ব্যবসায় ঝুঁকি
ভবিষ্যতে কোন প্রতিকূল ঘটনা ঘটার যে সম্ভাবনা তা যখন পরিমাপ করা যায় তখন তাকে ঝুঁকি বলে। সুতরাং একইভাবে ব্যবসায়িক কাজে ভবিষ্যতে লাভ-লোকসানের যে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান তা যখন পরিমাপ করা যায়, তখন তাকে ব্যবসায় ঝুঁকি বা Business Risk বলে।
বিস্তারিতভাবে বলেতে গেলে প্রযুক্তি পরিবর্তন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভোক্তার চাহিদা, রুচি, অভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়ে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং ঐ অনিশ্চয়তাকে যখন পরিমাপ করা হয় তখন তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলে।
P. V. Kulkarni এর মতে, “ব্যবসায় ঝুঁকি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিবিধ উপাদান থেকে সৃষ্ট যেমন- সম্পদের ক্ষতি, ব্যবসায় কার্যক্রমে ক্ষতি ইত্যাদি।”
ব্যবসায় ঝুঁকির কারণ
ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলতে বুঝায় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মূলধন ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করার ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা তাকে। অর্থাৎ নিজস্ব সম্পদ ও মূলধন ব্যবহার করে কারবার থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনে সাফল্য অর্জন করতে না পারার ঝুঁকিই হচ্ছে ব্যবসায়িক ঝুঁকি। ব্যবসায়িক ঝুঁকির কারণগুলো নিম্নরূপ-
১। অর্থনৈতিক ঝুঁকি
অর্থনৈতিক কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিকেই অর্থনৈতিক ঝুঁকি বলে। প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও কারিগরি ঝুঁকি না থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। এ সকল ঝুঁকির উৎস হিসেবে বলা যেতে পারে ভোক্তার রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদি।
২। প্রাকৃতিক ঝুঁকি
প্রাকৃতিক কারণে যে ঝুঁকি বা ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে প্রাকৃতিক ঝুঁকি বলে। প্রাকৃতিক ঝুঁকির উৎসগুলো হল- অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঝড়, অগ্নিকাণ্ড, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি। এসব কারণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পার্থক্য কি?
৩। কারিগরি ঝুঁকি
প্রতিষ্ঠানে কর্মীবৃন্দের অদক্ষতার কারণে যদি উৎপাদন কমে যায় বা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয় তখন যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে কারিগরি ঝুঁকি বলে। যেমন- ল্যাবরেটরীতে যন্ত্রপাতি ঠিকমত ব্যবহার করতে না জানা কিংবা যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন এর চেয়ে কম-বেশি হওয়ায় কোন সমস্যা সৃষ্টি ইত্যাদি।
৪। সময়গত ঝুঁকি
সময়ের ব্যবধানে কোন পণ্যের দাম উঠা নামা করতে পারে। ফলে পণ্য উৎপাদন বা ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধানের ফলে যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে সময়ের ঝুঁকি বলে।
৫। প্রতিযোগিতার ঝুঁকি
সকল কারবারী প্রতিষ্ঠানই পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। এই প্রতিযোগিতায় যে প্রতিষ্ঠান অধিকতর উন্নত পণ্য সরবরাহ করতে পারে ন্যূনতম মূল্যে সে প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা বাড়বে, এবং যে প্রতিষ্ঠান তা পারবে না, সে প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর এই প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে পিছে পড়া প্রতিষ্ঠানের যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে প্রতিযোগিতার ঝুঁকি বলে।
৬। মূল্য বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি
বাজারে মূল্যস্ফীতির ফলে পণ্যের দাম তথা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের কারণে যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে মূল্য বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকি বলে।
৭। রাজনৈতিক ঝুঁকি
একটি দেশেল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসায় ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি দেখা দেয় তাকে রাজনৈতিক ঝুঁকি বলে। যেমন- দেশে হরতাল, ধর্মঘট, জরুরি অবস্থা ইত্যাদি রাজনৈতিক ঝুঁকির উৎস।
৮। অনাদায়ী ঝুঁকি
ধার ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকি সৃষ্টির উৎস। কারণ ধারে বিক্রয়ের ফলে অনেক পাওনাদারের নিকট থেকে পাওনা অর্থ পরিশোধে অনেক সময় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে অনাদায়ী ঝুঁকি বলে।
৯। রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি
দেশের সরকার ব্যবসায় ক্ষেত্রে নতুন নতুন নিয়মনীতি ও আইন প্রয়োগ করার ফলে যে ঝুঁকি দেখা দেয় তাকে রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি বলে।
অতএব উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, ক্রেতার অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন, রাজনৈতিক কারণ, মূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে ব্যবসায় ঝুঁকি দেখা দেয়।