Home » প্রশাসনিক জবাবদিহিতা কি? প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের উপায়সমূহ কি কি?

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা কি? প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের উপায়সমূহ কি কি?

by TRI

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা কি ?

লোকপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতাকে লোক বা প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বলা হয়। লোক বা প্রশাসনিক জবাবদিহিতা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সরকারি প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী বা আমলাগণ তাদের কাজের জন্য অভ্যন্তরীণভাবে তাঁদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন এবং বাহ্যিকভাবে সরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মাধ্যমে তাদের কাজের মূল্যায়ণ নিশ্চিত করা হয়।

L. D. White এর মতে, “জবাবদিহিতা হচ্ছে সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ, প্রশাসনিক এবং বিচার সংক্রান্ত বিধিমালা ও পূর্ব দৃষ্টান্ত এবং প্রতিষ্ঠিত প্রয়োগ ও আচরণ যার মাধ্যমে সরকারি কর্মের জন্য জবাবদিহি করা যায়।”

জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা শব্দ দুটি অনেকাংশে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রশাসন বিজ্ঞানী পিফনার প্রেসথাস এ দুয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য নির্ণয় করেছেন। তাঁর মতে দায়িত্ব হল অত্যন্ত ব্যক্তিগত ও নৈতিক। আর প্রশাসনিক জবাবদিহিতা হল আইনানুগ, নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি, বিস্তৃত নিয়ম-কানুন যার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। দায়িত্ব হল ব্যক্তিনিষ্ঠ এবং এটি মনের তাগিদেই পালন করতে হয়। জবাদিহিতা হল বস্তুনিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক পর্যায়ে নিয়ম নীতির মাধ্যমেই এটি আদায় করা হয়। প্রশাসনিক জবাবদিহিতাকে আবার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

প্রশাসনিক জবাবদিহিতার প্রকারভেদ

জবাবদিহিতাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক।

প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) অভ্যন্তরীণ ও খ) বাহ্যিক।

অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা হলো এমন জবাবদিহিতা যেখানে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ তাদের নিয়োজিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার পদসোপান এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। বাহ্যিক জবাবদিহিতা হল সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বা নির্বাহী বিভাগ এর বাইরে যেসব সরকারি বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অভ্যন্তরীণ উপায়

১) বাজেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ: সরকারি প্রতিটি সংস্থার জন্য আর্থিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। এই বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী সংস্থাকে কার্য সম্পাদন করতে হয়। বাজেট বরাদ্দে অনুমোদিত অর্থের অধিক ব্যয় অথবা এই ব্যয় নিয়ম মাফিক না হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জবাবদিহি করতে হয়।

২) অডিট: অডিট প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত অডিট কমিটি হিসাব নিরীক্ষার মাধ্যমে কোন সংস্থার ব্যয় পরীক্ষা ও নিরীক্ষা করে দেখে এবং এই ব্যয় অনিয়মিত বা যুক্তিসঙ্গত না হলে অডিট আপত্তি জানায়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্মকর্তাকে এই আপত্তির জবাব দিতে হয়।

৩) ব্যবস্থাপনা বা পদসোপানিক ব্যবস্থা: প্রতিটি সরকারি সংস্থার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা বা পদসোপানিক ব্যবস্থাপর মাধ্যমে কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতে পারে। দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ, তাদের পদায়ন, প্রশিক্ষণ এবং তাদের কর্মকান্ডের গতিবিধি, আচরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দায়িত্ব বহন করেন।

৪) দক্ষতা নিরূপণ জরিপ: উর্ধ্বতন প্রশাসক তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংস্থার কাজের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা নিরূপণ করতে পারেন এবং সন্তোষজনক বা অসন্তোষজনক কর্মদক্ষতার জন্য পুরস্কার বা তিরস্কার এ দুয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

৫) পেশাভিত্তিক নৈতিকতা: প্রতিটি পেশার কিছু নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের মান বা উৎকর্ষ ও নৈতিকতা সম্পর্কিত বিধান রয়েছে যা এগুলো সংশ্লিষ্ট সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত হয়। পেশাগত দায়িত্বপালনে এগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে সংস্থা-সমিতি এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার আচরণ বা কর্মকান্ড ব্যাখ্যা করার জন্য জবাবাদিহি করতে বাধ্য করতে পারে।

৬) প্রশাসনিক নেতৃত্ব: প্রশাসনিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সংস্থার কর্মকর্তাগণ আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব, সহনশীল আচরণ, আন্তঃব্যক্তি সম্পর্ক ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর কার্যকর প্রভাব বিস্তার করে সহজেই তার কর্মকান্ডের জন্য জবাবদিহি আদায় করতে পারেন।

