Home » মাথাপিছু আয় কি? মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উপায়সমূহ
মাথাপিছু আয় কি

মাথাপিছু আয় কি? মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উপায়সমূহ

by TRI

মাথাপিছু আয়

সাধারণত মাথাপিছু আয় বলতে জনপ্রতি বার্ষিক আয়কে বুঝায়। কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট জাতীয় আয়কে ঐ বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে দেশের মোট জাতীয় আয়কে উক্ত দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায় । অন্যভাবে বলা যায় যে, মাথাপিছু আয় বলতে কোনো দেশের জনসাধারণের গড় বার্ষিক আয়কে বুঝায় । অর্থাৎ মাথাপিছু আয় হচ্ছে একটি দেশের জনগণের গড় বার্ষিক আয়। মাথাপিছু আয়কে নিম্নোক্তভাবে সূত্রাকারে প্রকাশ করা যায় :

মাথাপিছু আয় = মোট জাতীয় আয় ÷ মোট জনসংখ্যা

পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো দেশের মাথাপিছু আয় হচ্ছে সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান নির্ধারক। সাধারণভাবে বলা যায়, যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি সে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান তত উন্নত। কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির হার ও জীবনযাত্রার মান অনুধাবনের জন্য মাথাপিছু আয়ের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উপায়সমূহ

of Bangladesh বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে :

১। শিক্ষা বিস্তার

দেশে অধিক সংখ্যক স্কুল ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে কারিগরি ও প্রকৌশলী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছেন । বাংলাদেশে একটি গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি করতে হবে।

২। কৃষি উন্নয়ন

আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কাজেই জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হলে কৃষি হতে আয় বৃদ্ধি করতে হবে। যান্ত্রিক চাষ পদ্ধতি প্রবর্তন, উত্তম বীজ ও সার প্রয়োগ, পানি সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।

৩। দ্রুত শিল্পায়ন

বাংলাদেশের জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হলে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে দেশকে দ্রুত শিল্পায়িত করতে হবে। কেবল কৃষির উপর নির্ভর করেই দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। কৃষির সাথে সাথে দেশকে শিল্পায়িত করে তুলতে হবে।

৪। শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি

বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ।

৫। মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি

আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় একত্রীকরণের মাধ্যমে মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করতে হবে। মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি পেলে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

৬। জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন

বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। ফলে অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবন যাপন করে। দেশের সম্পদ যাতে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত না থাকে; বরং তা সকলের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টিত হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭। মুদ্রাস্ফীতি রোধ

বর্তমানে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বিদ্যমান। একটি সুষ্ঠু রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি প্রয়োগের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির হার রোধ করতে হবে এবং দ্রব্য মূল্যের স্থিতিশীলতা অর্জন করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাস করতে পারলে মাথাপিছু প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

৮। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ

বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অবশ্যই রোধ করতে হবে। কারণ এ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো সম্ভব নয়। কাজেই পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ

বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতির ফলে ব্যাপক ফসল ও সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত হতে রক্ষা করতে হবে। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত হতে দেশকে রক্ষা করতে পারলে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। ১০। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন : বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হলে একটি সুষ্ঠু ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অতীতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে দেশের প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয় নি। কাজেই একটি গণমুখী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার ও দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

১১। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার

বাংলাদেশের প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতি সম্পদ আবিষ্কার ও তার যথাযথ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১২। কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি

জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে বেকার সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। দেশে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে প্রত্যেকটি কর্মক্ষম লোকের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো কি কি?

বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি?

 

Related Posts