বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১২৭ নং আদেশে বাংলাদেশে অবস্থিত “স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান”-এর সকল সম্পদ ও দায়দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত হয়। বাংলাদেশের মুদ্রা ও ব্যাংকব্যবস্থাকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে ১ জন গভর্নর, ২ জন ডেপুটি গভর্নর ও ৮ জন পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিচালনা বোর্ড দ্বারা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। এই মূলধন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়াও ঢাকায় দুটি শাখাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও রংপুরে ১ টি করে মোট ১০ টি শাখা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যাবলি
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশে অন্যান্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যাবলি ভিন্নতর এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-
১। মুদ্রা ও নোট প্রচলন
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রা ও নোট প্রচলনের একচ্ছত্র অধিকারী। ধাতব মুদ্রা ও সরকার প্রচলিত ১ টাকা, ২ টাকার নোট ছাড়া সকল প্রকার কাগজি মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংক ইস্যু করে থাকে।
২। অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে আমানতের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে।
৩। সরকারের ব্যাংক
সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক বিনাসুদে গচ্ছিত রাখে ও প্রয়োজনে সরকারকে ঋণ দেয়।
৪। ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল
বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ভাঙিয়ে অথবা অপরাপর জামানত রেখে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণ প্রদান করে থাকে।
আরও পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কি? অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা ও গুরুত্ব আলোচনা কর
৫। মুদ্রা বাজার পরিচালনা
শক্তিশালী মুদ্রা বাজার গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর থাকে।
৬। বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষায় বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনীয়।
৭। ঋণ নিয়ন্ত্রণ
ঋণের পরিমাণ কাম্য স্তরে রাখা অর্থনীতির জন্য আবশ্যক। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সম্প্রসারণ ও সংকোচন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
৮। তহবিল সংরক্ষণ
বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রের পক্ষে তহবিল সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করে থাকে।
৯। নিকাশ ঘর
বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকাশ ঘর হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে পাস্পরিক দেনা-পাওনা নিকাশ ঘরের সাহায্যে নিষ্পত্তি করে থাকে।
১০। তালিকাভুক্তকরণ
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ব্যাংক ও শাখা প্রতিষ্ঠা করতে অনুমতি প্রদান করে। তালিকাভুক্তির সমস্ত শর্ত পালিত হচ্ছে কিনা তাও তদারকি করে।
১১। নিরীক্ষণ
বাংলাদেশ ব্যাংক নিরীক্ষণের কাজও করে থাকে। অন্যান্য ব্যাংক হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করছে কিনা তা নিরীক্ষণ করে।
১২। গবেষণা ও প্রকাশনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গবেষণা বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগ গবেষণা করে ও গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে।
১৩। প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশ ব্যাংক দক্ষ, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে “Institute of Bankers” প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে।
১৪। উন্নয়নমূলক কাজ
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে দেশের সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক অবদান রাখে।
১৫। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যে ২০০৩ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে।
উপরিউক্ত কাজসমূহ ব্যতীত বাজেট প্রণয়নে সরকারি সহায়তা, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তা, আমদানি-রপ্তানি নীতি প্রণয়ন, মুদ্রা ও ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করা সহ নানাবিধ কার্যাবলি বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পাদন করে থাকে।