৭) লিখিত প্রতিবেদন: প্রতিটি সংস্থাকে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবেদন- পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রধানকে পাঠাতে হয়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় কি ধরনের কাজকর্ম হচ্ছে, কে কি কাজ করছেন সে সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন এবং কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে সে ব্যাপারে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।

৮) পরিদর্শন: প্রতিবেদন সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরেজমিনে সংস্থা পরিদর্শন করতে পারেন এবং প্রত্যক্ষ পরিদর্শনের মাধ্যমে সংস্থার প্রকৃত অবস্থা জানতে পারেন। এই পরিদর্শন দু’রকমের হতে পারে- নিয়মিত পরিদর্শন ও আকস্মিক পরিদর্শন।

৯) সরকারি কর্মচারীর আচরণ বিধিমালা: সরকারি কর্মচারীর চাকরিতে প্রবেশপূর্বক কিছু বিধিমালা মেনে চলতে হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োজত কর্মীগণ কি করতে পারবে এবং কি করতে পারবে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিধিমালা রয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে পালন না করলে তাদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত কিছু বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এগুলো হল সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫। এই বিধিমালাতে সরকারি কর্মচারীদের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়, তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

১০) সচিবালয় নির্দেশনামা: সচিবালয় নির্দেশনামায় সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের পরস্পর সম্পর্ক ও কাজ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সচিবালয়ের সঙ্গে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সম্পর্কেরও বর্ণনা রয়েছে। এই বিধিমালার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাজ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিকট কোন কোন বিষয় প্রেরণ করা হবে এবং আন্তমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পর্ক কি এবং তাদের পরামর্শ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধিমালা ১৯৯৬ সালে সংশোধিত আকারে প্রণীত হয়েছে যা সরকারের প্রতিটি সংস্থায় নিয়োজিত কর্মীদের মেনে চলতে হয়।

১১) বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন: সরকারের প্রতিটি সংস্থায় নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর গোপনীয় প্রতিবেদন সাধারণত তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্পন্ন করেন যার মাধ্যমে তাদের সার্বিক কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা আদায় করা যায়। বার্ষিক প্রতিবেদন অসন্তোষজনক হলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাহ্যিক উপায়

ক) আইন বিভাগ বা জাতীয় সংসদ: আইন বিভাগ বা জাতীয় সংসদ সাধারণত সরকারি প্রশাসন বা নির্বাহী বিভাগের কর্মকান্ডের উপর নিম্নোক্ত উপায়ে সরকারি কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে:

১) বাজেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ: প্রতি আর্থিক বছরেই জাতীয় বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেন। মূলত বাজেট হচ্ছে সরকারের যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের খতিয়ান যাকে জাতীয় অর্থ ভাণ্ডার বলা হয়। সংসদের অনুমোদন ব্যতীত জাতীয় বাজেট বরাদ্দ বহির্ভূত একটি কানাকড়িও খরচ করা যায় না। বাজেটে প্রতিটি বরাদ্দ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হয় এবং সেভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বাজেট বরাদ্দের সময় গত বাজেটের অর্থ বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয় সম্পন্ন হয়েছে কিনা তাও দেখা হয়। সরকারের প্রতিটি সংস্থাকে এই বাজেটকে অনুসরণ করে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হয়।

২) সংসদীয় কমিটি: সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সরকারের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ণ করার জন্য জাতীয় সংসদে বিভিন্ন ধরণের কমিটি করা হয় যেমন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মন্ত্রণালয় কার্য পর্যবেক্ষণ কমিটি ও সংসদীয় কমিটি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সাব কমিটি। এই কমিটির সদস্য সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই কমিটিগুলোর একজন করে সভাপতি থাকেন এবং তিনি বিরোধী দলেও সদস্যও হতে পারেন। এছাড়া রয়েছে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম খতিয়ান ও তদারকের জন্য কমিটি। এই কমিটি বাজেট বরাদ্দ, প্রশাসনিক গাফিলতি এবং প্রশাসনিক আইন ও নীতি অনুযায়ী নির্ধারিত বরাদ্দকৃত কাজ সম্পাদিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে এবং আলোচনার মাধ্যমে মতামত বা সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে।

