Home » বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে? কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য
বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে? কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য

by TRI

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে ?

যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আমানত সংগ্রহ, ঋণ দেওয়া ও অন্যান্য আর্থিক কাজ করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। এটি একটি মুনাফাভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ধরনের ব্যাংকের ব্যবসায়িক উপাদান হলো অর্থ।

বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্তি অর্থ অল্প সুদে আমানত হিসেবে নিয়ে বেশি সুদে গ্রাহককে ঋণ দেয়। এই দুই সুদের পার্থক্য থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জন করে। এই ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার, প্রত্যয়পত্র, বিনিময় বিল ইত্যাদি তৈরি করে। এর বিনিময়ে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে কমিশন বাবদ অর্থ আদায় করে। এছাড়াও গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যংক সার্ভিস চার্জ নেয়। এগুলো ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে। এই ব্যাংক অন্যের থেকে ধার করা অর্থের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করে। তাই একে ‘ধার করা অর্থের ধারক’ বলা হয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য কোনটি ?

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন।

আরও পড়ুন:   তফসিলি ব্যাংক কি ? তফসিলি ব্যাংক কতটি ২০২৩ ও বৈশিষ্ট্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেকোনো দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক। অপরপক্ষে, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। সুতরাং উভয়ের উদ্দেশ্য, কাজের প্রকৃতি, পরিচালনা পদ্ধতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা যায়। নিচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হল-

পার্থক্যের বিষয়বস্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক
১। সংজ্ঞা যে ব্যাংক দেশের প্রধান ব্যাংক ও মুদ্রা বাজারের অভিভাবক হিসেবে নোট ইস্যু, ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক কাজ পরিচালনা করে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের জন্য মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্থ ও ঋণের ব্যবসায় করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।
২। গঠন এ ব্যাংক রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বা বিশেষ আইন বলে গঠিত। এ ব্যাংক দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং আইন অনুসারে গঠিত।
৩। মালিকানা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত। এ ব্যাংক সরকারি, বেসরকারি, যৌথ মালিকানায় গঠিত।
৪। উদ্দেশ্য মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ তথা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এর প্রধান উদ্দেশ্য। মুনাফা অর্জন করা এর মূল উদ্দেশ্য।
৫।  প্রতিনিধিত্ব সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের অর্থনৈতিক কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিত্বের সাথে গ্রাহকদেরও প্রতিনিধিত্ব করে।
৬। শাখা দেশের কয়েকটি অঞ্চলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা বিদ্যমান। দেশে-বিদেশে সব জায়গায় এ ব্যাংকের শাখা থাকে।
৭। নিয়ন্ত্রণ এ ব্যাংক সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত।
৮। মুদ্রাবাজারের সাথে সম্পর্ক কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারের অভিভাবক। এ ধরনের ব্যাংক মুদ্রাবাজারের সদস্য।
৯। ঋণ নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। ঋণ নিয়ন্ত্রণে এ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:   নিকাশ ঘর কি? নিকাশ ঘরের গুরত্ব আলোচনা কর।

১০। নোট ইস্যু এ ব্যাংক এককভাবে নোট ইস্যু করে। এ ব্যাংকের নোট ইস্যু করার কোনো ক্ষমতা নেই।
১১। ঋণদান এ ব্যাংক সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয়। এ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়।
১২। তালিকাভু্ক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংককে সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নেয়। এই ব্যাংকগুলো কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হয়।
১৩। নিকাশ ঘর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নিকাশ ঘরের সুবিধা দেয়। এ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য হিসেবে নিকাশ ঘরের সুবিধা নেয়।
১৪। রিজার্ভ সংরক্ষণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ অর্থ রিজার্ভ করে না। তবে প্রতিটি নোটের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ বা বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করে। এ ব্যাংক আমানতের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে।
১৫। হিসাব দাখিল এ ব্যাংক সরকারের কাছে হিসাব দাখিল করে। এ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হিসাব দাখিল করে।
১৬। সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম এ ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিং কাজ করে না। এ ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিং কাজ করে।
১৭। মর্যাদা মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে এ ব্যাংকের মর্যাদা সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপরে। এ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। তাই এ ব্যাংকের মর্যাদা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিচে।
১৮। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক বিদ্যমান। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক বিদ্যমান।

Related Posts