মুক্ত বাজার অর্থনীতি
সাধারণ অর্থে যে অর্থনীতিতে বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে অপরিকল্পিত বা মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলা হয়। কতিপয় অর্থনীতিবিদ এরূপ বাজারকে closed eyes বলে অভিহিত করেন।
প্রচলিত অর্থে পুুঁজিবাদী অর্থনীতি বাজার অর্থনীতি নামে পরিচিত। এরূপ অর্থনীতির কথা প্রচ্ছন্নভাবে এডাম স্মীথ এর “অদৃশ্য হাত” ধারণার মধ্যে নিহিত আছে। আধুনিককালে মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলতে এমন ব্যবস্থা বুঝায় যার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে-
- উদ্যোক্তারা মুনাফা সর্বোচ্চকরণের লক্ষ্যে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন কাজ পরিচালনা করে।
- ভোক্তারা উপযোগ সর্বোচ্চকরণকে সামনে রেখে দ্রব্য ও সেবা ক্রয় এবং ভোগ করে।
- পণ্য এবং উপকরণের মূল্য বাজার চাহিদা ও যোগান দ্বারা নির্ধারিত হয়। চাহিদা বা যোগা অথবা উভয়ের পরিবর্তন হলে মূল্যের পরিবর্তন হয়।
- বাজার প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক কোন হস্তক্ষেপ নাই। অর্থাৎ উৎপাদন এবং বণ্টন ক্ষেত্রে সরকারী কোন নিয়ন্ত্রণ নাই বা থাকলেও ন্যূনতম যাতে বাজার ব্যবস্থায় কোন অভারসাম্য সৃষ্টি না হয়।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কি? অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুবিধা
মুক্ত বাজার অর্থনীতির যেসকল সুবিধা রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. স্বয়ংক্রিয় দিক নির্দেশনা
মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যুক্তিশীলভাবে পরিচালনার জন্য স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি হিসাবে কাজ করে। ফলে অর্থনীতিতে উৎপাদন, বিনিয়োগ, সঞ্চয় এবং অপরাপর উৎপাদনশীল কর্মকান্ড আপনা-আপনি পরিচালিত হতে পারে। এর ফলে সম্পদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন খাত এবং প্রকল্পে এর বণ্টন সুষ্ঠুভাবে হতে পারে; উৎপাদন এবং মুনাফা সর্বোচ্চ হতে পারে।
২. দক্ষতার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদক এবং ভোক্তারা নিজ নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে উৎপাদন এবং ভোগ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দক্ষতা সহজে অর্জন করা যায়। কারণ বাজার মূল্যের ভিত্তিতে উপকরণের বণ্টন এবং উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় এরূপ দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হয়।
৩. অর্থনৈতিক প্ররোচনা
বাজার অর্থনীতি কর্মোদ্যোগ, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, মুনাফা অর্জন, উপযোগ সর্বোচ্চকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে প্ররোচনা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে এরূপ অর্থনীতিতে কর্মোদ্যম, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হতে পারে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক।
৪. ভোক্তার স্বাধীনতা
বাজার অর্থনীতি দ্রব্য ও সেবা ভোগের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। কারণ বাজার থেকে তাদের পক্ষে পছন্দসই দ্রব্য সেবা ইচ্ছামত ক্রয় এবং ভোগ করা সম্ভব। এজন্য অনেক সময় বলা হয় বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তারাই সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল নিয়ন্তা। কারণ ভোক্তাদের পছন্দের উপর নির্ভর করে উৎপাদকদেরকে উৎপাদন পরিকল্পনা নিতে হয়। কোন উৎপাদক এ ব্যাপারে ব্যর্থ হলে সে লোকসান খেতে বাধ্য; উৎপাদন ক্ষেত্রে তার টিকে থাকা সম্ভব নয়।
৫. দ্রব্য ও সেবার উৎকর্ষতা
বাজার অর্থনীতিতে দ্রব্য ও সেবার চাহিদার উপর মূল্য নির্ভর করে। চাহিদা আবার ভোক্তাদের রুচি এবং পছন্দ দ্বারা প্রভাবিত হয় যা আবার দ্রব্য ও সেবার উৎকর্ষতার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যে দ্রব্য ও সেবার উৎকর্ষতা বেশি তার চাহিদা বেশি থাকে। ফলে উৎপাদকরা নিজেদের স্বার্থেই দ্রব্য ও সেবার উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়।
৬. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক
অধ্যাপক H. G. Johnson এর মতে, বাজার অর্থনীতি নিম্নোক্ত উপায়ে কোন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে-
- বাজার অর্থনীতি ভোক্তাদের আয় বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে। অর্থাৎ কর্মোদ্যোগ বাড়ানোর ব্যাপারে প্ররোচিত করে।
- নতুন নতুন দ্রব্যের প্রবর্তন এবং কৌশলগত উন্নয়নের সুফল ব্যবহারে বাজার অর্থনীতি উদ্ভাবনকারীদেরকে সহায়তা করে।
- মানবীয় এবং বস্তুগত মূলধন গঠনে প্ররোচনা সৃষ্টি করে বাজার অর্থনীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে সহায়তা করতে পারে।