৩) মূলতবী প্রস্তাব: সংসদ সদস্যগণ কোন সাম্প্রতিক ও জরুরি বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সভার কাজ মূলতবী করার প্রস্তাব করতে পারেন। স্পীকার কর্তৃক নির্দিষ্ট দিনে সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করতে পারেন এবং মন্ত্রীগণ সে ব্যাপারে সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার ব্যাখ্যা প্রদান করতে বাধ্য হন।

৪) প্রশ্নোত্তর: প্রতিটি সংসদ অধিবেশনে একটি নির্দিষ্ট সময় করে দেওয়া হয় প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য। এই নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন সদস্য ও সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসন সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারেন। প্রশ্ন রাখতে পারেন এমন কি প্রশাসনিক তথ্য ও পরিসংখ্যান চাইতে পারেন এবং প্রশাসন এ সম্পর্কে উত্তর দিতে বাধ্য থাকেন। তবে প্রশ্নগুলো অগ্রিম নোটিশের মাধ্যমে স্পীকারকে জানিয়ে দিতে হয়। প্রশ্নোত্তরের মূল উদ্দেশ্য হল সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা, প্রশাসন সম্পর্কিত অভিযোগ এবং জনগণের অভাব-অভিযোগ ও চাহিদা সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করা।

৫) ছাঁটাই প্রস্তাব: ছাঁটাই প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ সরকারি কোন ব্যয় মঞ্জুরি বা মঞ্জুরি দাবি সংক্রান্ত কোন প্রস্তাবকে হ্রাস করতে পারে। এক্ষেত্রে সংসদের সমর্থন না পেলে মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। অন্যথায় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হয়।

খ) সরকারি কর্মকমিশনের প্রতিবেদন: প্রতি বছরেই সরকারি কর্ম কমিশন বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপন করেন। এই প্রতিবেদনে চাকরি সংক্রান্ত নিয়োগ এবং কর্মকমিশন কর্তৃক চাকুরি সংক্রান্ত যেসব পরামর্শ সরকার কর্তৃক মানা হয়নি তা উল্লেখ করা হয়। যার মাধ্যমেও সরকার জবাবদিহিতা এবং প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

গ) ন্যায়পাল: ন্যায়পাল হচ্ছে সংসদীয় অধিকর্তা। প্রশাসনিক অনিয়ম, অভিযোগ, অপশাসন ও ব্যক্তি পর্যায়ে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তিনি নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার উল্লেখ রয়েছে এবং সে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে ন্যায়পাল আইন প্রণয়ন করেছে (আইন নং ১৫, ১৯৮০)। সংবিধানিক ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “পার্লামেন্ট আইনের মাধ্যমে ন্যায়পালের পদ” সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু অদ্যাবদি বাংলাদেশে ন্যায়পাল কার্যকর হয়নি। তবে কর ন্যায়পাল বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে যার মাধ্যমেও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়ে থাকে।

ঘ) বিচার বিভাগ: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অন্যায়মূলক আচরণের প্রতিকারের জন্য জনগণ আদালতের স্মরণাপন্ন হতে পারে। আদালত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অন্যায়, অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আদালত সাধারণত দু’ধরনের, যেমন- নিম্ন ও উচ্চ আদালত। বাংলাদেশে প্রশাসনের ওপর বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল ও ততটা কার্যকর না হওয়ার প্রধান কারণ হল বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে এখনও সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়নি। নিম্ন আদালতগুলো এখনও নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনা মূলনীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “রাষ্ট্র বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র করার নিশ্চয়তা বিধান করবে।” এছাড়া বিচার বিভাগীয় প্রতিকার প্রাপ্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ একটি ব্যয়বহুল ও প্রলম্বিত প্রক্রিয়া। তাছাড়া বিচার বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে প্রশাসনিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।

ঙ) প্রেস বা মিডিয়া: সংবাদপত্র/প্রেস এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রশাসনিক অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, প্রশাসনিক হয়রানির শিকার যাতে সাধারণ জনগণ না হয় সেদিকে প্রেস বা মিডিয়া তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারে এমনকি বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে। পাশাপাশি জনগণকে তাদের প্রশাসনিক সেবা পাওয়াও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সচেতন করে তুলতে পারে।

চ) সিভিল সোসাইটি: প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সিভিল সোসাইটির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। সিভিল সোসাইটির সদস্যগণ সাধারণ সরকারি কাজের সমালোচনা ও পরামর্শমূলক বিভিন্ন সভা সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়াম এবং গোল টেবিল বৈঠক করে লোক বা প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত, প্রশাসনিক গতিশীলতা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

 

Related Posts