Home » প্রত্যাশা তত্ত্ব আলোচনা কর
প্রত্যাশা তত্ত্ব

প্রত্যাশা তত্ত্ব আলোচনা কর

by TRI

ভ্রূম এর প্রত্যাশা তত্ত্ব

প্রত্যাশা তত্ত্ব হচ্ছে প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি বিশেষকে এমনভাবে কার্যে পরিচালিত করে যাতে প্রদত্ত ফলাফলের অনুসরণে কার্য সাধন করা হয় এবং ব্যক্তিকে ঐ ফলাফল অর্জনে আকর্ষিত করে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Victor H. Vroom এ তত্ত্বের প্রবক্তা। ভ্রূম তাঁর তত্ত্বে বলেন, প্রেষণা দুটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। এর একটি হলো কর্মীরা কোন জিনিস কতটুকু পরিমাণে পেতে চায় এবং অপরটি হলো উক্ত জিনিসের কতটা সে পেতে পারে। এ তত্ত্ব অনুযায়ী কর্মী কোন লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যাশায় কাজ করে এবং প্রণোদিত হয়। যে কর্মীর নিকট উদ্দেশ্য যত বেশি মূল্যবান হবে সে তত বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কার্যে মনোনিবেশ করবে।

ভ্রুম এর মতে প্রেষণা তিনটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটি সূত্রাকারে নিম্নরূপে তা প্রদর্শন করা যায়।

M = (E×I×V)

এখানে,

M = Motivation বা প্রেষণা;

E = Expectancy বা প্রত্যাশা;

I = Instrumentality বা সহায়তা;

V = Valency বা যোগ্যতা আকর্ষিত করা।

এ তত্ত্ব অনুযায়ী কর্মীর কাজের প্রত্যাশা নির্ভর করে তার ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য অর্জনে তার অনুভূতি শক্তির উপর। প্রত্যাশা তত্ত্ব তিনটি ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। ধারণা তিনটি হচ্ছে-

১। আকর্ষণীয়তা

কাজের উপর ব্যক্তি যে সম্ভাব্য ফলাফল বা পুরস্কার অর্জন করতে পারে তার গুরুত্ব হচ্ছে আকর্ষণীয়তা। এটি ব্যক্তির অতৃপ্ত চাহিদাকে বিবেচনায় আনে। ভ্রুম এটিকে Valence হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, এটি হচ্ছে ব্যক্তির আবেগের ইতিবাচক মানসিক অবস্থা। কোন কিছু পাওয়ার প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ হচ্ছে ইতিবাচক আকর্ষণ এবং তা অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক প্রেষণা সৃষ্টি করে।

২. কার্যসম্পাদন ও পুরস্কারের যোগসূত্র

নির্দিষ্ট পর্যায়ের কার্যসম্পাদন প্রত্যেক কার্যফল অর্জনের প্রচেষ্টাকে পরিচালিত করে ব্যক্তির মধ্যে এরূপ বিশ্বাস বা অনুভূতির মাত্রা হচ্ছে কার্যসম্পাদন ও পুরস্কারের সংযুক্তি বা সম্পর্ক। ভ্রূপ এটিকে Expectancy হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ব্যক্তির কার্য আচরণ দ্বারা নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন বা প্রত্যাশিত কার্যফল অর্জন তার বিশ্বাস বা আস্থার উপর অনেকটা নির্ভর করে।

আরও পড়ুন:  প্রেষণা কি? প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

৩. প্রচেষ্টা ও কার্যসম্পাদন যোগসূত্র

ব্যক্তির প্রচেষ্টা প্রয়োগের শক্তি তাকে কার্যসম্পাদনে প্ররোচিত করে- এরূপ অনুভূতির সম্ভাবনা হচ্ছে প্রচেষ্টা ও কার্যসম্পাদনের সংযুক্তি। ভ্রূম এটিকে শক্তি বা Force হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, ব্যক্তির অনুভূতি ও প্রত্যাশার সমন্বয়ে ইচ্ছাশক্তির সৃষ্টি হয়।

নিম্নের চিত্রে প্রত্যাশা দেখানো হলো-

প্রত্যাশা তত্ত্বএখানে,

A = প্রচেষ্টা-কার্যসম্পাদন যোগসূত্র

B = কার্যসম্পাদন-পুরস্কার যোগসূত্র

C = আকর্ষিতকরণ

প্রত্যাশা তত্ত্বের অনুমিতিসমূহ

১. প্রত্যাশা তত্ত্ব বেতন-ভাতা বা পুরস্কারের উপর গুরুত্ব দেয়। সুতরাং কর্মীর চাহিদার ভিত্তিতে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা উচিত।

২. পুরস্কারের আকর্ষণীয়তা ও মূল্য সম্পর্কে কর্মীর ধারণা থাকা আবশ্যক।

৩. প্রত্যাশা তত্ত্ব কর্মীর প্রত্যাশিত আচরণের উপর গুরুত্ব দেয়।

৪. প্রত্যাশার সাথে তত্ত্বটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

প্রত্যাশা তত্ত্বের সমালোচনা

১. প্রত্যাশা তত্ত্ব মানুষ সম্পর্কে ধারণা পোষণ করে যে তাদের প্রেষণা একটি যৌক্তিক ভাবনাপূর্ণ প্রক্রিয়া। ফলাফল সাজানো এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ সম্ভাবনা এ তত্ত্বের মূলভিত্তি যা কেবল ব্যক্তির জানার বিষয়, সেখানে ব্যক্তির আচরণ সঠিকভাবে অনুমান করা দুরাশা মাত্র।

২. এ তত্ত্বের ধারণাগত অস্পষ্টতা এবং বাস্তবক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রয়োগে জটিলতা রয়েছে।

৩. অনেকের মতে এ তত্ত্ব কার্যসন্তুষ্টিকে কেবল সুখানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ কেবল সুখ লাভের জন্য কাজ করে না।

Related Posts