পঞ্চনীবরণ সমূহ
কামচ্ছন্দ, ব্যাপাদ, ভ্যান-মিদ্ধ, ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য। ও বিচিকিৎসা- এদেরকে পঞ্চনীবরণ বলা হয়। পঞ্চনীবরণ হল চিত্তের পাঁচ প্রকার বন্ধন। যাদের কারণে অনুৎপন্ন কুশল উৎপন্ন হতে পারে না এবং উৎপন্ন কুশল বৃদ্ধি পেতে পারে না। তাদের সাধারণ নাম নীবরণ: নিবারণ। চিত্তের এই নীবরণ বা আবরণ পরিত্যক্ত না হলে ধ্যান লাভ হয় না। ধ্যান লাভ না হলে মার্গফল লাভ কিছুতেই সম্ভব নয়। প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা নিম্নে দেয়া হল :-
১. কামচ্ছন্দ (Greediness): এটাকে অভিধ্যাও বলা হয়। পঞ্চ কামগুণের প্রতি আসক্তিকে
কামচ্ছন্দ বলা হয়। রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শাদি আলম্বনে চিত্তকে আকর্ষণ করে রাখাই এর কাজ। বর্জনীয় বিষয় অপরিত্যাগ করাই এর লক্ষণ। আলম্বনসমূহ রঞ্জিত ও মনোরম হয়ে চিত্ত আকৃষ্ট করে বলে এর অপর নাম রাগ। একাগ্রতা এর প্রতিপক্ষ।
আরও পড়ুন:
অভিধর্ম কি বৌদ্ধ দর্শন? অভিধর্মের মূল তত্ত্বকথা তুলে ধর।
২. ব্যাপাদ (Ill-will): অপরের অমঙ্গল চিন্তা, সংকীর্ণতা, ক্রোধ, হিংসা ও ঈর্ষা বশে ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা এবং ক্ষতিসাধন করাই ব্যাপাদ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করাও ব্যাপাদ। সৎ কাজে অনিচ্ছা প্রকাশ করা ব্যাপাদের লক্ষণ। প্রীতি এর প্রতিপক্ষ।
৩. স্তান মিদ্ধ (Weakness and sloth): চিত্তের অলসতা, অকর্মণ্যতা, অনুৎসাহ, অবসাদ প্রভৃতি অবস্থাকে বুঝায়। স্ত্যন-মিদ্ধ চিত্ত কুশল চিত্ত গ্রহণে কেবল শক্তিহীন নয়, অনিচ্ছুকও বটে। চিত্তের পরাক্রম বিনাশ করাই স্ত্যন-মিদ্ধের কৃত্য বা কাজ। বিতর্ক এর প্রতিপক্ষ।
৪. ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য (Irretability and vexation): অহংকার, খেদ, অনুশোচনা, অনুতাপ এবং এদের থেকে সৃষ্ট উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগই ঔদ্ধত্য-কৌকৃত্য। চিত্তের অশান্তি সৃষ্টি এর লক্ষণ এবং অস্থিরতা সম্পাদন এর কৃত্য। কুশল কর্ম করা হল না, অকুশল কর্ম করা হল বলে চিত্ত-ক্ষোভই কৌকৃত্য। সুখ এর প্রতিপক্ষ।
৫. বিচিকিৎসা (Doubt): সংশয়, সন্দেহ, দ্বিমত, ভাল না মন্দ, সত্য না মিথ্যা, এটা না ওটা- এরূপ দোদুল্যমান চিত্তের অবস্থাকে বিচিকিৎসা বলা হয়। চিত্তের অস্থিরতা এর কারণ। কোন বিষয়ে মীমাংসার অক্ষমতা বিচিকিৎসার কারণ। বিচার এর প্রতিপক্ষ।