Home » ব্যবসায় পরিবেশ কি? ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ কি কি?
ব্যবসায় পরিবেশ কি

ব্যবসায় পরিবেশ কি? ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ কি কি?

by TRI

ব্যবসায় পরিবেশ

একটা দেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে গঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। একটা দেশের ব্যবসায় পরিস্থিতি এর পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান বা শক্তির দ্বারা সাধারণভাবে প্রভাবিত হয়। এর বাইরে কিছু উপাদান বা শক্তি প্রত্যক্ষভাবে একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে কিছু শক্তি থাকে; যা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্যদিকে বাহ্যিক কিছু বিষয়ও প্রত্যক্ষভাবে একটা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে।

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ

পারিপার্শ্বিক যে সকল প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাকেই ব্যবসায় পরিবেশ বলে। প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হলেও বর্তমানকালে অপ্রাকৃতিক নানান উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিম্নে ব্যবসায় পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক পরিবেশ

কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, সাগর, আয়তন, অবস্থান ইত্যাদির সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে উঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিচিত্র ধরনের। এ সকল উপাদানের পার্থক্যহেতু দেশের ব্যবসায় কার্যকলাপও ভিন্নতর হয়ে থাকে।

উদাহরণ

বাংলাদেশে পাট শিল্প, নরওয়েতে মৎস শিল্প, কুয়েতে পেট্রোলিয়াম শিল্প গড়ে উঠার পিছনে এরূপ কারণ বিদ্যমান। যেমনটা নেপাল ভুবেষ্টিত রাষ্ট্র হওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে সুবিধা করতে পারছে না। এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতির কারণে কৃষিতে পশ্চাৎপদ।

আরও পড়ুন:   ব্যবসায়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর

২. অর্থনৈতিক পরিবেশ

জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, মূলধন ও জনসম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে। যে দেশে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ভালো, মূলধনের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা উন্নত, সেই দেশ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ততই অগ্রগতি লাভ করতে পারে।

উদাহরণ

জাপান মানব সম্পদের কারণে ব্যবসায়ের উন্নতি লাভ করেছে। সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নতির পিছনে অর্থনৈতিক পরিবেশের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও আফ্রিকার দেশগুলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের অভাবের কারণে তা কাজে লাগাতে পারছে না।

৩. সামাজিক পরিবেশ

সমাজ বলতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মানব গোষ্ঠীকে বুঝায়। কোনো সমাজের বা জাতির মানুষের সংখ্যা, তাদের ধর্ম বিশ্বাস, চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও দেশীয় ঐতিহ্য মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতা গড়ে ওঠে তাকেই সামাজিক পরিবেশ বলে। এরূপ পরিবেশও ব্যবসায় পরিবেশকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। নিম্নে সামাজিক পরিবেশের দু’টি প্রধান উপাদান আলোচনা করা হলো-

ক) সাংস্কৃতিক পরিবেশ

একটা সমাজের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের মানুষের মাঝে কিছু ধারণা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও আচরণের ভাবধারা গড়ে ওঠে। এর সম্মিলনে ঐ সমাজে যেই পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকেই সাংস্কৃতিক পরিবশে বলে। কোনো সমাজের মানুষ মিথ্যা বলা ও অন্যকে ঠকানো গর্হিত কাজ বলে মনে করে আবার কোথাও উল্টো চিত্র বিদ্যমান।

উদাহরণ

আমাদের সমাজে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, পারিবারিক বন্ধনের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার, গতানুগতিক মানসিকতা ইত্যাদি এক ধরনের সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

খ) ধর্মীয় পরিবেশ

ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার-আচরণ থেকে কোনো সমাজের অভ্যন্তরে যে পারিপার্শ্বিকতার সৃষ্টি হয় তাকে ধর্মীয় পরিবেশ বলে। সকল সমাজেই মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের আচরণে প্রভাব বিস্তার করে।

উদাহরণ

হিন্দু সমাজে পূজা পার্বন, মুসলমান সমাজে নামাজ, রোজা, ঈদ, এভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্রার্থনার ভিন্ন নিয়ম-রীতি প্রতিটা সমাজে একটা ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে। বিশ্বাসের কারণেই বৌদ্ধ সমাজে পশু পালন নিরূৎসাহিত করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই তুরস্কে মদশিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি।

৪. রাজনৈতিক পরিবেশ

দেশের সার্বভৌমত্ব, সরকারের স্থিতিশীলতা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও তাদের চিন্তা-ভাবনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতার জন্ম নেয় তাকে রাজনৈতিক পরিবেশ বলে। অনুন্নত ও অসহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের ব্যবসায় পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

উদাহরণ

বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পথে বড় বাধা রাজনৈতিক হানাহানি ও এক্ষেত্রে বিরাজমান নেতিবাচক উপাদানের উপস্থিতি। অথচ মালয়েশিয়ার উন্নতিতে রাজনৈতিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

৫. প্রযুক্তিগত পরিবেশ

বর্তমানকালে ব্যবসায়ের ওপর প্রযুক্তিগত পরিবেশের ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয়। বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, এতদসংক্রান্ত গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ ইত্যাদি মিলিয়ে সৃষ্ট পরিবেশকে প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলে। বিজ্ঞান আমাদেরকে নতুন নতুন জ্ঞান শিক্ষা দেয়। কিন্তু এ জ্ঞানের ব্যবহার ঘটে প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে কম খরচে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার উৎপাদন সম্ভব হয়। আর এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ব্যাপকতা লাভ করে।

উদাহরণ

বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নের পিছনে প্রযুক্তিগত পরিবেশর অবদান সবচেয়ে বেশি। বৃটেনে গ্রীনহাউজ প্রভাব সৃষ্টি করে টমেটো চাষ এই পরিবেশের কারণে সম্ভব হয়েছে।

৬. আইনগত পরিবেশ

জনগণের কল্যাণে সরকার নানান ধরনের আইন ও নীতিমালা পাস করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নানান সুযোগ-সুবিধা অর্জনের জন্য আইন ও নীতিমালা পাস করা হয়। আর এ আইন ও নীতিমালার বেড়াজালের মধ্যে থেকেই ব্যবসায়ী ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সকল আইন ও নীতির সম্মিলনে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে আইনগত পরিবেশ বলে।

উদাহরণ

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পগুলোতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ ও আবাসিক এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠায় বাধার মুখ্য কারণ হলো আইনগত পরিবেশ।

Related Posts