কৃষির উপখাত সমূহ
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী সার্বিক খাত হিসেবে কৃষি খাতকে দুটি উপ-খাতে বিভক্ত করা হয়। উপ-খাতসমূহ হলো- কৃষি ও বনজ এবং মৎস্য। আবার কৃষি ও বনজ খাত তিনটি উপখাতের সমন্বয়ে গঠিত। যথা-
ক) শস্য ও শাকসবজি
খ) প্রাণিজ সম্পদ
গ) বনজ সম্পদ
কৃষির বিভিন্ন উপখাত গুলো সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলো-
ক) শস্য ও শাক-সবজি
দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় খাদ্যদ্রব্য নিয়ে কৃষির এ উপখাত গঠিত। খাদ্যশস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধান (আউশ, আমন, বোরো), গম এবং ভুট্টা। এছাড়া আলু, ডাল, তৈলবীজ, পাট, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল এবং মসলা জাতীয় খাদ্যদ্রব্য- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ঝিরা, সরিষা, হলুদ, মরিচ, ধন্যা, লং, গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়। এটি কৃষির বৃহত্তম উপখাত।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কি | রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা আলোচনা কর |
খ) প্রাণিসম্পদ
প্রাণিসম্পদ বাংলাদেশের কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত। জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ উপখাতের অংশ স্বল্প হলেও দৈনন্দিন খাদ্যে মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, চাষাবাদ, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন ও রপ্তানিতে এবং বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ উপ-খাতের ভূমিকা অপরিসীম। প্রাণিজ উৎস হতে দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যেমন- দুধ, মাংস (গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি) এবং ডিমের পরিমাণ নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ) বনজ সম্পদ
বাংলাদেশের কৃষির অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপখাত। বৃক্ষ, কাঠ, ফল, মধু, জ্বালানি কাঠ প্রভৃতি বনজ সম্পদের অন্তর্গত। দেশে প্রাকৃতিক বনভূমি যখন সংকুচিত হয়ে আসছে, বনের বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ২০০০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বনের বাইরে নতুন করে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেড়েছে। এ সময়কালে তিন পার্বত্য জেলায় ৮০ হাজার ৮০০ হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়েছে। দেশে মোট ৩১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা রয়েছে। (তথ্যসূত্র- আইওটি সায়েন্স জার্নাল, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭; যুক্তরাষ্ট্র)
ঘ) মৎস্য সম্পদ
মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ বৃদ্ধি করা এ খাতের একটি অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হচ্ছে- সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণ, খাস জলাশয়ে মৎস্যজীবীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, বিল নার্সারি কার্যক্রম গ্রহণ ও মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য অভয়াশ্রম সৃষ্টি, ঘের ও খাঁচায় মাছ চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ভরাট হয়ে যাওয়া নদী পুনঃখনন করে মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার এবং গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ। দেশের জনসাধারণের আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্যসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।