্মধ্যে পল্লী জনগোষ্ঠীর ৩৯.৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৪৩.২ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

(খ) চরম দারিদ্র্য (Extreme poverty) : ‘চরম দারিদ্র্য’ বলতে একজন মানুষের পক্ষে কোনরকম বেঁচে থাকার জন্য যে ন্যূনতম অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার প্রয়োজন হয় তা প্রাপ্তির অক্ষমতাকে বুঝায়। দৈনিক মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের ভিত্তিতে বলা যায়, যারা দৈনিক মাথাপিছু ১৮০৫ কিলো ক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করে তারাই হলো চরম দারিদ্র্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১৯.৫ শতাংশ লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। পল্লী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১৭.৯ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ২৪.৪ শতাংশ মানুষ ‘চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।

আপেক্ষিক দারিদ্র্য (Relative poverty)

আপেক্ষিক দারিদ্র্য’ বলতে কোন সমাজে আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের কারণে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করাকেই বুঝায়। এটি সমাজে এক ব্যক্তির সাথে অন্য ৰাক্তির আয় ও ভোগের পরিমাণে তুলনামূলক পার্থক্যকেই বুঝায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে উন্নত দেশে অনপেক্ষ দারিদ্র্য না থাকলেও আয় ও সম্পদের অসম বন্টনের কারণে ‘আপেক্ষিক দারিদ্র্য’ বিরাজ করে।

Related Posts