মানসিক চাপ কি?
মানসিক চাপ হচ্ছে কর্মসংক্রান্ত ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট কর্মীর মানসিক ও শারীরিক পীড়ন সৃষ্টিকারী উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ক্রোধ ও হতাশা।
আরও বিস্তারিতভাবে বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের কার্যসূচি, কাজের প্রকৃতি, কার্যধারা, উচ্চ আওয়াজ, অব্যাহত অতিরিক্ত কাজ, প্রাপ্তির জন্য চাহিদা এবং প্রতিবন্ধকতা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে কর্মীর উপর শারীরিক ও মানসিক পীড়ন সৃষ্টি করে কর্মীর মানসিক উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা, ক্রোধ ইত্যাদি বাড়িয়ে তোলে তাকে মানসিক চাপ বা পীড়ন বলে।
মানিসিক চাপ ইতিবাচক বা নেতিবাচক উপায়ে প্রতীয়মান হতে পারে। ইতিবাচক চাপ হচ্ছে যখন কেউ কোনকিছু লাভ করার সুযোগ পায় এবং নেতিবাচক চাপ হচ্ছে যখন কোনকিছুর চাহিদা জন্মায় এবং প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। বাধা এবং চাহিদা সম্ভাব্য চাপের জন্ম দেয়। যখন উক্ত বাধা ও চাহিদা ফলাফলের অনিশ্চয়তার সাথে যুক্ত হয় এবং ফলাফলের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে, তখন সম্ভাব্য চাপ প্রকৃত চাপে রূপ নেয়।
আরও পড়ুন: প্রেষণা কি? প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
মানসিক চাপের লক্ষণ
মানসিক চাপের লক্ষণসমূহকে প্রধানত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা-
১. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বা শারীরিক লক্ষণ,
২. মনস্তাত্ত্বিক লক্ষণ এবং
৩. আচরণিক বা আচরণগত লক্ষণ।
নিম্নে এসব মানসিক চাপের লক্ষণসমূহ আলোচিত হলো-
১. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বা শারীরিক লক্ষণসমূহ
মানসিক চাপের কারণে কর্মীর ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ কিছু কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে, যা হয়থ সহজে চোখে ধরা যায় না। মানসিক চাপের কারণে কর্মীর মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যেদয়। যেমন- কর্মীর হার্ট বা হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বুক ব্যথা, গ্রাস্ট্রিক ও আলসার ইত্যাদি নানা রোগ দেখা দিতে পারে, যা দ্রুত রোগ নির্ণয় করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
২. মনস্তাত্ত্বিক লক্ষণসমূহ
মানসিক চাপের ফলে কার্যসম্পাদনে মারাত্মক অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে, যা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এরূপ লক্ষণসমূহের মধ্যে কর্মীর মানসিক পীড়ন, উদ্বিগ্নতা, উত্তেজনা, ক্রোধ, বিষণ্ণতা, কাজে বিরক্তিভাব ও গড়িমসি করা ইত্যাদি প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে কর্মীর মধ্যে হতাশার ভাব সৃষ্টি হয় এবং কার্যক্ষেত্রে বিরূপ ও আক্রমণাত্কম আচরণ প্রদর্শন করে। এসবের প্রভাবে কর্মীর উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
৩. আচরণিক বা আচরণগত লক্ষণসমূহ
মানসিক চাপের ফলে কর্মীর আচরণগত পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক পরিমাণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আচরণিক লক্ষণ প্রকাশের ফলে কর্মীর উৎপাদনশীলতায় বিরূপ পরিবর্তন আনে, কর্মে অনুপস্থিতি ও কর্ম পরিত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে, ধূপান ও মদ্যপান ইত্যাদির মাত্রা বেড়ে যায়। আচরণগত পরিবর্তন কর্মীর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করে। খাদ্যে অরুচি আনয়ন করে এবং নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটায়, দ্রুত ও অপ্রয়োজনীয় এবং অধিক কথা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, কর্মস্পৃহা হ্রাস করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বাধার সম্মুখীন হয়।