ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব এত বেশি যে তা বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য হলেও এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সবকিছুই বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাই উপকৃত হয় না, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রতিটা মানুষই উপকৃত হয়ে থাকে। নিম্নে ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
১. সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার
দেশের সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের ওপর জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। সকল দেশেই ব্যবসায় দেশের সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। গাছ, বাঁশ ইত্যাদি থেকে মন্ড তৈরি হয় যা দিয়ে প্রস্তুত হয় কাগজ। এই কাগজে লিখে একজন শিক্ষার্থী তা ফেলে দেয় বা ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রয় হয়। এই অব্যবহার্য কাগজ প্যাকেজিং শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে তা থেকে নতুন পণ্য উৎপাদিত হয়। এভাবে নানান অমূল্যবান জিনিসকেও ব্যবসায়ীরা মূল্যবান সম্পদে পরিণত করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য কি? বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
২. মূলধন গঠন ও তার সদ্ব্যবহার
যে কোনো ধরনের ব্যবসায় বা উৎপাদনের কাজে মূলধন গুরুত্বপূর্ণ। এই মূলধন সৃষ্টি হয় প্রথমত সঞ্চয় থেকে। ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমনি বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় সংগ্রহ করে মূলধন গঠন করে তেমনি অন্য ব্যবসায়ীগণ ব্যবসায়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করে তা মূলধনে পরিণত করে। অতঃপর মূলধনের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ে। ফলে ব্যক্তিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।
৩. ব্যক্তিগত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি
ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগের ফলে অর্জিত মুনাফা মালিকের ব্যক্তিগত আয় ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধিতে যেমনি ভূমিকা রাখে তেমনিভাবে তা জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি করে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। যাদের আয়ও জাতীয় আয় বাড়ায়। এরকম একটা বড় শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে অনেক ছোট ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে; যা ব্যক্তিগত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধির কারণ হয়।
৪. উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার
ব্যবসায়ের প্রয়োজনে ও সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটে। এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও পণ্যের মানোন্নয়ন সম্ভব হয়। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় ও ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বাড়ে। এ কারণেই উন্নত বিশ্বে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কর্মে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
৫. সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি
দেশের ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে সরকার বিভিন্ন খাত হতে প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারে। এতে সরকারের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধি যায় এবং জনগণ তার সুফল ভোগ করে।
৬. জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি
ব্যবসায়ের ফলে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতেরই শুধু উন্নয়ন ঘটে না এতে জাতীয় আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় সম্পদও বৃদ্ধি পায়। উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন মূল্যবান মূলধনী যন্ত্রপাতি, বিদেশী পুঁজি ইত্যাদি দেশে আসাতেও দেশের সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণ বাড়ে। এতে দেশের উৎপাদন, আয়, সঞ্চয়, মূলধন ও বিনিয়োগ সর্বত্রই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৭. সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন
ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়নের সাথে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক, বিমা, পরিবহণ শিল্পসহ বিভিন্ন আর্থিক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটে। এছাড়াও বিজ্ঞাপনী সংস্থাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। যা দেশের সামগ্রিক ব্যবসায় কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
সামাজিক গুরুত্ব
১. পণ্য ও সেবার যোগান
ব্যবসায় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার যোগান সহজ ও নিশ্চিত করে অভাব পূরণে সহায়তা করে ।ব্যবসায়ের কারণেই আমাদের পক্ষে প্রতিনিয়ত হাজারো পণ্য ও সেবা হাতের নাগালের মধ্যে পাওয়া সম্ভব হয়। যেমন- একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজনীয় সকল উপকরণই ব্যবসায়ের কল্যাণেই সহজে কিনে প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
২. বেকার সমস্যার সমাধান
ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের আগ্রগতির ফলে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ ঘটে। এতে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হয়। যেমন- গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র মানুষ ছোটো-খাটো নানান ব্যবসায়ে নিয়োজিত থেকে জীবন ধারণ করছে। গার্মেন্টস শিল্পে যে ব্যাপক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে তা বেকার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখেছে।
৩. শিল্পকলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা
ব্যবসায়ের প্রয়োজনেই দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলার বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীদের বইগুলোর প্রচ্ছদের দিকে তাকালেই দেখা যাবে নানান রংয়ের সুন্দর ডিজাইনের শিল্পকলার স্বাক্ষর রয়েছে। টিভি অনুষ্ঠানে ও বিজ্ঞাপনে নতুনত্ব, সাইনবোর্ড, ব্যানারসহ সবকিছুর মধ্যেই শিল্পকলার উন্নয়নের প্রকাশ লক্ষ্যণীয়। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান উন্নত হয়।
৪. সম্পর্কের উন্নয়ন
ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে দেশের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেনা-বেচার মধ্য দিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটা সুসম্পর্কের আবহ সৃষ্টি হয়। গ্রামের একটা চায়ের দোকান মানুষের মিলন কেন্দ্র হয়। শহরের ভালো বইয়ের দোকানে সন্ধ্যায় শিক্ষকদের আগমনে একটা আড্ডার পরিবেশ জন্ম নেয়। এভাবে ব্যবসায় মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে সমাজকে এগিয়ে যেতে সহায়তা কর। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।