বীমা কাকে বলে? বীমা কত প্রকার ও কি কি? এ সম্পর্কে আগে জেনেছেন। না জেনে থাকলে উক্ত আর্টিকেলটি পড়ে আসুন। আজকের আর্টিকেলে জানবো বিমা চুক্তি কি, বীমা চুক্তির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি? চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
বিমা চুক্তি কি ?
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও তার সহায় সম্পত্তি সর্বদা ঝুঁকি দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই এসব ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিমা চুক্তি করা হয়।
অর্থাৎ, বিমা হচ্ছে ক্ষতিপূরণের চুক্তি। এটি এমন এক ধরনের চুক্তি; যা বিমা আইনের মাধ্যমে হয়। এখানে দুটি পক্ষ থাকে। একটি বিমাকারী ও অন্যটি বিমাগ্রহীতা। বিমাগ্রহীতা প্রিমিয়িাম দেওয়ার মাধ্যমে বিমাকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা পায়।
সুতরাং, বিমা চুক্তি হচ্ছে এমন একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে বিমাকারী ও বিমাগ্রহীতা পরস্পর লিখিত ও আইনগতভাবে প্রিমিয়াম দেওয়া সাপেক্ষে পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।
বীমা চুক্তির বৈশিষ্ট্য
বীমা চুক্তির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নরূপ-
বৈধ চুক্তি (Legal Contract)
আইন অনুযায়ী বীমা একটি বৈধ চুক্তি। এটি কোনো বাজি খেলা বা জুয়া কেলার চুক্তি নয়। বিমা চুক্তির একপক্ষ বিমাকারী ও অন্যপক্ষ বিমাগ্রহীতা। উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়। তাই এতে বৈধ চুক্তির সব উপাদান থাকা স্বাভাবিক ও আবশ্যক।
লিখিত চুক্তি (Written Contract)
বিমাগ্রহীতা ও বিমাকারীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অবশ্যই লিখিত হতে হয়। এতে বিমার সুবিধা, শর্তাবলি প্রভৃতি বিষয় লিখিতভাবে উল্লেখ থাকে। ফলে এটি উভয় পক্ষকে মেনে চলতে হয়।
প্রিমিয়াম বা সেলামি (Premium)
বীমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বিমাগ্রহীতার দায়ভার নেয়। বীমা ব্যবসায়ের শর্তানুযায়ী সব বিমার ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম দেওয়া বাধ্যতামূলক।
আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Financisl Safety)
বীমার কাজ হলো সম্ভাব্য ক্ষতির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে বীমা কখনই আকস্মিক বিপদকে থামাতে পারে না। কিন্তু এর ক্ষতিপূরণের ঝুঁকি নিতে পারে এবং ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ করতে পারে।
দাবির বিপক্ষে প্রতিদান (Payment against Claim)
জীবন বীমার ক্ষেত্রে বীমাগ্রহীতা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে বীমা প্রিমিয়াম দেয়। তাই ব্যক্তি মারা গেলে বা মেয়াদ পূর্তি হলে বীমা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিশ্রুত অর্থ বীমাগ্রহীতাকে দিতে হয়। অপরপক্ষে অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে ক্ষতি হলেই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বীমাগ্রহীতা একেবারেই বীমা প্রিমিয়াম প্রদান কর।
বীমাযোগ্য স্বার্থ (Insurable Interest)
বীমা চুক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বীমার বিষয়বস্তুতে অবশ্যই বীমাগ্রহীতার স্বার্থ থাকতে হয়। এর মাধ্যমে বীমা চুক্তিতে বীমাগ্রহীতার মালিকানা স্বত্ব অথবা আর্থিক স্বার্থকে বুঝিয়ে থাকে। তবে বীমা চুক্তিতে বীমাযোগ্য স্বার্থ না থাকলে তা বাতিল হয়ে যায়।
পরম সদ্বিশ্বাস (Utmost Good Faith)
বিমাগ্রহীতা ও বিমাকারী একে অন্যকে বীমা চুক্তির সব বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেয়। এতে তাদের মধ্যে সদ্বিশ্বাস তৈরি হয়। এর ব্যতিক্রম হলে বীমা চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হয়।
নির্দিষ্টতা (Certainty)
বীমা চুক্তির আরেকটি শর্ত হলো বিষয় ও বক্তব্যের সুস্পষ্টতা। এজন্য বীমাকৃত টাকার পরিমাণ কত হবে, বীমাপত্রের মেয়াদ কত হবে, প্রিমিয়াম কত হবে এবং মেয়াদ শেষে টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে প্রভৃতি বিষয় বীমাপত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা উচিত।
ঝুঁকি বণ্টন (Distribution of Risk)
বীমার ঝুঁকি অনিশ্চিত। এ ঝুঁকি যেকোনো সময় এবং যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে। তাই বীমাকারী বীমাগ্রহীতার সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করে প্রিমিয়ামের হার নির্ধারণ করে। এভাবে প্রিমিয়াম নেওয়ার মাধ্যমে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দেয়।
মানব কল্যাণ (Human Welfare)
বীমা মানব জীবন ও তার সহায়-সম্পদের সম্ভাব্য বিপদ ও ঝুঁকির বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে। বীমা সম্পত্তির নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সুতরাং, বীমা চুক্তির বৈশিষ্ট্য গুলো বীমা ব্যবসায়কে দিন দিন প্রসারিত করে জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।