ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতি
ইতিবাচক অর্থনীতি বা প্রত্যক্ষ অর্থনীতি একটি সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া যা বর্তমান অবস্থাকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কলে। পক্ষান্তরে নীতিবাচক অর্থনীতি সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত তা আলোচনা করে। যেমন- ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কার্য-প্রক্রিয়া অনধাবন ও ব্যাখ্যা করা ইতিবাচক অর্থনীতির কাজ। পক্ষান্তরে, ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা তা নির্ণয় করা নীতিবাচক অর্থনীতির কাজ।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করি, একটি কারখানা পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যরক্ষা ইত্যাদি বাবদ সমাজের অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ কত তা নির্ণয় করা ইতিবাচক অর্থনীতির কাজ। কারখানা যদি এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে রাজী না হয় তবে সমাজে দুটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতির একটি গ্রহণ করতে হবে। একটি হলো নিজে ঐ অতিরিক্ত খরচ বহন করা এবং অন্যটি হলো কারখানা বন্ধ করে দিয়ে বেশ কিছু লোকের বেকারত্ব মেনে নেয়া। এ দুটি পরিস্থিতির কোনটি শ্রেয় তা নির্ণয় করার কাজ নীতিবাচক অর্থনীতির কাজ।
আরও পড়ুন: চাহিদার নির্ধারক সমূহ কি কি?
ইতিবাচক অর্থনীতি কোন মূল্যবোধ বা নৈতিক ভূমিকা বর্জিত। এটা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে এবং এটা নীতিবাচক অর্থনীতি থেকে স্বাধীন। পক্ষান্তরে নীতিবাচক অর্থনীতি ইতি বাচক অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। ইতি বাচক অর্থনীতির বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। সমাজের মূ্ল্যবোধ অনুযায়ী কল্যাণের দিক নির্দেশ করা নীতিবাচক অর্থনীতির কাজ।
ইতিবাচক অর্থনীতী একটি বিশুদ্ধ বিজ্ঞান। এবং নীতিবাচক অর্থনীতি তার ফলিত বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকে যেভাবে ফলিত বিজ্ঞানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ঠিক তেমনি ইতিবাচক অর্থনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় নীতিবাচক অর্থনীতিতে।
অর্থনীতি কি শুধু ইতিবাচক হবে না নীতি হবে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মার্শাল প্রমূখ অর্থনীতিবিদের মতে- মানব কল্যাণ অর্থনীতির প্রতিপাদ্য বিষয়। ফলে, অর্থনীতি নীতিবাচক বলে তারা মনে করেন। পক্ষান্তরে পিগু, রবিন্স প্রমূখ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, অর্থনীতি হবে শুধু ইতিবাচক। তবে অর্থনীতিকে বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক করার চেষ্টা করলেও তা পুরোপুরি সম্ভব হয় না।
অর্থনীতি উচিত-অনুচিতের প্রশ্নের সাথে জড়িয়ে যায়। যেমন একচেটিয়া কারবার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ এসে যায়। তেমনি ফার্সের অস্বাভাবিক মুনাফা, প্রগতিশীল কর, ন্যুনতম মজুরি ইত্যাদি অসংখ্য ধারণার পেছনে মূল্যবোধ কাজ করে। বস্তুত, মূল্যবোধের কাঠামো ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ হয়ত আদৌ সম্ভব নয়। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্মুখে না রেখে যত্রতত্র অর্থনৈতিক বাস্তবতা ব্যাখ্যা করলে তা বুদ্ধিবৃত্তির কসরত হতে পারে, কিন্তু ফলদায়ী হবে না।