তফসিলি ব্যাংক কি, বর্তমানে তফসিলি ব্যাংক কতটি, সর্বশেষ তফসিলি ব্যাংক কোনটি, তফসিলি ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য কি, এবং তফসিলি ব্যাংক সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আর্টিকেলটি। আশা করি, পড়ে উপকৃত হবেন।
তফসিলি ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত ও নিয়ম-নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সেগুলোকে তফসিলি ব্যাংক বলে। তফসিলি ব্যাংকের ইংরেজি নাম Scheduled Bank। এগুলোকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকও বলা হয়।
দেশে একটি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সদস্য ব্যাংকগুলোর কাজ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। অবশ্য তালিকাভুক্তির মাধ্যমে একটি ব্যাংক বিশেষ মর্যাদা লাভ করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি ও সব বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতা ও পরিধি আলোচনা কর
তফসিলি ব্যাংক কতটি ২০২৫ ?
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি, তফসিলি এবং অ-তফসিলি মিলে মোট ৬৬ টি স্বীকৃত ব্যাংক আছে। এর মধ্যে ৬১ টি ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত পেলেও বাকি ৬ টি ব্যাংক তফসিলি স্বীকৃতি পায়নি। তফসিলি ব্যাংক হল বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা অফিসিয়ালি স্বীকৃতপ্রাপ্ত ব্যাংক। ৬১ টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৬ টি ব্যাংক সরকারি এবং বাকি ৫৫ টি ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংক।
বাংলাদেশের সর্বশেষ তফসিলি ব্যাংক কোনটি ?
সর্বশেষ সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিটিজেনস ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এই সঙ্ক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: চেইন ব্যাংকিং কি? চেইন ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা
তফসিলি ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য
তালিকাভুক্তির মাধ্যমে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং বিশেষ মর্যাদা পায়। নিচে তফসিলি ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো-
১। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য
তালিকাভুক্তির মাধ্যমে যেকোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্যভুক্ত হয়। সদস্যপদ পাওয়ার মাধ্যমেই এরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত সুযোগ-সুবিধা লাভ করে।
২। আইনানুগ অস্তিত্ব
তালিকাভুক্ত সব ব্যাংকই দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং আইনের আওতায় অনুমোদিত ও নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। ফলে এ ব্যাংকগুলো পৃথক আইনগত অস্তিত্ব বা সত্তার অধিকারী।
৩। অর্থ বাজারের সদস্য
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থবাজারের অভিভাবক। তাই এর তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো দেশের অর্থবাজারেরও সম্মানিত সদস্য হিসেবে গণ্য হয়। এরাই অর্থবাজারের গতিশীলতা বাড়িয়ে থাকে।
৪। মূলধন ও তহবিল
প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের একটা ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ও সংরক্ষিত তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা থাকে। বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী ন্যূনতম আদায়কৃত মূলধন ও সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা।
৫। নগদ জমা
প্রত্যেক তালিকাভুক্ত ব্যাংককে তার চলতি ও স্থায়ী আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা হিসেবে রাখতে হয়। বাংলাদেশ এর হার ৫.৫০%।
৬। তরল সংরক্ষণ
ব্যাংকের প্রত্যেক দিনের ব্যাংকিং কাজ পরিচালনার জন্য নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী আমানতের ন্যূনতম অংশ তরল সম্পদ হিসেবে রাখতে হয়। বাংলাদেশে এর হার ১৮.৫০%, যাকে SLR বা (Statutory Liquidity Ratio) বলে।
অনলাইন শিক্ষার অন্যতম প্লাটফর্ম গুরুগৃহ
৭। স্বতন্ত্র সত্তা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তালিকাভুক্ত ব্যাংক হলেও এ ব্যাংকের একটি নিজস্ব সত্তা রয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজস্ব সত্তা বজায় রেখে ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করে।
৮। বিবরণী দাখিল
তালিকাভুক্ত ব্যাংকুগলোকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আর্থিক বিবরণী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হয়।
তফসিলি ব্যাংক সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর । FAQS
১। তফসিলি ব্যাংক কতটি ২০২৩?
উত্তর: ৬১ টি।
২। ৬১ তম তফসিলি ব্যাংক কোনটি?
উত্তর: সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি
৩। তফসিলি ব্যাংক কতটি?
উত্তর: ৬১ টি।
৪। বাংলাদেশে তফসিলি ব্যাংক কয়টি?
উত্তর: ৬১ টি।
৫। সর্বশেষ তফসিলি ব্যাংক কোনটি?
উত্তর: সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি।
৬। অ তফসিলি ব্যাংক কি কি?
উত্তর: অ-তফসিল ব্যাংক ৫ টি। যথা- জুবিলী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক।
৭। তফসিলি ব্যাংক কি?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত ও নিয়ম-নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় সেগুলোকে তফসিলি ব্যাংক বলে।