জননীতি বিশ্লেষণ এক ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। জননীতি বিশ্লেষণ হচ্ছে একটি ন্যায়সঙ্গত, সুপরিকল্পিত কার্যব্যবস্থা। নীতি তথ্য নির্ভরশীল। নীতি অনেক সময়ই অস্পষ্ট থেকে যায়। নীতিকে আরো আকর্ষণীয়, স্পষ্ট, যুক্তিসংগত, উন্নত ও বাস্তবভিত্তিক করবার জন্য নীতি বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নীতিকে সঠিকভাবে, পরিকল্পিতভাবে বিশ্লেষণ না করলে নীতি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। আবার সময়ে সাথে নীতির পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই নীতি বিশ্লেষণ একটি গতিশীল প্রক্রিয়।
জননীতি বিশ্লেষণ
জননীতি বিশ্লেষণ কী তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে নীতি কি? এবং জননীতি কি?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে নীতি বা Policy হচ্ছে সেইসব বৃহত্তর সিদ্ধান্ত, যার আলোকে ক্ষুদ্রতর সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
ব্যাপক জনসাধারণকে সামনে রেখে সরকার যে নীতি গ্রহণ করে, এক কথায় সেগুলোই হচ্ছে জননীতি।
Thomas R. Dye এর মতে, “Public Policy is whatever government choose to do or not to do.”
সংক্ষেপে বলতে গেলে, Policy Analysis হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে একটি নির্দিষ্ট জননীতির বিচার-বিশ্লেষণ।
সুতরাং এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, জননীতির সাথে জনগণের স্বার্থ জড়িত। জনস্বার্থ মোতাবেক জননীতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, এটি সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা, জননীতির সিদ্ধান্ত সামাজিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ পরিপন্থী হচ্ছে কিনা, এ সকল সিদ্ধান্তের জন্য যথেষ্ট রাজনৈতিক সমর্থন আছে কিনা? বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ও কারিগরী ইনপুট আছে কিনা, সম্পদ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আছে কিনা ও বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার নিশ্চয়তা আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে পুংখানুপুংখভাবে বিশ্লেষণ অপরিহার্য। আর উল্লেখিত বিষয়গুলির বিশ্লেষণ করাই হলো জননীতি বিশ্লেষণ।
R. K. Sapru এর মতে, “Public policy analysis is nothing more than estimating the impact of public policy on govt. program.”
Nigro & Nigro এর মতে, “Policy analysis includes the examination of policy making process itself, as well as the evaluation of policy choice and outcomes.”
সুতরাং, বলা যায়, জনগণের প্রতিনিধি কর্তৃক প্রস্তাবিত কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য গবেষণাকরণ, তথ্য প্রস্তুতকরণ, ও তথ্য প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে নীতির সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা প্রদানের নামই হলো জননীতি বিশ্লেষণ।
আরও পড়ুন: সরকারি নীতি কি? সরকারি নীতি প্রণয়নে আমলাদের ভূমিকা।
নীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে আওতাভূক্ত করা হয়-
- নীতি ধারণা ও নীতি নির্ধারণ কি করে হচ্ছে?
- নীতি বাস্তবায়ন কি করে হচ্ছে?
- নীতি মূল্যায়ন কতটুকু সফলতা অর্জন করছে?
- নীতি চাহিদা কতটুকু সুস্পষ্ট?
- নীতি আউটকাম কি এবং তার প্রভাব।
- নীতির প্রয়োগযোগ্যতা কতটুকু?
অতএব, এই সকল বিষয়ের পূর্ণরূপকে বলা হয় নীতি বিশ্লেষণ।
নীতি বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্য
নীতি বিশ্লেষণের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নিম্নরূপ:
- It is applied rather than pure research.
- এটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে।
- এটি শুধু বর্ণনামূলকই নয়, উপদেশমূলকও বটে।
- এটি নীতিসমূহের সমস্যা নিরূপণ এবং নীতির সুবিধা ভোগীদের নিরূপণ করার সাথে সংশ্লিষ্ট।
- এটি সামাজিক পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- এর মাধ্যমে ফলপ্রসূ নীতিসমূহ বাছাই করা যায়।
- এটি multi-disciplinary. ইতিহাস, পরিবেশ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ের সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব দেয়।
নীতি বিশ্লেষণের ধরণ
নীতি বিশ্লেষণকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) গুণগত: এ ধরণের বিশ্লেষণ লোকপ্রশাসক, সমাজতাত্ত্বিক, নৃবিজ্ঞানীরা করে থাকেন।
খ) পরিমাণগত: এ ধরণের বিশ্লেষণ পরিকল্পনাবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, অর্থনীতিবিদরা করে থাকেন।
গুণগত বিশ্লেষণ পরিমাণগত বিশ্লেষণকে সমৃদ্ধ করে।
নীতি বিশ্লেষণের উপাদান
নীতি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনেক উপাদান আছে। এই সকল প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) আভ্যন্তরীণ উপাদান
২) বাহ্যিক উপাদান
আভ্যন্তরীণ উপাদান
- সামাজিক-সাংস্কৃতি মূল্যবোধ
- রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও দর্শন
- বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা
- অবকাঠামোগত সমর্থন
- আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থান
- সম্পদের ভিত্তি ও অর্থনৈতিক অবস্থা
- জনসমর্থন ও জন অংশগ্রহণ
- সামাজিক গতি প্রকৃতি
- অবস্থানগত সমস্যাদি।
বাহ্যিক উপাদান
- দাতা দেশ ও সাহায্য সংস্থা
- বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ
- আন্তর্জাতিক চাপ
- বাহ্যিক চুক্তিি
উল্লেখিত উপাদানগুলোর যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণই হলো জননীতি বিশ্লেষণ। যে কোন দেশের জননীতিই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, দেখা যাবে সে দেশের জননীতির সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন সমূহ জড়িত।
2 comments
জননীতি বিশ্লেষণের মডেল গুলি আলোচনা করো
ঠিক আছে।
Comments are closed.