শাখা ব্যাংকিং কি
কোনো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একটি প্রধান অফিসের অধীনে অসংখ্য শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করা হলে তাকে শাখা ব্যাংকিং বলে। এ ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দেশে ও বিদেশে শাখা খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। প্রধান অফিসের রীতিনীতি অনুযায়ী শাখা ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। শাখা ব্যাংকের কোনো আলাদা সত্তা থাকে না। প্রধান অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে শাখা ব্যাংকগুলো তাদের কার্যাবলিও সম্পাদন করে থাকে।
বিশ্বে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে এ ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশেই শাখা ব্যংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
আরও পড়ুন: একক ব্যাংক কি? একক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা
শাখা ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য
নিচে শাখা ব্যাংক এর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো-
১। শাখা কার্যালয়
শাখা ব্যাংক-এ অনেকগুলো শাখা অফিস থাকে। শাখাগুলোর মাধ্যমেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা করে।
২। মালিকানা
শাখা ব্যাং সরকারি বা বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
৩। কাজের পরিসর
শাখা ব্যাংকের কাজের পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত। দেশে-বিদেশে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে এর ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে।
৪। মূলধন
যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শাখা ব্যাংক শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করে।
৫। নিয়ন্ত্রণ
শাখাগুলো কেন্দ্রীয় অফিসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। আর কেন্দ্রীয় অফিস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
৬। আইনগত সত্তা
নিজস্ব ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী গঠিত হয় বলে শাখা ব্যাংকের পৃথক আইনগত সত্তা রয়েছে।
৭। পরিচালনা
একটি শক্তিশালী পরিচালনা পরিষদের অধীনে সব শাখা পরিচালিত হয়। শাখগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রধান কার্যালয়।
৮। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে শাখা ব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
৯। সংগঠন
শাখা ব্যাংক অংশীদারি সমবায়, যৌথমূলধনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আকারে সংগঠিত হতে পারে।
শাখা ব্যাংকের সুবিধা
সম্প্রসারিত চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে একমাত্র শাখা ব্যাংক গ্রাহকের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে পারছে। শাখা ব্যাংকের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ-
১। বিস্তৃত সেবা
জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হলো শাখা ব্যাংক।
২। পর্যাপ্ত মূলধন
বিভিন্ন স্থানে শাখা থাকার কারণে এ ব্যাংক প্রচুর আমানত সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে বৃহৎ মূলধন গড়ে ওঠে।
৩। দক্ষ ব্যাংকিং
আর্থিক স্বচ্ছলতা বেশি হওয়ার কারণে এ ব্যাংক অধিক বেতন দিয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যাংকার নিয়োগ করতে পারে।
৪। অর্থ স্থানান্তর
দেশে এবং বিদেশে শাখা ছড়িয়ে থাকে বলে এই সমস্ত ব্যাংকের মাধ্যমে সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে অর্থ পাঠানো যায়। এতে ঝুঁকিবিহীনভাবে অর্থ স্থানান্তর সম্ভব হয়।
৫। ঋণ নিয়ন্ত্রণ
দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে শাখা ব্যাংকের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৬। মূলধনের গতিশীলতা
শাখা ব্যাংক জনগণের মূলধনের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট ভূমিকা রাখে।
৭। কর্মসংস্থান
শাখা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। এ ধরনের ব্যাংকিং দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
৮। জনগণের আস্থা
শাখা, বিনিয়োগ ও বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে শাখা ব্যাংক স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন করে।
৯। পর্যাপ্ত আমানত
শাখা ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক সহজে পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহ করতে পারে।