প্রশিক্ষণ
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানব সম্পদ কর্তৃক সফলতার সাথে কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে যে সংগঠিত প্রক্রিয়ায় জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব ও আচরণের উন্নতি সাধন করা হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে। প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি সংগঠিত ধারাবাহিক শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কর্মীদের কারিগরি ও আচরণগত এবং কার্যসম্পাদনের দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
Gary Dessler এর মতে, “Training refers to the methods used to give new or present employees the skills they need to perform their jobs.” অর্থাৎ, নিজ পদের কার্যসম্পাদনের প্রয়োজনে নতুন অথবা বর্তমান কর্মীকে দক্ষতা প্রদানে ব্যবহৃত পদ্ধতিকে প্রশিক্ষণ বলে।
Prof. R. W. Griffin বলেন, “Training usually refers to teaching operational or technical employees how to do the job for which they were hired.” অর্থা, প্রশিক্ষণ সাধারণত কার্যগত ও প্রযুক্তিগত কর্মীদের কিভাবে কাজ করতে হবে তা শিক্ষা দেয় যার জন্য তাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছিল।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য
নতুন কর্মীকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণাদান ছাড়াও কার্যদক্ষতা অর্জন এবং পুরাতন কর্মীদের দক্ষ করে তোলা প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণ শুধু কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি করে না বরং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ সাধন ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অবদান রাখাও কর্মী প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। নিম্নে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণিত হলো-
১. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিচিতি
প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মী নিয়োগের পর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সার্বিক ধারণা দেয়া প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীগণ প্রতিষ্ঠানের আদর্শ, রীতি-নীতি, কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে এবং অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
২. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে কর্মীকে আধুনিকায়ন ও দক্ষ করে তোলা হয়। কার্য সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞানদান কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. পরিবর্তন সম্পর্কিত জ্ঞানদান
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিবর্তন এবং উৎপাদন সম্পর্কিত নতুন প্রযুক্তি ও সর্বশেষ ধ্যান-ধারণা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যক। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মীগণ যে কোন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
আরও পড়ুন: মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা কি? মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার উদ্দেশ্য আলোচনা কর
৪. কর্মীকে সক্রিয়করণ
পুরাতন কর্মীদের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে উঠে কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
৫. দুর্ঘটনা রোধ
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনকার্যে বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মীগণ যে কোন প্রকার দুর্ঘটনা রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে কর্মীদের নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পায়।
৬. অপচয় ও ক্ষয়-ক্ষতি রোধ
প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানে অপচয় ও ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস পায়। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ফলে কর্মীর কাজের সময় ও আর্থিক অপচয় হ্রাস পায়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় ও অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়।
৭. কার্যে অসন্তুষ্টি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগ হ্রাসকরণ
প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কার্যে অসন্তুষ্টি দূরীভূত হয় এবং কর্ম পরিত্যাগের হার হ্রাস পায়। কর্মীগণ কাজের প্রতি আত্মনিয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
৮. বুদ্ধিদীপ্ততার বিকাশ সাধন
কর্মী প্রশিক্ষণ কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানের বিকাশ সাধন করে। এর ফলে কৌশলগত কর্মসম্পাদনে কর্মীর বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়।
৯. কার্য পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান
প্রশিক্ষণের দ্বারা কর্মীকে নতুন নতুন কার্য পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উপযোগী করে তোলে।
১০. উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা
প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতে এবং ব্যবস্থাপনা ও কর্মীর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসানে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে সহজতর হয়।
১১. ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ধারণা
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মীদেরকে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেয়া হয়। ফলে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার দূরত্ব হ্রাস করে কর্মীদের কার্যকর নির্দেশনা প্রদান সহজ হয়। প্রশিক্ষিত কর্মীদের সাহায্যে সহজে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সহজে সংগঠন ও কাজে সুষ্ঠু সমন্বয় অর্জন করা যায়; কর্মীদের প্রেষিত করা সহজ হয়।
১২. সম্পদের কাম্য ব্যবহার
প্রশিক্ষণের দ্বারা কর্মীদের আধুনিক কর্মকৌশল সম্পর্কে জ্ঞানদান করা হয়। তদুপরি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নত কার্যপন্থা সম্পর্কে দক্ষতা লাভ করে প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করে।