Home » প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

by TRI

প্রেষণা

প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে কর্মীদের কাজে উদ্দীপনা জাগানো, উৎসাহিত, প্ররোচিত ও অনুপ্রাণিত করার কৌশলকে প্রেষণা বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের নিক ট থেকে কাজ আদায় করে নিতে হলে অবশ্যই তাদের মাঝে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। কেননা কাজের প্রতি আগ্রহ বা ইচ্ছা না থাকলে কোন কর্মীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যতই থাকুক না কেন তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে যথাযথ প্রেষণা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কর্মীদের কাজে ইচ্ছা ও আগ্রহ সৃষ্টি করতে হয়।

প্রেষণার সংজ্ঞা

প্রেষণার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Milkovich ও Boudreau বলেন, “Motivation is the drive that energizes, sustains and directs a person’s behavior.” অর্থাৎ, প্রেষণা বলতে এরূপ তাড়না সৃষ্টিকে বুঝায় যা কোন ব্যক্তির আচরণকে প্রবলভাবে সক্রিয় করে, টিকে থাকার সামর্থ্য দান করে এবং দিকনির্দেশনা দেয়।

Prof. R. W. Griffin বলেন, “Motivation is the set of forces that causes people to behave in certain ways.” অর্থাৎ, প্রেষণা হচ্ছে এরূপ শক্তি প্রতিষ্ঠা যার কারণে মানুষ একটি সুনির্দিষ্ট পন্থায় আচরণ প্রদর্শন করে।

আরও পড়ুন:  প্রশিক্ষণ কি? প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কি?

প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রেষণা একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বিধায় প্রেষণা মূলত মানবীয় উপাদানের সাথে সম্পৃক্ত। মানব সম্পদ তথা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীকে দিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাজ আদায় করিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কর্মীর মাঝে কাজের প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নিম্নে প্রেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-

১. মানব সম্পদের কাম্য ব্যবহার

মানব সম্পদের কাম্য ব্যবহারের উপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রেষণা কর্মীদেরকে কাজে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এতে কর্মীদের কার্যদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

২. অন্যান্য উপকরণের সর্বোত্তম ব্যবহার

উৎপাদনের যেসব উপকরণ রয়েছে তার মধ্যে মানব শক্তির ভূমিকা সর্বাধিক। কেননা মানব সম্পদই উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনের পথে পরিচালিত করে। এতে বস্তুগত উপাদানের কাম্য ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হয়। আর এটি সম্ভব হয় কর্মীদেরকে উপযুক্ত প্রেষণাদানের মাধ্যমে।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধি

কর্মীদের কার্যদক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে। প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদেরকে বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করা হয়। এতে কর্মীরা নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনে অধিকতর সচেষ্ট হয়। ফলে তাদের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৪. কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদের অভাব অভিযোগ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটানো হয়। এতে কর্মীদের মাঝে কাজের প্রতি অধিক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। 

৫. উৎপাদন বৃদ্ধি

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, প্রেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন উপায় উপকরণের কাম্য ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হয়। এতে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৬. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস

প্রত্যেক শ্রমিক তার শ্রমের বিনিময়ে উপযুক্ত ও ন্যায্য মজুরি প্রত্যাশা করে। এক্ষেত্রে প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদের বিভিন্ন আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করা হয়। এতে কর্মীরা কাজের প্রতি আগ্রহী হয় এবং শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস পায়।

৭. অপচয় হ্রাস

প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদের কাজের প্রতি অধিক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা হয়। এতে শ্রম ঘণ্টার অপচয় অনেকাংশে হ্রাস হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য উপকরণের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ফলে বস্তুগত উপকরণের অপচয়ও হ্রাস পায়।

৮. মানবীয় সম্পর্কের উন্নয়ন

প্রেষণা মানবীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একসময় কর্মীকে মেশিন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে কর্মীদের মাঝে কাজের প্রতি অধিক আগ্রহের সৃষ্টি করে যা মানবীয় সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ সহায়তা করে।

৯. উত্তম শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক

প্রেষণা প্রতিষ্ঠানে শিল্প শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রেষণার জন্য প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাদি শ্রমিক-মালিক উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। অর্থাৎ, কর্মী ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে উত্তম সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

১০. মনোবল উন্নয়ন

প্রেষণা কর্মীর উচ্চ মনোবল সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রেষণাদানের ফলে কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীর অনুকূল মনোভাব গড়ে ‍উঠে। ফলে কর্মীরা উৎসাহের সাথে কাজে আত্মনিয়োগ করে।

Related Posts