শ্রমিক সংঘের কার্যাবলী
প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-কর্মীদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক সৃষ্টি ও সংরক্ষণে সহায়তা দান করা শ্রমিক সংঘের গুরুত্বপূর্ণ কার্য। কর্মীদের সার্বিক কল্যাণসাধনের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিয়মিত দরকষাকষির মাধ্যমে ন্যায্য পাওনা আদায় এবং প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ বজায় রাখতে শ্রমিক সংঘ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। শ্রমিক সংঘের কার্যাবলী গুলোকে প্রধানত চারভাগে বিভক্ত করা যায়। নিম্নে শ্রমিক সংঘের কার্যাবলী গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ক. সাংগঠনিক ও প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কার্যাবলী
শ্রমিক সংঘের কার্যাবলীগুলোর মধ্যে সংগঠন সংক্রান্ত নানাবিধ কার্যাবলি সম্পাদন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য। এগুলো হলো-
১. যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সার্বিক কার্যকর ভূমিকা পালন।
২. প্রতিষ্ঠানের নীতি, আদর্শ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সহায়তা দান ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করা।
৩. প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু কার্য পরিবেশ বজায় রাখা এবং কারখানা, আলো-বাতাস, উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপনে সহায়তা দান।
৪. প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দান।
৫. প্রতিষ্ঠানে অবিরাম উৎপাদন সচল রাখা এবং পণ্যমান ও উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক অবদান নিশ্চিত করা।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা দান।
৭. ব্যবস্থাপনার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা ও গঠনমূলক পরামর্শ দান।
৮. শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং মধুর শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দান।
৯. সংঘের নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ভিত্তি সৃদৃঢ়করণ।
১০. শ্রমিকদর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
১১. অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে শ্রমিক ও সংগঠনকে বিরত রাখা এবং অবৈধ কর্মসূচি গ্রহণ না করা।
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংঘ কি? শ্রমিক সংঘের গুরুত্ব আলোচনা কর
খ. অর্থনৈতিক কার্যাবলি
প্রতিষ্ঠানের ও সংঘের সদস্যদের আর্থিক উন্নতি বিধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার উদ্যোগ ও সহায়তা দান শ্রমিক সংঘের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রধান প্রধান আর্থিক কার্যাবলীসমূহ নিম্নরূপ-
১. ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে শ্রমিক কর্মীদের জন্য উচ্চ ও ন্যায্য এবং উপযুক্ত মজুরি ও ভাতাদি আদায়ের ব্যবস্থা করা।
২. কর্মীদের চাকরির স্থায়িত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।
৩. শ্রমিকদের পদোন্নতি ও অন্যান্য উপায়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা।
৪. সংঘের আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তহবিল গঠন করা।
৫. অর্থিক নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের রক্ষার ব্যবস্থা করা ও আর্থিক আয় বৃদ্ধি করা।
৬. শ্রমিকদের উন্নত জীবনযাত্রার মান অর্জনে প্রচেষ্টা চালানো।
৭. শ্রমিকদের জীবন বীমা, গোষ্ঠী বীমা ইত্যাদির ব্যবস্থাকরণ।
গ. সামাজিক ও কল্যাণমূলক কার্যাবলি
প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের নানাবিধ সামাজিক ও কল্যাণমূলক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করা শ্রমিক সংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য। শ্রমিক সংঘের প্রধান প্রধান সামাজিক ও কল্যাণমূলক কার্যাবলিসমূহ নিম্নরূপ:
১. কর্মীদের চাকরির স্থায়িত্বসহ সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানে সহায়তা দান করা।
২. কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখতে সহায়তা দান।
৩. শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দান।
৪. প্রতিষ্ঠানে ক্যান্টিন, সুবিধা, সন্তান পালন কক্ষসহ বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত, পরিবহন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সুনিশ্চিত করা।
৫. কর্মীদের খেলাধুলা, পাঠাগার, বার্ষিক ভোজ, চিত্তবিনোদন ও আনন্দ উপভোগের সুযোগ সুনিশ্চিত করা।
৬. সামাজিক কার্যক্রমে শ্রমিকগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৭. সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে শ্রমিকদের অবদান রাখার ব্যবস্থা স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা।
৮. শ্রমিকদের অবদান সম্পর্কে সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যবস্থা করা।
ঘ. রাজনৈতিক কার্যাবলি
শ্রমিক সংঘের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক কার্যাবলীসমূহ নিম্নরূপ:
১. প্রতিষ্ঠানের শিল্পীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও এর চর্চা অব্যাহত রাখা।
২. শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে সহযোগিতা দান করে জনমত সৃষ্টিতে সাহায্য করা।
৩. জাতীয় কার্যক্রমে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দান করা।
৪. দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতার প্রভাব ইত্যাদি থেকে শ্রমিকদের বিরত রেখে জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতিতে অবদান রাখা।
৫. দেশের ক্ষতিকর রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শ্রমিক ও শ্রমিক সংঘকে মুক্ত রাখার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।
৬. দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে শ্রমিকদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টা চালানো।