অংশীদারি ব্যবসায়
চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। একমালিকানা ব্যবসায়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অধিক ব্যবসায় সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য এরূপ ব্যবসায়ের উদ্ভব। যৌথ সামর্থ্যকে একত্রিত করে তুলনামূলকভাবে বৃহদায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা এর লক্ষ্য।
চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি । অর্থাৎ ব্যবসায় পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অংশীদারদের মধ্যে অন্য সম্পর্কও থাকতে পারে তবে ব্যবসায় পরিচালনায় তার গুরুত্ব কম।
অংশীদারের প্রকারভেদ
অংশীদারি ব্যবসায়ের সকল অংশীদার একইরূপ হবে এমন নয়। বিভিন্ন ধরনের অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় অনেকেই এরূপ ব্যবসায়ের অংশীদার হতে পারে। তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে অংশীদারদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের অংশীদার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার
যে অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে এবং সক্রিয়ভাবে ব্যবসায় পরিচালনায় অংশ নেয় তাকে সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার বলে। এরূপ অংশীদারের দায় সবসময়ই অসীম হয় এবং ব্যবসায়ের গঠন ও পরিচালনায় এরূপ অংশীদররাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: ব্যবসায় পরিবেশ কি? ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ কি কি?
২. নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অংশীদার
যে অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে, লাভ-ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু অধিকার থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায় পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে না তাকে নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অংশীদার বলে। এরূপ অংশীদারের দায়ও সক্রিয় অংশীদারের ন্যায় অসীম হয়। তবে এরূপ অংশীদার ব্যবসায় থেকে অবসর গ্রহণ করলে সক্রিয় অংশীদারের ন্যায় গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
৩. কর্মী অংশীদার
যে অংশীদার ব্যবসায়ে কোনো মূলধন বিনিয়োগ করে না শুধুমাত্র নিজস্ব শ্রম ও দক্ষতাকে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রাখে তাকে কর্মী অংশীদার বলে। চুক্তি অনুযায়ী এরা অন্যান্য অংশীদারের ন্যায় ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে এবং অসীম দায় বহনে বাধ্য থাকে। অবশ্য ব্যবসায় পরিচালনার জন্য এদেরকে নির্দিষ্ট হারে বেতন বা লাভের অংশ দেয়া হয়। সাধারণত ব্যবসায় পরিচালনায় যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের অংশীদার হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে।
৪. নামমাত্র অংশীদার
যে অংশীদার চুক্তি অনুযায়ী লাভের অংশ অথবা নির্দিষ্ট বেতন বা অর্থের বিনিময়ে তার নামের সুনাম অংশীদারি ব্যবসায়কে ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাকে নামমাত্র অংশীদার বলে। এরূপ অংশীদার ব্যবসায়ে কোনো মূলধন বিনিয়োগ করে না এবং ব্যবসায় পরিচালনায়ও অংশ নেয় না। কিন্তু সাধারণ্যে নিজেকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় অথবা অন্যকে নিজের বিষয়ে এ ধরনের প্রচারের অনুমতি দিয়ে থাকে।
৫. আপাতদৃষ্টিতে অংশীদার
যদি কোনো অংশীদার ব্যবসায় হতে অবসর গ্রহণের পরও ব্যবসায় হতে মূলধন উত্তোলন না করে বা তা ঋণ হিসেবে জমা রাখে সেক্ষেত্রে ঐ অংশীদারকে আপাতদৃষ্টিতে অংশীদার বলে। কার্যত এরূপ ব্যক্তি ব্যবসায়ের পাওনাদার; অংশীদার নয়।
৬. সীমিত বা সীমাবদ্ধ অংশীদার
চুক্তি অনুযায়ী বা আইনগত কারণে ব্যবসায়ের কোনো অংশীদারের দায় সীমাবদ্ধ হলে তাকে সীমিত বা সীমাবদ্ধ অংশীদার বলে। কোনো অংশীদার অসীম দায় বহনে অনাগ্রহী হয়ে এবং কার্যত বিনিয়োগকারী হিসেবে সুবিধা অর্জনের নিমিত্তে অন্যান্য অংশীদারদের অনুমতিক্রমে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিজেকে সীমাবদ্ধ অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।
৭. আচরণে অনুমিত অংশীদার
যদি কোনো ব্যক্তি ব্যবসায়ের অংশীদার না হয়েও কথা-বার্তা ও আচরণের দ্বারা নিজেকে অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় তবে তাকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলে। অনেক সময় লক্ষ্যণীয় যে, কোনো ব্যক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যেখানে উক্ত কাজের স্বার্থে নিজেকে অংশীদার হিসেবে পরিচয় দিলে সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে জেনে শুনে ব্যবসায় তার স্বার্থেই ব্যক্তির এ ধরনের পরিচয়কে মেনে নেয় এবং তা অস্বীকার করে না। এরূপ পরিস্থিতিতে ঐ ব্যক্তিকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলা যায়।
৮. প্রতিবন্ধ অংশীদার
যদি ব্যবসায় বা ব্যবসায়ের অংশীদারগণ কোনো ব্যক্তিকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং উক্ত ব্যক্তি তা জেনেও মৌনতা অবলম্বন করে তবে তাকে প্রতিবন্ধ অংশীদার বলে। নামমাত্র অংশীদারের সাথে এরূপ অংশীদারের পার্থক্য হলো নামমাত্র অংশীদার চুক্তির শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট স্বার্থের বিনিময়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তার নাম ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা দেয়া হয় না।