একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কিছু পূর্বশর্ত থাকে। যেগুলো পূরণ করতে পারলে একটি দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কিছু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে এই পূর্বশর্ত গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত
অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে, সেগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। উন্নয়নের এই পূর্বশর্তগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
(ক) অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত/উপাদানসমূহ
(খ) অ-অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত উপাদানসমূহ
নিচে অর্থনৈতিক পূর্বশর্তগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
(ক) অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত
অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতিপয় বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এগুলোকে উন্নয়নের অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত বলে। নিচে এই পূর্বশর্তগুলো আলোচনা করা হলো :
১। প্রাকৃতিক সম্পদ :
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উর্বর জমি ও পরিমিত বৃষ্টিপাত অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়ক। আবার কয়লা, লৌহ, খনিজ তৈল, গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদ থাকলে দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয় । সুতরাং, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
২। দক্ষ জনশক্তি :
প্রাকৃতিক সম্পদের উত্তোলন ও ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। শ্রমশক্তি সুদক্ষ হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিপুণভাবে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সম্ভব হবে।
৩। দক্ষ উদ্যোক্তা :
প্রতিভাবান উদ্যোক্তা শ্রেণি উৎপাদনের নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারে। এর ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ।
৪। মূলধন গঠন :
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন। যানবাহন, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ পরিকল্পনা প্রভৃতির জন্য পর্যাপ্ত মূলধন দরকার।
৫। অর্থনৈতিক কাঠামো :
দেশে উন্নয়ন উপযোগী অর্থনৈতিক কাঠামোর অস্তিত্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য একান্ত অপরিহার্য । অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে ।
৬। শিক্ষা সম্প্রসারণ :
শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার করতে হলে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার একান্ত অপরিহার্য। এর ফলে দেশের উন্নয়নে মানুষের মনমানসিকতা অনুকূলে থাকবে।
৭। কারিগরি জ্ঞান/প্রযুক্তিগত জ্ঞান :
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের জন্য অবশ্যই কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন।
৮। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ :
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত । কারণ জাতীয় আয়ের অধিকাংশ অর্থ যদি জনগণের ভরণপোষণে চলে যায় তাহলে মূলধন গঠন হবে কীভাবে, সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে জনসংখ্যার অবাঞ্চিত বৃদ্ধি অবশ্যই রোধ করতে হবে।
৯। প্রতিযোগিতামূলক বাজার :
প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অস্তিত্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের পথ সুগম হয়। এতে দেশের কর্ম নিয়োগ স্তর ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ।
১০। বিশেষায়ন :
শ্রম বিভাগের বিশেষায়নের মাধ্যমে শ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষায়ন ও বৃহদায়তন উৎপাদনে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়।
১১। কাঠামোগত পরিবর্তন :
উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রধানত কৃষি, মৎস্য, পশুপালন ইত্যাদির উপর নিয়োজিত থাকে। ক্রমান্বয়ে শিল্প ও পরিবহন খাতের প্রসার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে ।
১২। বিনিয়োগ :
বিনিয়োগের প্রবাহ অব্যাহত থাকলেই দেশে অর্থনৈতিক চাকা চলমান থাকে। বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদকে উৎপাদন ক্ষেত্রে লাগানো যায়। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হয়।
১৩। আর্থিক প্রতিষ্ঠান :
দক্ষ, সংগঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহায়ক শক্তি। ব্যাংক মূলধন প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদকে উৎপাদন ক্ষেত্রে লাগানো যায় । এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হয় ।
১৪। বৈদেশিক বাণিজ্য : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনুকূল বাণিজ্য (আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক কি কি?
অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পার্থক্য
মাথাপিছু আয় কি? মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উপায়সমূহ