বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা মতবাদ
এফ. ডব্লিউ. টেইলর (F. W. Taylor) – কে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা মতবাদের জনক বলা হয়। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন একজন মার্কিন প্রকৌশলী। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ব্যবস্থাপনায় কোন সুসংহত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়নি। যখন যা মনে আসত তখন তাই গ্রহণ করা হত। শ্রমিকের কর্মসম্পাদনের মান বাড়িয়ে তোলার কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। বরং ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত অনুমান, অতীত অভিজ্ঞতা, এবং বৃদ্ধাঙ্গুলের শাসনের ওপর ভিত্তি করে নেয়া হত। ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রভূত অর্থনৈতিক অপচয় ও ক্ষতিসাধন হচ্ছিল।
টেইলরের মতবাদের আর একটি দিক হল যে, সূচিন্তিত চিন্তাধারা বা পরিকল্পনার অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের সুষ্ঠুভাবে কর্মে পরিচালিত করা হয়নি। টেইলরের মতে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা মতবাদের যথাযথ প্রয়োগ করা হলে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। জীবনে প্রয়োজনীয় এবং বিলাস সামগ্রীর পর্যাপ্ততা বৃদ্ধি করা যাবে। তিনি উপলব্ধি করেন যে, সংগঠনে শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপনা এই দুইয়ের স্বার্থ বিরোধী কোন সম্পর্কে সম্পর্কিত নয় এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিয়ম কানুন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা ও দুই শক্তির মধ্যে প্রভূত সহযোগিতা সঞ্চার প্রয়োজন। এই সহযোগিতা নিশ্চিত হলেই উন্নততর সমাজ গড়ে তোলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে।
বিংশ শতকের শুরুর দিকে এফ. ডব্লিউ টেইলর আমেরিকার শিল্প ব্যবস্থাপনার উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ‘সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনাই হলো সত্যিকার বিজ্ঞান।’ এজন্য তাকে কেবলমাত্র ব্যবস্থাপনার জনকই বলা হয় না, বরং আধুনিক ব্যবস্থাপনা এপ্রোচ ও কৌশল উদ্ভাবনের অগ্রদূত বলা হয়।
এফ. ডব্লিউ টেইলর কে ছিলেন?
এফ ডব্লিউ টেইলর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ১৮৫৬ সালের ২০ শে মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ফ্রান্স এবং জার্মানীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। অনার্সসহ হার্বাড এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পরবর্তী একাডেমীক কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টি শক্তির জন্য চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৮৭৪ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি এন্টারপ্রাইজ হাইড্রলিক ওয়ার্ড-এ যোগদান করেন। ফিলাডেলফিয়াতে বেতনবিহীন অবস্থায় শিক্ষানবিশ হিসেবে ৪ বছর কাজ করেন।
১৮৭৮ সালে Midvale Steel Company তে শ্রমিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৮৪ সালে নিউজার্সীর Stevens Institute of Technology of Hoboken থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রী লাভের পর এ কোম্পানীর চীফ ইঞ্জিনিয়ার পদে উন্নীত হন। ১৮৯০ সালে তিনি Manufacturing Investment Company – এর জেনারেল ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। ১৯০১ থেকে মৃত্যু অবধি (১৯১৫, ২৮শে মার্চ) তিনি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার বিবিধ কৌশল উন্নয়নে গবেষণা কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে টেইলরের ধারণা
টেইলরের মতানুসারে ব্যবস্থাপনার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিটি কর্মচারীর জন্য সর্বোচ্চ সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সংগঠনের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জন। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় তার দর্শন হলো নিয়োগকর্তা বা ব্যবস্থাপনা, শ্রমিক এবং ভোক্তা – এই তিন শ্রেণীর স্বার্থের মধ্যে কোন অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই। টেইলর মনে করেন, সর্বোচ্চ উৎপাদনের সুফল তিন শ্রেণীর মধ্যে অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা, শ্রমিক এবং ভোক্তা সমান ভাবে বণ্টিত হবে। প্রশ্ন হলো কীভাবে? টেইলরের ব্যাখ্যা হলো উৎপাদন বেশি হলে শ্রমিক শ্রেণী বেশি মজুরি পাবে, ব্যবস্থাপনা বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারবে। সর্বোপরি ভোক্তা শ্রেণী নিম্নমূল্যে উৎপাদিত দ্রব্য ক্রয় করতে পারবে। তিনি এজন্য সুপারিশ করেছেন যে, ব্যবস্থাপনা উৎপাদনের মান নিয়ন্ত্রণে, পরিকল্পনা প্রণয়নে কর্মচারীদের সংগঠিত করণে, তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে দায়িত্বশীলতা সহকারে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার নীতিমালা
টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার দর্শন মূলত: ব্যবস্থাপক ও শ্রমিক শ্রেণীর পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ৪টি মৌলিক নীতিমালার উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো-
১) কাজের জন্য প্রকৃত বিজ্ঞানের বিকাশ (The Development of a True Science of Work)
