Home » সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর
সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ

সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ আলোচনা কর

by TRI

সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের সমস্ত অর্থব্যবস্থায় এককগুলোর আচরণ ও কার্যাবলির সমষ্টিগত ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। কাজেই সামষ্টিক অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো চলকসমূহের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় এবং সমস্যা ও সমাধানের পথ নির্দেশ করা। একারণে বর্তমান কালে সামষ্টিক অর্থনীতি এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচে সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হলো :

১। উৎপাদন

কোন নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) কোন দেশে যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হয় তাদের সমষ্টিকেই মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলে। আর মোট জাতীয় উৎপাদনের সাহায্যে কোন দেশের সার্বিক অবস্থা জানা যায়। কাজেই যে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন যতবেশি ঐ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ততবেশি উন্নত। অতএব সামষ্টিক অর্থনীতির উদ্দেশ্য হলো মোট জাতীয় উৎপাদনকে সর্বোচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়া।

২। পূর্ণ নিয়োগ অর্জন

পূর্ণ নিয়োগ অর্জন করা সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি লক্ষ্য। দেশের বেকারত্ব দেখা দিলে সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা করে দেশে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ নিয়োগ বাড়ানো যায়। কোন দেশে শতকরা ৫% বেকার থাকলে ঐ দেশকে পূর্ণ নিয়োগ স্তরে ফেলা যায়। কাজেই সামষ্টিক অর্থনীতির দ্বারা দেশে পূর্ণ নিয়োগ অর্জন করে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।

৩। নির্ভরশীলতা

সামষ্টিক অর্থনীতি আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চলকের মধ্যে নির্ভরশীলতার সম্পর্ক নির্ণয় করা। কারণ সামষ্টিক অর্থনীতিতে সামষ্টিক বিশ্লেষণের জন্য প্রতিটি চলক একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কাজেই এক চলককে বাদ দিয়ে অন্য চলক চিন্তাও করা যায় না।

৪। মান নির্ণয়

সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি প্রধান লক্ষ্য হলো বিভিন্ন সামষ্টিক চলকের মান নির্ণয় করা। কাজেই সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের দ্বারা ভারসাম্য সুদের হার, ভারসাম্য বিনিয়োগ, ভারসাম্য নিয়োগ, ভারসাম্য আয় স্তর ইত্যাদির মান অতিসহজেই নির্ণয় করা যায়।

৫। সমস্যা সমাধান

মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বকে সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি ঐ সকল সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করে তা সমাধানের দিক-নির্দেশ করে থাকে।

আরও পড়ুন:   সামষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে? সামষ্টিক অর্থনীতির হাতিয়ার সমূ

৬। রাজস্বনীতি

অর্থনীতির যে শাখায় সরকারের আয়-ব্যয় এবং ঋণসংক্রান্ত নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রাজস্ব নীতি বলে। কাজেই আধুনিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আয়, ব্যয় এবং ঋণসংক্রান্ত বিষয়ই প্রধান আলোচ্য সূচির অন্তভুক্তি। অতএব সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করা।

৭। আর্থিক নীতি

সামষ্টিক অর্থনীতি আর্থিক নীতির সাহায্যে দেশের মুদ্রায় যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অতএব সামষ্টিক অর্থনীতির উদ্দেশ্য হলো আর্থিক নীতির অধীনে সরকারের অর্থের যোগান কমিয়ে বা বাড়িয়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে থাকে।

৮। আয় বণ্টনে সমতা

সুষম আয় বণ্টন অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবি। সমাজের সম্পদ যদি অসম বণ্টনের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে যায় তাহলে সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় । কাজেই সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের করনীতি অনুসরণ করে সমাজে আয় বণ্টনের সমতা নিশ্চিত করা যায়।

৯। মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা

সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্তর স্থিতিশীলতা রাখা। কারণ মূল্য স্তরের ঊর্ধ্ব ও নিম্নগতি ক্রয়-বিক্রয় আমদানি রপ্তানি ব্যাহত করে। আবার মূল্যস্তর অস্থিতিশীল থাকলে মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন দেখা দিতে পারে, যার কোনটিই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক নয়। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণের দ্বারা। মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন রোধ নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়।

১০। বৈদেশিক স্থিতি

সামষ্টিক অর্থনীতি বৈদেশিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈদেশিক স্থিতি আমদানি রপ্তানি ও মূলধনের প্রবাহের উপর নির্ভরশীল করে। “যখন একদেশের সাথে অন্য দেশের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন, হিসাব-নিকাশ চালু হয় তখন তাকে বৈদেশিক লেনদেন বলে। বৈদেশিক লেনদেনের সময় কখনো ঘাটতি আবার কখনো উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। যা কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। কাজেই সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক আমদানি-রপ্তানি নীতি বাস্তবায়ন করে বৈদেশিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হয়। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থব্যবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করা, সামষ্টিক চলকসমূহের সম্পর্ক নির্ণয় এবং সমস্যা সমাধানের প্রয়োগযোগ্য নীতি নির্ধারণ করাই তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।

Related Posts