মূলধন গঠন
মূলধনের পরিমাণ সময় ব্যবধানে পরিবর্তন হয়। আজ একটি দেশে মূলধন যে পরিমাণে আছে কিছুদিন পর এর পরিবর্তন হতে পারে। মূলধন গঠন বা সংগ্রহ বলতে সময় ব্যবধানে এর মজুতের পরিমাণ বৃদ্ধি বুঝায়।
মূলধন গঠনের প্রক্রিয়া আয় সৃষ্টির প্রক্রিয়া থেকে শুরু হয়। মূলধন চলতি আয়ের একটি অংশ হয়। চলতি আয় প্রদত্ত অবস্থায় এর একটি অংশ ভোগ্য দ্রব্য ও সেবা ক্রয়ের জন্য ব্যবহার হয়। বাকী অংশ সঞ্চয় হতে পারে। এই সঞ্চয় উৎপাদনশীল সরঞ্জাম যেমন- স্টিল, সিমেন্ট, সার, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ব্যবহার হতে পারে। এই ধরনের দ্রব্য বিনিয়োগ নির্দেশ করে। এরূপ বিনিয়োগ সময় ব্যবধানে নুতন মূলধনের স্টক বা মজুত গড়ে তোলে। এভাবে বিনিয়োগের ফলে যে ভবিষ্যৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাকে মূলধন গঠনের প্রক্রিয়া বলা যায়। প্রতীকের সাহায্যে মূলঘন গঠনের প্রক্রিয়া নিম্নে দেখানো হলো-
প্রাথমিক আয়(Y1)→ ভোগ ব্যয়(C)→ সঞ্চয়(S)→ বিনিয়োগ(I)→ মূলধন গঠন ←বর্ধিত আয়(Y2)
সুতরাং দেখা যায় মূলধন গঠন বলতে বস্তুগত মূলধন ও মানবীয় মূলধন বুঝায়। অধ্যাপক এইচ. সিঙ্গার বলেন, মূলধন গঠন বলতে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি দ্রব্যের উৎপাদন যেমন বুঝায় তেমনি শিক্ষার মান বৃদ্ধি, জাতীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি ইত্যাদি বুঝায়।
আরও পড়ুন: ছায়ামূল্য কি? ছায়ামূল্য পরিমাপের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর।
যে উপায়ে একটি দেশ মূলধন গঠন করে তা অন্য দেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে। যেমন- সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার স্থির করতেন কি হারে মূলধন গঠন করা প্রয়োজন। পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে মূলধন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রধানত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।
মূলধন গঠনের উপায়
বিস্তৃতভাবে বিবেচনা করলে মূলধন গঠনের তিনটি স্তর আছে অর্থাৎ মূলধন তিনভাবে গঠন করা যায়। এগুলো হলো-
ক. সঞ্চয় স্তর
এই স্তরে চলতি ভোগ হ্রাস করে সম্পদ বাঁচানো যায় যা মূলধন গঠনের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব।
খ. সঞ্চয় সংগ্রহের স্তর
এই পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে সঞ্চয় সংগ্রহের পর তা একত্রিত করে বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেয়া যায়।
গ. বিনিয়োগ স্তর
এই স্তরে সংগৃহীত সম্পদ প্রকৃতপক্ষে মূলধন দ্রব্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ Moses Abramovitz তার Capital Formation and Economic Growth বইতে মূলধন গঠনের জন্য উপরোক্ত উপায়ের বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদান করেন।