নিকাশ ঘর কি ?
আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের নিষ্পত্তিস্থল হলো নিকাশ ঘর। ‘নিকাশ ঘর’ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Clearing House’। এর আভিধানিক অর্থ ‘নিষ্পত্তি স্থল’। পৃথিবীর সব দেশেই নিকাশ ঘরের ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এর ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও গতিশীল হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৬টি জেলা শহরে নিকাশ ঘর ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন করে।
সুতরাং, নিকাশ ঘর হলো এমন একটি স্থান বা কেন্দ্র যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে সমবেত হয়ে তাদের মধ্যকার চেক, বিনিময় বিল, হুন্ডি ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকে।
নিকাশ ঘরের উৎপত্তি
সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে নিকাশ ঘর ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। লোম্বার্ডি স্ট্রিটের মহাজনরা Merchant House-এ বসে তাদের মধ্যকার লেনদেন নিষ্পত্তি করতেন। পরবর্তীকালে লেনদেনের জটিলতা আরও বাড়লে ‘আরভিল’ (Orville) নামক একজন ব্যাংকার এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেন। তার চিন্তার ফল হিসেবেই ১৭৭৫ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আওতায় সর্বপ্রথম “The Banker’s Clearing House” প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ব্যাংকিং ইতিহাসের অগ্রযাত্রায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করে।
আরও পড়ুন: তফসিলি ব্যাংক কি ? তফসিলি ব্যাংক কতটি ২০২৩ ও বৈশিষ্ট্য
নিকাশ ঘরের গুরুত্ব
আধুনিক যুগে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তিতে নিকাশ ঘরের গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং জগতে গতিশীলতা এসেছে। নিকাশ ঘরের মাধ্যমে লেনদেন ঝুঁকিমুক্ত ও সহজসাধ্য হয়েছে। নিচে নিকাশ ঘরের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১। পারস্পরিক লেনদেন নিষ্পত্তি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নিকাশ ঘর বিভিন্ন ব্যাংকের পারস্পরিক লেনদেনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে।
২। স্থানান্তর
চেক অথবা অন্যান্য দলিলের মাধ্যমে মক্কেলের অর্থ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অথবা এক শাখা থেকে অন্য শাখায় কম সময়ে নিকাশ ঘরের মাধ্যমে স্থানান্তর করা যায়।
৩। অর্থনৈতিক অবস্থা
একটি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা যত গতিশীল হবে, সেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত বেশি উন্নত হবে। নিকাশ ঘরে লেনদেনের পরিমাণ যত বাড়বে, দেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতাও তত বাড়বে।
৪। ঝুঁকি হ্রাস
বর্তমানে নগদ অর্থে লেনদেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিকাশ ঘরের মাধ্যমে চেক বা অন্যান্য দলিলের মাধ্যমে লেনদেন করা নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত।
৫। তারল্য সুবিধা
নিকাশ ঘরের মাধ্যমে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তি করা যায় বলে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকেরা দাগকাটা চেকের মাধ্যমে তাদের লেনদেন সম্পন্ন করেন। ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সুবিধা ভোগ করে।
৬। ঋণ নিয়ন্ত্রণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন হলে ব্যাংকের পারস্পরিক লেনদেনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
নিকাশ ঘরের জনক কে ?
নিকাশ ঘরের জনক হলেন আরভিল (Orville)। সর্বপ্রথম তার চিন্তার ফলে ১৭৭৫ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আওতায় “The Banker’s Clearing House” প্রতিষ্ঠিত হয় যা নিকাশ ঘরের প্রথম যাত্রা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।