বিজ্ঞানকে যখন একটি সংঘবদ্ধ জ্ঞান বলা হচ্ছে তখন ব্যবস্থাপনা সংগঠনের শ্রমিকদের সকল কাজের ভার প্রকৃত বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে হালকা করা সম্ভব। শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপনার স্বার্থেই ব্যবস্থাপককে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর কর্মদিন গঠনের উপাদানগুলো জানতে হবে।
এ ধরণের একটি সুন্দর কর্মদিবসের নির্ঘণ্ট প্রণয়ন করলে শ্রমিকগণ ব্যবস্থাপক বা উর্ধ্বতনদের অহেতুক সমালোচনা থেকে যেমন মুক্ত থাকবে তেমনি ব্যবস্থাপনাও শ্রমিকদের নিকট থেকে সর্বোচ্চ কর্মসম্পাদন আশা করতে পারবে। এজন্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিদিনের মোট কর্ম-ভলিউমের উপর যোগ্য কর্মীদের দিয়ে একটি অনুসন্ধানকর্ম পরিচালনা করা যেতে পারে যেখানে অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের কর্মজীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। অনুসন্ধানের ফলাফল শ্রেণীকরণ করে, গণনা করে, বিশ্লেষণ করে সেগুলিকে আইন বা বিধানে পরিণত করার সুপারিশ করা।
অবশেষে এগুলি সংগঠনের জন্য আদর্শ কর্মপদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে। টেইলর এটিকে কর্মসম্পাদনের সর্বোত্তম উপায় বলে অভিহিত করেছেন। কাজের এ ধারার বৈজ্ঞানিক বিকাশ সংগঠেনকে অধিক উৎপাদনে সক্ষম করবে, শ্রমিকদের অধিক মজুরী প্রাপ্তিতে সাহায্য করবে এবং কোম্পানীর পক্ষে অধিক মুনাফা অর্জনে সহায়তা করবে।
২) শ্রমিক কর্মচারীদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক নির্বাচন এবং প্রগতিশীল বিকাশ (Scientific Selection and Progressive Development)
টেইলর কর্মসম্পাদনে যে বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ করেছেন, তাতে সন্তোষজনক কর্মসম্পাদন নিশ্চিত করার জন্য তিনি শ্রমিকদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিয়োগের সুপারিশ করেছেন, যেখানে দৈহিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা নিরুপনের উপায় অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এজন্য শ্রমিকদের কাজের প্রতি ঝোঁক, তাদের প্রকৃতি এবং কর্মসম্পাদন দক্ষতার উপর ব্যাপক অনুশীলনের প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য শ্রমিকদের মধ্যে অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ও সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হবেন। টেইলর বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক শ্রমিকের মাঝেই সুপ্ত প্রতিভা বিদ্যমান এবং এজন্য তাদেরকে পদ্ধতিগতভাবে এবং ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব।
ব্যবস্থাপনা শ্রমিক-কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সুযোগ এবং কর্মসূচী প্রদান করবে, যাতে তারা তাদের অন্তর্নিহিত যোগ্যতা অনুধাবনে এবং তার বিকাশে সমর্থ হয়। ব্যবস্থাপনা কখনও শ্রমিকদের বিকাশের প্রক্রিয়া তাদের উপর চাপিয়ে দেবেনা। বরং শ্রমিকরা যাতে আগ্রহ ভরে দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল, কর্মশর্ত, নতুন পরিবেশ ও যন্ত্রপাতি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে সে ধরণের ইতিবাচক পরিবেশ সংগঠন নিশ্চিত করবে।
৩) কাজের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্বাচিত-প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের একত্রীকরণ (Bringing Together of the Science of Work and Scientifically Selected and Training)
শ্রমিকদের কাজে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করানো এবং যাতে তারা তাদের সনাতন পদ্ধতিতে ফিরে না যায়, সে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। এই প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের আত্মীকরণের জন্য ব্যবস্থাপনা সার্বিকভাবে তাদের উৎসাহিত করবে। টেইলর বিশ্বাস করতেন, ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা দানের প্রত্যয় এবং ইচ্ছা কর্মচারীদের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় থাকে, কিন্তু অসহযোগিতার প্রক্রিয়াটি ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকেই কার্যকরী হয়। টেইলর ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার মনোভাব দূরীকরণে উভয়পক্ষের মাঝে একধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন যার জন্য তিনি মানসিক বিপ্লবের কথা বলেছেন।
৪) ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের মধ্যে কর্ম ও দায়িত্বের বিভাজন (Division of Work and Responsibility between Management and Work)
ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থাপনায় সংগঠনে শ্রমিকরাই কর্মসম্পাদন ও দায়িত্বশীলতার বৃহদাংশের শেয়ার করত, সেখানে ব্যবস্থাপকদের শেয়ার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু টেইলর ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের মাঝে দায়িত্বের সুষম বণ্টন ও শেয়ারের কথা বলেছেন। কর্ম ও দায়িত্বের এ ধরনের বিভাজনের কারণে উভয়শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক আন্ত:ক্রিয়া এবং নির্ভরতা সৃষ্টি হবে, ফলে অব্যাহত বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক এবং নির্ভরতার সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতার অনুভূতিকেই জাগ্রত করবে। এর সঠিক ও ইতিবাচক অর্জন হবে সংগঠনের অন্তঃদ্বন্দ্বের নিরসন। টেইলরের বৈজ্ঞানিক নীতিমালাগুলো একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। এগুলি ব্যবস্থাপনার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত একটি রুপ। নীতিমালা গুলোর দর্শনের সারসংক্ষেপ নিম্নরুপ:
