Home » কৃষি ঋণ কি? বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎসগুলো কি কি? – Sahajpora
কৃষি ঋণ কি, কৃষি ঋণ কী, কৃষি ঋণ, বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎসগুলো কি কি, কৃষি ঋণের উৎস কি কি,

কৃষি ঋণ কি? বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎসগুলো কি কি? – Sahajpora

by TRI

কৃষি ঋণ কি?

কৃষি কার্যের জন্য গৃহীত ঋণকে কৃষি ঋণ বলে। অর্থাৎ কৃষি কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য কৃষকরা যে ঋণ গ্রহণ করে তাই হলো কৃষি ঋণ। কৃষিকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে উন্নত কৃষি সরঞ্জাম, ভাল বীজ, সার প্রভৃতি একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় মূলধন।

বাংলাদেশের কৃষক গরিব বিধায় মূলধন সংগ্রহের জন্য তাদেরকে মহাজন, ফড়িয়া, দালাল কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের উপর ঋণের জন্য নির্ভর করতে হয়। এ সুযোগে ঋণ প্রদানকারীরা কৃষকদের শোষণ করে থাকে। ফরাসি ভাষায় প্রবাদ আছে, “Credit supports the farmer as the hangman’s rope supports the hanged.” অর্থাৎ ফাঁসির আসামির আশ্রয় যেমন দড়ি, সেরূপ কৃষকের শেষ আশ্রয় ঋণ ।

আরও পড়ুন:   বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব

সুতরাং, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ কিংবা প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে কৃষক যে ঋণ গ্রহণ করে সেটাই হলো কৃষি ঋণ। তাই কৃষি ঋন কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। অতএব, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য কৃষকেরা যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে কৃষি ঋন বলা হয় ।

কৃষি ঋণের উৎস সমূহ

বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎসসমূহকে কয়েকভাগে দেখানো যেতে পারে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে কৃষি ঋণের উৎসসমূহকে দুইভাগে দেখানো যেতে পারে-

(ক) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস (Formal sources) : ঋণদানের যেসব উৎসসমূহ সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে ঋণ দান করে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস বলে । প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হিসেবে বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।

(খ) অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস (Informal sources) : ঋণদানের যেসব উৎস সরকারি নিয়মকানুন মেনে ঋণ প্রদান করে না, তাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস বলা হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎসমূহের মধ্যে গ্রাম্য মহাজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়- স্বজন, গ্রাম্য ব্যবসায়ী, দোকানদার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

নিম্নে একটি ছকের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি ঋণের উৎস গুলো দেখানো হলো-

অ-প্রাতিষ্ঠানিক উৎস প্রাতিষ্ঠানিক উৎস
১। আত্মীয়-স্বজন

২। বন্ধু-বান্ধব

৩। গ্রাম্য মহাজন

৪। ধনী ব্যক্তি

৫। গ্রাম্য ব্যবসায়ী

৬। ফড়িয়া ও বেপারি

১। বাংলাদেশ ব্যাংক

২। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

৩। বাণিজ্যিক ব্যাংক

৪। সমবায় ঋণদান সমিতি

৫। ভূমি বন্ধকী ব্যাংক

৬। গ্রামীণ ব্যাংক

৭। পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ইত্যাদি।

১। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস (Non-Institutional sources) :

(ক) আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব : আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ঋণ নেয়া ও পরিশোধের বাঁধাধরা কোন নিয়ম নেই। এতে সুদ না দিলেও চলে। তবে দিলেও তা পরিমাণে খুবই কম।

(খ) গ্রাম্য মহাজন : গ্রাম্য মহাজনরা স্বর্ণলঙ্কার, জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি বন্ধক রেখে কৃষকদেরকে ঋণ দেয়।

(গ) গ্রাম্য ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তি : গ্রামের ছোট ছোট বানায়া ও ধনী ব্যক্তিরা কৃষকদেরকে উঠতি ফসলের বিপরীতে ঋণ দেয় ।

(ঘ) ফড়িয়া ও বেপারি : গ্রাম্য ফড়িয়া ও বেপারিরাও কৃষকদের ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এতে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ খুবই সীমিত।

২। প্রাতিষ্ঠানিক উৎস (Institutuional sources) :

(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক : বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি কৃষকদের ঋণ প্রদান না করলেও এই ব্যাংক কৃষি ঋণপ্রদানকারী বিভিন্ন ঋণদান প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ব্যাংক কৃষি বিভাগ নামে একটি শাখা বিভাগের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে।

(খ) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক : কৃষি ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে মূলত কৃষকদেরকে ঋণ দেয়ার জন্য। কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচের জন্য গভীর নলকূপ, পাম্পিং মেশিন, হালের গরু ক্রয়, সার, বীজ, কীটনাশক, মৎস্য চাষ, হাঁস, মুরগি ও পশু পালন প্রভৃতির জন্য এই ব্যাংক ঋণ নিয়ে থাকে।

(গ) বাণিজ্যিক ব্যাংক : বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রত্যক্ষভাবে কৃষকদেরকে ঋণ প্রদান করে থাকে। ১৯৭৭ সাল হতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ও সহযোগিতায় কৃষি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

(ঘ) সমবায় ঋণদান সমিতি : সমবায় ঋণদান সমিতি কৃষকদেরকে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা কৃষিঋণ সরবরাহকারী সমিতি ও সংস্থাগুলোকে সমবায় ঋণদান সমিতি সমন্বয় সাধন করে এবং ঋণ প্রদান করে থাকে।

(ঙ) ভূমি বন্ধকী ব্যাংক : ভূমি বন্ধকী ব্যাংক কৃষকদের জমি বন্ধক রেখে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে।

(চ) গ্রামীণ ব্যাংক : ভূমিহীনদের কল্যাণে ভূমিহীনদের মালিকানায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামীণ ব্যাংক বলা হয়। এই ব্যাংক ভূমিহীন কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ও জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান করে।

(ছ) পল্লী উন্নয়ন বোর্ড : পল্লী উন্নয়ন বোর্ড পল্লীর জনসাধারণকে বীজ, সার, কীটনাশক, গভীর ও অগভীর নলকূপ, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে।

Related Posts