ব্যবসায় উদ্যোগ কি ?
ব্যবসায় উদ্যোগ কি বা ব্যবসায় উদ্যোগের ধারণা পেতে হলে আগে উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে হবে।
উদ্যোগ একটা সাধারণ পরিভাষা। নতুন কোনো বিষয়ে যিনিই প্রয়াস নিয়ে সামনে এগিয়ে যান তাকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা হয়। একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা, স্কুলে কলেজ শিফট চালু, এলাকায় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, গ্রামের বাজারে মোবাইল ব্যাংকিং এর চেইন পয়েন্ট চালু, মহল্লায় বিউটি পার্লারের দোকান খোলা-এর সবই উদ্যোগের উদাহরণ। আর উদ্যোগের যেই অংশ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত তাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে।
নতুন ব্যবসায় গঠন বা নতুন পণ্য, সেবা, পদ্ধতি বা বাজার সামনে রেখে একজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলা হয়ে থাকে। ব্যবসায় উদ্যোগের বিষয়বস্তু নতুন ব্যবসায় শুরুর সাথে সম্পর্কিত। এটি সম্পূর্ণ নতুন ব্যবসায় হতে পারে, নতুন পণ্য বা সেবা ব্যবসায়ে সংযুক্ত করার প্রয়াস হতে পারে, নতুন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি চালু করা হতে পারে, নতুন বাজারে প্রবেশ চেষ্টা হতে পারে ইত্যাদি। এর সবকিছুর সাথেই যেহেতু নতুন চিন্তা যুক্ত তাই এগুলো ব্যবসায় উদ্যোগের অন্তর্গত।
আরও পড়ুন: বীমা কাকে বলে? বীমা কত প্রকার ও কি কি?
ব্যবসায় উদ্যোগ এর ইংরেজি কি ?
ব্যবসায় উদ্যোগ English meaning বা ব্যবসায় উদ্যোগ এর ইংরেজি নাম কি অনেকেই জানেন না। তাদের জন্য ব্যবসায় উদ্যোগ ইংরেজি অর্থ তুলে ধরছি।
ব্যবসায় উদ্যোগ এর ইংরেজি অর্থ হলো Business Venture বা অনেকে Business Entrepreneurship ও বলে থাকেন। এখন চলুন ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলী কি কি তা জেনে নিই।
ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলী
ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যবলী নিম্নরূপ-
১. উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন
ব্যবসায় উদ্যোগ সৃজনশীল চিন্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অন্য ব্যবসায়ী কোন ব্যবসায়ে ভালো করছে, সে দিকটা দেখার চাইতে নিজে কোন ব্যবসায় গড়ে তুললে ভালো করতে পারবে একজন উদ্যোক্তা সে দিকটা দেখতেই আগ্রহী থাকে। নতুন কী করলে ব্যবসায়ে দ্রুত সাফল্য লাভ সম্ভব হবে সে বিষয় তার কাছে প্রাধান্য পায়। এভাবেই সে নানান চিন্তাকে বিচার-বিবেচনা করে উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন ঘটায়।
২. সম্ভাব্যতা যাচাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ
উদ্যোগ চিন্তা কতটা কার্যকর হবে এটা দেখার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে নানান সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করতে হয়। চিন্তাকে একটা প্রকল্প বিবেচনা করে এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ, খরচ, আয় ও মুনাফা কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করা হয়। লাভজনকতা বিচারে নতুন প্রকল্প চিন্তা গ্রহণযোগ্য হলে তা বাস্তবায়নে উদ্যোক্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৩. অর্থসংস্থান
যে কোনো নতুন ব্যবসায় উদ্যোগে অর্থসংস্থানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন উদ্যোক্তা তার নতুন চিন্তার বিষয়ে খুবই উৎসাহী ও আশাবাদী থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অর্থসংস্থানের সামর্থ্য সীমাবদ্ধ থাকে। এজন্য ব্যবসায় উদ্যোগে কখন কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, কোন কোন উৎস থেকে উক্ত অর্থ সংগ্রহ করা যাবে তা সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে অর্থ সংগ্রহ, বিনিয়োগ, নগদ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজ করতে হয়।
৪. ঝুঁকি গ্রহণ
ব্যবসায় উদ্যোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ঝুঁকি গ্রহণ। ব্যবসায় উদ্যোগে যেহেতু নতুন পণ্য, সেবা, পদ্ধতি, বাজার ইত্যাদিকে সামনে নিয়ে আসা হয় ফলে তার কার্যকারিতা কতটা ফলদায়ক হবে এ নিয়ে স্বভাবতই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেশি থাকে। এজন্যই এজন উদ্যোক্তাকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হয়।
৫. উপকরণাদি সংহতকরণ
ব্যবসায় উদ্যোগকে সফল করতে অর্থ ছাড়াও বিভিন্ন উপকরণ; যেমন- শ্রম, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি জোগাড় এবং সেগুলো সঠিকভাবে সমন্বিত করার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে জনশক্তি সংগ্রহে উদ্যোক্তাকে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। এক্ষেত্রে একবার ভুল করলে উদ্যোগ এগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৬. বাজার সৃষ্টি
বাজার সৃষ্টি বলতে মূলত নির্দিষ্ট এলাকায় চাহিদা সৃষ্টির কাজকে বুঝায়। নুতন পণ্য বা সেবা বাজারজাত করতে চাইলে উক্ত পণ্য বা সেবাকে ক্রেতা সাধারণের নিকট জনপ্রিয় করে তুলতে হয়। নতুন ব্যবসায় শুরু করলে সম্ভাব্য গ্রাহকদের ঐ ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলার প্রয়োজন পড়ে।
৭. সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন
ব্যবসায় উদ্যোগে সাফল্য লাভ করতে হলে কাজ শুরুর পর প্রকল্পের প্রতিটা পর্যায়ে এর সাফল্য ও ব্যর্থতা মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে। সাফল্যে অভিভূত না হয়ে সাফল্যকে ধরে রেখে কিভাবে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়া যায় একজন উদ্যোক্তাকে তা নিয়ে ভাবতে হয়। কোন কোন দিক থেকে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন পড়ে।
৮. উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন
ব্যবসায় উদ্যোগে সফলতা ধরে রাখতে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে যথেষ্ট সতর্ক ও আন্তরিক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। মনে রাখতে হয়, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের হাজার ফোঁড়’। অর্থাৎ নতুন পণ্য, সেবা পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে এটাকে যতদ্রুত সম্ভব মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোনোরূপ আলস্য প্রতিযোগী সৃষ্টির পথ খুলে দিতে পারে। তাই উন্নয়ন কর্মসূচিকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু করার কোনো সুযোগ থাকে না।