কোম্পানি সংগঠন
কোম্পানি আইনের অধীনে গঠিত ও পরিচালিত কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী সীমিত দায়বিশিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি সংগঠন বলে।
কোম্পানি সংগঠন আইনের অধীনে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বিধায় এ ব্যবসায় সহজে ভাঙ্গে না এবং তা চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা লাভ করে। এটি নিজ নামে পরিচিত ও পরিচালিত হয় বিধায় ব্যক্তিক স্বার্থ ও কর্তৃত্ব এখানে মুখ্য হতে পারে না। সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ ও বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সহজ হয়।
কোম্পানি সংগঠনের শ্রেণীবিভাগ
একদিকে ব্যবসায় জগতে ব্যাপক উন্নয়ন অন্যদিকে একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন সংগঠন কাঠামো কোম্পানি সংগঠনের উৎপত্তি ঘটে। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় জগতে আরো ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এ ব্যবসায়ের গতি-প্রকৃতিতেও পরিবর্তন সূচিত হয়। যার ফলে কোম্পানির ধরনেও পার্থক্য ঘটে।
বিবরণ পত্র কি? বিবরণ পত্রে কি কি বিষয় থাকা উচিত? |
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার কোম্পানি সম্পর্ক আলোচনা করা হলো-
১. সনদপ্রাপ্ত কোম্পানি
১৮৮৪ সালে বৃটেনে পৃথিবীর সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন পাস হয়। এর পূর্বে ঐ দেশের বা অন্যান্য দেশের তৎকালীন রাজা বা রাণীদের বিশেষ ফরমান বা সনদবলে যে কোম্পানি গঠিত হতো তাকে সনদপ্রাপ্ত কোম্পানি বলে। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি, চার্টাড ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এ ধরনের কোম্পানির উদাহরণ। কোম্পানি আইন পাস হওয়ার পর এরূপ কোম্পানি গঠনের সুযোগ রহিত করা হয়।
২. বিধিবদ্ধ কোম্পানি
দেশের আইনসভা, সংসদ বা প্রেসিডেন্টের বিশেষ অধ্যাদেশবলে গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিকে বিধিবদ্ধ কোম্পানি বলে। দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বা জনকল্যাণমূলক কার্য সাধনের লক্ষ্যে এরূপ কোম্পানি গঠন করা হয়। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমান, বিআরটিএ, বিসিআইসি ওয়াসা ইত্যাদি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।
৩. নিবন্ধিত কোম্পানি
যে সকল কোম্পানি দেশে বহাল কোম্পানি আইন অনুযায়ী গঠিত ও কোম্পানি নিবন্ধক কর্তৃক নিবন্ধিত হয় তাকে নিবন্ধিত কোম্পানি বলে। কোম্পানি বলতে সাধারণভাবে এরূপ কোম্পানিকে বুঝায়। দায়ের ভিত্তিতে এরূপ কোম্পানিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) অসীম দায়সম্পন্ন কোম্পানি, এবং
খ) সসীম দায়সম্পন্ন কোম্পানি।
৪. অনিবন্ধিত কোম্পানি
কোম্পানি আইনের ৩৭১ ধারা অনুযায়ী অনিবন্ধিত কোম্পানি হলো সাত সদস্যের অধিক সদস্য নিয়ে গঠিত কোনো অংশীদারি ব্যবসায় বা সমিতি যা কোম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত নয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী এরূপ প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি বলা চলে না। তবে কোম্পানি গুটানোকালে সীমিত পর্যায়ে এটা কোম্পানি হিসেবে গণ্য হয়।
৫. অন্যান্য কোম্পানি
উপরোক্ত কোম্পানি ছাড়াও আরও কয়েক ধরনের কোম্পানির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
ক) বিদ্যমান কোম্পানি
১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন প্রচলিত হওয়ার পূর্বে যে কোনো সময়ে বিদ্যমান কোম্পানি আইনের আওতায় কোনো কোম্পানি গঠিত, নিবন্ধিত ও বর্তমানে প্রচলিত থাকলে তাকে বিদ্যমান কোম্পানি বলে। নিবন্ধিত প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিই মূলত এরূপ কোম্পানি হিসেবে গণ্য হয়।
খ) বিদেশী কোম্পানি
দেশের বাইরে গঠিত ও নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি পরবর্তী সময়ে কোম্পানি আইনের ৩৭৮ ধারা অনুযায়ী দেশের মধ্যে কার্য পরিচালনার জন্য পুনরায় নিবন্ধিত হলে ঐ কোম্পানিকে বিদেশী কোম্পানি বলে।
গ) অব্যবসায়ী সংস্থা
যদি কোনো সমিতি বা সংঘ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কলা, বিজ্ঞান, ধর্ম বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উন্নতির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর অর্জিত মুনাফা শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন না করে উদ্দেশ্য অর্জনের কাজেই ব্যবহৃত হয়। তবে সরকার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সীমাবদ্ধ দায়সম্পন্ন কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধনের নির্দেশ দিতে পারে। উক্ত অব্যবসায়ী সংস্থাও কোম্পানি হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক এনজিও এরূপ সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
ঘ) বিশেষ কোম্পানি
যে সকল কোম্পানি দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত হলেও অন্য কোনো বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বিশেষ কোম্পানি বলে। বিমা কোম্পানি ও ব্যাংকিং কোম্পানিসমূহ বিশেষ কোম্পানির উদাহরণ।