সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost)
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ উৎপাদন ব্যয়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণের জন্য সুযোগ ব্যয় ধারণা ব্যবহার করেন। সমাজে প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয়। সম্পদ তথা উৎপাদনের উপকরণ দুষ্প্রাপ্য। তাই মানুষ তার পছন্দের সবকিছু একসাথে উৎপাদন করতে পারে না। কিন্তু সম্পদের বিকল্প ব্যবহার করা যায়।
একটি সম্পদ দ্বারা দুই বা ততোধিক দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করা সম্ভব। যেমন- একটি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু জমিতে যেকোনো একটি ফসল উৎপাদন করলে অন্য আরেকটি ফসল উৎপাদন করা যায় না। ফলে একটি দ্রব্য উৎপাদনের জন্য অন্য দ্রব্যের উৎপাদন পরিহার করতে হয়। সাধারণভাবে বলা যায়, একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত উৎপাদন পাওয়ার জন্য অপর দ্রব্যের উৎপাদন যতটুকু ছেড়ে দিতে হয়, সেই ছেড়ে দেওয়া উৎপাদনের পরিমাণ হলো সুযোগ ব্যয়।
আরও পড়ুন: প্রত্যক্ষ সেবা কেন সংরক্ষণ অযোগ্য? ব্যাখ্যা কর।
অন্যভাবে বলা যায়, একটি কাজের জন্য যে সর্বোত্তম বিকল্পটি হারাতে হয়, সেই হারানোর পরিমাণই হলো নির্দিষ্ট কাজের সুযোগ ব্যয় ।
১৯৩৯ সালে প্রকাশিত “Economics” নামক গ্রন্থে অর্থনীতিবিদ ফ্রেডারিক বেনহাম বলেন, “কোনো জিনিসের সুযোগ ব্যয় হচ্ছে পরবর্তী সর্বোত্তম বিকল্প দ্রব্যটির উৎপাদন পরিহারের ব্যয়।”
উদাহরণ ১
একজন কৃষক তার একখণ্ড জমিতে গম উৎপাদনের জন্য ধান উৎপাদন ত্যাগ করল। এখানে গম উৎপাদনের সুযোগ ব্যয় হল ধান উৎপাদন।
উদাহরণ ২
একজন ছাত্র বাংলা বই না কিনে ইংরেজি বই ক্রয় করল। ফলে ইংরেজি বই ক্রয়ের সুযোগ ব্যয় হলো বাংলা বই ক্রয় না করা।
উদাহরণ ৩
একজন শ্রমিক পাটকল অথবা চিনিকলে কাজ করতে পারে। সে যদি পাটকলে কাজ করে তবে চিনিকলের মজুরি হারাবে। এক্ষেত্রে পাটকলের সুযোগ ব্যয় হলো চিনিকলের মজুরি না পাওয়া।