আজকের আর্টিকেলে যেসব বিষয়ে ফোকাস করা হয়েছে সেগুলো হলো- জীবন বীমা কি বা জীবন বীমা কাকে বলে, জীবন বীমা কেন করবেন, এর বৈশিষ্ট্য এবং জীবন বীমা কর্পোরেশন কি সরকারি কিনা ইত্যাদি। আশাকরি, আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। চলুন তাহলে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
জীবন বীমা
‘মানুষ মরণশীল’ এ চিরন্তন সত্য কথাটি জানা সত্ত্বেও মানুষ নিজের জীবনকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু জীবনে চলার পথে প্রতি পদক্ষেপে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি আছে। জীবিকার ঝুঁকি তথা সম্ভাব্য ক্ষতির (রোগ-ব্যাধি, দুর্ঘটনা, বার্ধক্য, পঙ্গুত্ব ইত্যাদি) বিপক্ষে আর্থিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই হলো জীবন বীমা।
জীবন বীমা কি ?
প্রিমিয়াম বা বীমা সেলামির বিনিময়ে বীমাগ্রহীতা নিজের বা অন্যের জীবনের ঝুঁকিজনিত ক্ষতির প্রতিরোধ বা লাঘব করার জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে প্রতিশ্রুতি পায় তাকে জীবন বীমা বলা হয়।
সহজভাবে বলা যায়, “জীবন বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যেখানে বীমাকারী প্রিমিয়ামের প্রতিদানে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে বা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব নেয়।”
জীবন বীমার উৎপত্তির ইতিহাস
জীবন বীমার ক্রমবিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্বল্প মেয়াদের জন্য জীবন বীমা ব্যবসায়ের গোড়াপত্তন হয়। লন্ডন জাদুঘরে রক্ষিত একটি জীবন বীমাপত্র থেকে জানা যায়, ১৫৮৩ সালের ১৮ জুন রিচার্ড মার্টিন নামক একজন বীমা ব্যবসায়ী, উইলিয়াম গিবন নামক জনৈক লবণ ব্যবসায়ীর জীবন ১২ মাসের জন্য বীমা করেছিলেন। ঐ মেয়াদের মধ্যে বীমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে আদালতের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করা হবে।
আরও পড়ুন: বিমা চুক্তি কি ? বীমা চুক্তির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ?
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, ১৬৯৬ সালে ইংল্যান্ডে “Hand in Hand” নামে প্রথম জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। ১৬৯৯ সালে “The society of windows and orphans” নামে একটি সমিতি গঠন করা হয়। ১৭০৫ সালে হার্টলে নামক একজন পুস্তক ব্যবসায়ী লন্ডনে কিছু লোকের সহায়তায় “Amicable society for perpetual Assurance” একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এই সময়ে মৃত্যুহারপঞ্জি (Mortality Table) আবিষ্কৃত হয় এবং এটি জীবন বীমার ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের জন্ম দেয়। কারণ এর অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি অনুপাতে প্রিমিয়ামের হার নির্ধারণ করা কঠিন ছিল।
প্রখ্যাত অঙ্কশাস্ত্রবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমুন্ড হ্যালি (Edmund Halley) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মৃত্যুহারপঞ্জি ১৬৯৩ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটেনে Royal Society প্রকাশ করে। মৃত্যুহারপঞ্জি আবিষ্কারের ফলে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি এসে জীবন বীমা ব্যবসায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৭৬২ সালে Equitable Assurance Society নামে ব্রিটেনে একটি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। প্রথমদিকে এটি Level Premium এর ভিত্তিতে ব্যবসায় শুরু করে। অতঃপর এ পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
জীবন বীমার বৈশিষ্ট্য
জীবন বীমার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়-
- দুটি পক্ষ অর্থাৎ বীমাগ্রহীতা ও বীমাকারীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি।
- বীমাগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রিমিয়াম দেয়।
- বীমাকারী প্রিমিয়ামের সাপেক্ষে জীবনের আর্থিক ঝুঁকি বহন করে।
- বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হলে বা শারীরিক ক্ষতি হলে বীমাকারী চুক্তি অনুযায়ী বীমাদাবি পরিশোধ করে।
- এটি একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চুক্তি।
- জীবন বীমা কোনো ক্ষতিপূরণ চুক্তি নয়।
জীবন বীমা কেন করবেন ?
অনেকেই জীবন বীমাকে অহেতুক অপব্যয় মনে করে থাকেন। একধরনের অনীহা কাজ করে কারও কারও মধ্যে। আজ জানবো জীবন বীমা কেন করবেন এবং এর সুবিধা কি কি।
প্রথমত, জীবন বীমা করলে আপনি শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন। কারণ আপনার অবর্তমানেও আপনার পরিবারের সুরক্ষা তৈরি হবে। আপনার অবর্তমানে বীমাগুলোই আপনার পরিবারকে আর্থিক দিক থেকে যত্নের ভার নিয়ে আপনাকে দায়মুক্ত করবে।
দ্বিতীয়ত, জীবন বীমার মাধ্যমে ট্যাক্স বা কর সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাৎ আপনার বীমাকৃত টাকার জন্য আপনাকে কোনো কর প্রদান করতে হবে না। এজন্য ‘জীবন বীমা হলো কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগ।’
তৃতীয়ত, একটি জীবন বীমা আপনার সন্তানদের ভবিষ্যত শিক্ষার খরচ ও ঋণের মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। এবং নিয়মিত জীবন বীমাতে টাকা রাখলে অবসরের পর প্রতি মাসে একটা নিয়মিত আয় পেয়ে থাকবেন এখান থেকে।
এছাড়া জীবন বীমা উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে কাজ করে থাকে।
এবার আপনিই ভাবুন, জীবন বীমা কেন করবেন না?
জীবন বীমা কর্পোরেশন কি সরকারি ?
জ্বি, জীবন বীমা কর্পোরেশন সরকারি। কারণ এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে ভিজিট করুন জীবন বীমা কর্পোরেশন