Home » সমবায় সমিতির নীতিমালা বা আদর্শসমূহ সম্পর্কে আলোচনা কর।

সমবায় সমিতির নীতিমালা বা আদর্শসমূহ সম্পর্কে আলোচনা কর।

by TRI

সমবায় সমিতির নীতিমালা বা আদর্শসমূহ

সমবায় ব্যবসায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে এর পরিচালক ও সদস্যদের বেশ কিছু মূলনীতি বা আদর্শ মেনে চলতে হয়। এরূপ নীতি বা আদর্শের বিচ্যুতি ঘটলে সমবায় সাফল্য লাভ করতে পারে না। নিম্নে সমবায় সমিতির নীতিমালা বা আদর্শসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. একতা

সকলে মিলে একভাবে, একমনে ও একত্রে চলার দৃঢ় অভিব্যক্তি, প্রবণতা ও অবস্থাকে একতা বলে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই চলার ফলে যে শক্তির সৃষ্টি হয় তাই ‘একতাই বল’ নামে অভিহিত। এই প্রধান মূলনীতির ওপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেক সমবায়ীকে বুঝতে হয় যে ঐক্যই তাদের শক্তি।

২. সাম্য

সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। সাম্য বলতে সংঘবদ্ধ সকলের পারস্পরিক অধিকারে সমতা প্রতিষ্ঠাকে বুঝায়। সমবায়ের সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে যে যেমনই হোক না কেন সবাই এখানে সমবা মর্যাদার অধিকারী। সমবায়ে যার যে পরিমাণ মূলধনই থাক না কেন সবাই এক ভোটের অধিকারী।

আরও পড়ুন:   সমবায় সমিতির প্রকারভেদ আলোচনা কর।

৩. সহযোগিতা

সহযোগিতা বলতে একে অন্যকে সহায়তা করে এগিয়ে নেয়ার বা এগিয়ে যাওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে বুঝায়। সমবায়ের আরেকটি মূলমন্ত্র হলো ‘দশে মিলে করি কাজ’। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যের সহযোগিতার মনোভাব ও পরস্পর সহানুভূতিশীল থাকা অপরিহার্য।

৪. সততা

সততা বলতে ন্যায়পরায়ণতা প্রদর্শন এবং সাধুতা বা ধার্মিকতা বজায় রেখে চলাকে বুঝায়। সমবায় সংগঠনে এর প্রত্যেক সদস্যের বিশেষত পরিচালকদের মধ্যে সততার গুণ থাকা এর সংহতি ও সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. আস্থা ও বিশ্বাস

দলবদ্ধ প্রচেষ্টায় দলীয় সদস্যগণ পরস্পরের প্রতি নিঃসন্দেহ ও নির্ভরশীল হওয়াকেই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস বলে। সমবায় সফলতা লাভ করতে হলে এর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য। এরূপ বিশ্বাস যত দৃঢ় হয় সমবায়ের প্রতি সদস্যদের আগ্রহ, উদ্দীপনাও তত বাড়ে।

৬. গণতন্ত্র

সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামত অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থাকেই গণতন্ত্র বলে। সমবায় সমিতিকে সব সময়ই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়।

৭. সঞ্চিতি সংরক্ষণ

সমবায়ের বিধান অনুযায়ী অর্জিত মুনাফার একটা নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলক সংরক্ষণকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং এরূপ নীতিকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ নীতি বলে। ২০০১ সালের সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী অর্জিত মুনাফার ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% উন্নয়ন তহবিলে সংরক্ষণ করতে হয়।

৮. নিরপেক্ষতা

কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করার নীতিকেই নিরপেক্ষতার নীতি বলে। সমবায়ের অগ্রগতির জন্য একে সব সময়ই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা আবশ্যক। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা দলের প্রভাব ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় থাকলে অনেক সময় তা হীন মানসিকতার জন্ম দেয়। এজন্য সমবায়কে এর উর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কল্যাণ ও ভালোবাসা-এ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হয়।

Related Posts