প্রত্যক্ষ সেবা
গ্রাহকদের প্রয়োজন পূরণে সমর্থ এমন কোনো কাজ, সুবিধা বা তৃপ্তিকে প্রত্যক্ষ সেবা বলে। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে এরূপ কাজ বা সুবিধাকে বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করা নিঃসন্দেহে ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তা যেভাবে দৃশ্যমান থাকে এবং মালিকানা হস্তান্তরিত হয় সেবার বেলায় তাকে সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবা পেয়েই উপকৃত, তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট হয়। পণ্যের মতো সে এটাকে অন্যত্র নিয়ে বিক্রয় করতে বা মালিকানা হস্তান্তর করতে পারে না।
প্রত্যক্ষ সেবার উদাহরণ
১. একজন ছাত্র ২০ টাকা দিয়ে বাসে চড়ে কলেজে এলো। সে ২০ টাকার বিনিময়ে উপকার বা সুবিধা লাভ করছে। এক্ষেত্রে বাস কোম্পানি সেবা বিক্রেতা।
২. একজন রোগী অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হলো। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কি দিয়েছে? উত্তর হলো সেবা।
এভাবে মোবাইল, ইন্টারনেট, হোটেল, বিমান, রেলওয়ে, ব্যাংক, বিমা, পর্যটনসহ হাজারো কোম্পানি সেবা বিক্রয় করে চলেছে। আর মানুষের মাথাপিছু আয় যত বাড়ছে সেবা ক্রয়-বিক্রয় ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য কি? বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
প্রত্যক্ষ সেবার বৈশিষ্ট্য
পণ্যের যেমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে তেমনি প্রত্যক্ষ সেবা ব্যবসায়েরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়। নিম্নে বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. কাজ বা সুবিধা
প্রত্যক্ষ সেবা হলো কোনো কাজ, সুবিধা বা তৃপ্তি যা এর বিক্রেতা ক্রেতাদের নিকট বিক্রয়ের জন্য উপস্থঅপন করে। এরূপ সুবিধা বা কাজ প্রদানের জন্য বিক্রেতাকে মূলধনসহ ব্যবসায়ের সকল উপকরণ জোগাড় করতে হয়। একটা ক্লিনিক, এটর্নী ফার্ম, অডিট ফার্ম, সিনেমা হল, বাস কোম্পানি, ধোপা, বড়-ছোট সবাই কাজ, সুবিধা বা তৃপ্তি বিক্রয় করে মূলত মুনাফা অর্জনের প্রয়াস চালায়।
২. অস্পর্শনীয় প্রকৃতি
সেবা অনুভব করা যায়। এর দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হয়। গ্রাহক তৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু বিক্রয়ের পূর্বে এর স্বাদ, সুবিধা, তৃপ্তি ইত্যাদি স্পর্শ বা ছুঁয়ে দেখে-শুনে নেয়ার সুযোগ কম থাকে। যেমন- একজন শিক্ষার্থী দোকানে যেয়ে খাতা-কলম কিনে বাসায় নিয়ে মাকে দেখাতে পারে। এটা পণ্য ও দৃশ্যমান বন্তু। কিন্তু ২০ টাকা খরচ করে রিক্সায় চড়ে এসেছে এটা বাসায় গিয়ে স্পর্শনীয় বা দৃশ্যমানভাবে উপস্থাপন করা শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব।
৩. মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য নয়
সেবা স্পর্শনীয় ও বাস্তব কোনো বস্তু না হওয়ায় এর মালিকানা হস্তান্তরের প্রশ্ন আসে না। একজন ব্যক্তি ম্যাসাজিং সেন্টার (শরীর মালিশ করা) এ যেয়ে সেবা নিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে আসলো। এক্ষেত্রে সেন্টারের কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা বিক্রয় হয়ে যায়নি। অর্থাৎ সে তার দক্ষতা ও সেবা আরও অন্য গ্রাহকদেরকেও প্রদান করবে। আবার যে ব্যক্তিটি সেবা নিলো এতে তার প্রশান্তি এসেছে ঠিক কিন্তু সে তার প্রশান্তি অন্যের কাছে বিক্রয় করতে পারবে না।
৪. মজুতযোগ্য নয়
সেবা মজুতযোগ্য নয়। অর্থাৎ সেবা যখনই উৎপাদন হয় তখনই তা ভোগের প্রশ্ন আসে। ভিন্নভাবে বললে বলা যায়, ভোক্তা যখন ভোগের জন্য আসে তখনই সেবা উৎপন্ন বা প্রদানের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- একজন নামকরা শিল্পী গান গাইবে এজন্য টিকেট বিক্রয় হলো। যে স্বশরীরে গান উপভোগ করতে চায় তাকে গানের সময় সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। আবার বিউটি পার্লারে কর্মীরা সকল ব্যবস্থা নিয়ে বসে আছে। যখনই একজন মেয়ে গেলা তখনই সেবা দেয়ার প্রশ্ন আসছে।
৫. গ্রাহকদের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান
ভোগের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরেও পণ্য উৎপন্ন হতে পারে কিন্তু সেবার বেলায় তা সম্ভব নয়। তাই গ্রাহকদের পাশেই সেবাকেন্দ্রসমূহ গড়ে ওঠে। যানবাহন মেরামত কেন্দ্র বাসস্ট্যান্ড বা এর আশেপাশে গড়ে উঠতে দেখা যায়। বিমান বন্দরের পাশে দামি হোটেল ও রেল স্টেশনের পাশে কমমূল্যের হোটেল এ কারণেই গড়ে তোলা হয়। ব্যবসায় কেন্দ্রে ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠান এ কারণেই গড়ে ওঠে।