ক) বিজ্ঞানভিত্তিক, বৃদ্ধাঙ্গলির ছাপ নয়;
খ) সমঝোতা ও সহমর্মীতা, অসংহতির নীতি নয়;
গ) সহযোগিতা, ব্যকিতস্বাতন্ত্র্যবাদীতা নয়;
ঘ) সর্বোচ্চ উৎপাদন, সীমিত উৎপাদন নয়;
ঙ) সংগঠন, ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক-কর্মচারী প্রত্যেকের সর্বোত্তম দক্ষতা ও সমৃদ্ধির বিকাশ।
মানসিক বিপ্লব (Mental Revolution)
টেইলর বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবন এবং যথাযথ প্রয়োগের জন্য একটি সুস্পষ্ট মানসিক বিপ্লবের প্রয়োজনের কথা বলেছেন এবং এই বিপ্লব টেইলর মনে করেন ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিক উভয় কুলে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব, তাদের বর্ণিত কর্মকাঠামো, তাদের অধস্তন শ্রমিক-বন্ধু, এবং প্রতিদিনের সকল কর্মকান্ড ও সমস্যার বিষয়ে এই মানসিক বিপ্লব সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন।
মানসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের মাঝে যে পরিবর্তন বা সংস্কার আসবে তা হলো ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক উভয় গোষ্ঠী একটি বিষয়ে উপলব্ধি করবে তা হলো তাদের পারস্পরিক স্বার্থ কখনই পরস্পর বিরোধী নয়, বরং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব এবং অন্যান্য সকল কর্মকেন্দ্রী কৌশলের সাথে প্রাথমিক মৌলিক শর্ত হলো এ বিষয়ে মানসিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিন্তা ও চেতনার সংস্কার সাধন।
সমালোচনা (Criticism)
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা এক নতুন ভাবধারার সৃষ্টি করলেও পরবর্তীকালে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। সমালোচকগণ এর নিম্নলিখিত সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করেন:
১) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করতে হলে সর্বাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, অবিরাম গবেষণা, বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ইত্যাদি প্রয়োজন আর এজন্যে প্রভূত অর্থের দরকার, সে কারণে অনেক মালিক এটা গ্রহণ করতে পারে নি। কেবল বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা সাধ্যাতীত।
২) অবিরাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে নতুন নতুন উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ঘন ঘন পরিবর্তন করা হলে সংগঠনের কাজের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়।
৩) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বিভাগ সৃষ্টি করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। এসব কর্মী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয় বলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থির ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
৪) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে শুধুমাত্র উৎপাদন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিক্রয়-ব্যবস্থাপনা, অর্থ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির কোন স্থান বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় নেই।
৫) কার্যভিত্তিক কর্ম-নায়কত্বের (Functional Foremanship) ব্যবস্থা যেখানেই প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেখানেই চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।
৬) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষীকরণের সীমা উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষীকরণের সব সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের কার্যপরিধি ক্ষুদ্র গন্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। কাজের বৈচিত্র্যের অভাবে একঘেয়েমীর সৃষ্টি হয় এবং পরিণামে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পায়।
৭) শ্রমিকের সমৃদ্ধির সোপান হিসেবে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনাকে ঘোষণা করা হলেও শ্রমিকেরা এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। এই ব্যবস্থায় কাজের গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকের দেহ ও মনের ওপর বিশেষ চাপ পড়ে। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিমাণ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন শ্রমিকের মজুরির ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারিত হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ করা হয়।
৮) C.S. Myers বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনাকে অবৈজ্ঞানিক, সমাজবিরোধী এবং মানসিক বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। আধুনিক ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রের সূত্র অনুসারে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার বহু নীতিই বিজ্ঞান বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে।