ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের উপাদান সমূহ
একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, সেখানে পরিবেশের এমন কিছু উপাদান বা শক্তি থাকে যা ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত, ভালো-মন্দ সবকিছুকে প্রভাবিত করে। তাই প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান বলতে একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সেই সকল উপাদান বা শক্তিকে বুঝায় যা প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে।
নিম্নে ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের উপাদান সমূহ আলোচনা করা হলো-
ক) অভ্যন্তরীণ পরিবেশ
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিদ্যমান অবস্থাবলি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সমন্বয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানে যে পরিবেশের জন্ম হয় তাকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উপাদান সমূহ নিম্নরূপ-
১. মালিক বা শেয়ারহোল্ডার
মালিক বা শেয়ারহোল্ডারগণ ব্যবসায়ের মালিক বিধায় তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ব্যবসায় পরিবেশকে প্রভাবিত করে। কোনো দেশের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাগণ যদি দক্ষ ও উত্তম মানসিকতার অধিকারী হয় তবে তা ব্যবসায় পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
আরও পড়ুন: ব্যবসায় পরিবেশ কি? ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান সমূহ কি কি?
২. পরিচালনা পর্ষদ
কোম্পানি সংগঠনে পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধি হিসেবে কোম্পানির মৌল নীতি নির্ধারণ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মৌল দিক-নির্দেশনা প্রদান ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করে। তাই ব্যবসায়ের ওপর পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ প্রভাব সবসময়ই লক্ষণীয়।
৩. শ্রমিক-কর্মী
শ্রমিক-কর্মী এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত সংঘ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আগ্রহ-অনাগ্রহ ব্যবসায়ের কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান সেজন্য শ্রমিক-কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন এবং শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালায়।
৪. প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংস্কৃতি
দীর্ঘকালে কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কতকগুলো ধারণা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও নিয়ম-নীতি গড়ে ওঠে। যার আওতায় প্রতিষ্ঠানের জনশক্তির মানসিক কাঠামো, আচরণের ভাবধারা ও পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। যা কার্যাকার্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই এরূপ উপাদানকে বিবেচনায় আনতে হয়।
৫. প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধা
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধাও অভ্যন্তরীণ পরিবেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, যন্ত্রপাতির মান, ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও পদ্ধতি, ভৌত সুযোগ-সুবিধা, ব্যবসায়িক সুনাম-সুখ্যাতি ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ের কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে।
খ) বাহ্যিক পরিবেশ
একটা প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিভিন্ন অবস্থা এবং পক্ষসমূহের কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে যে প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে তাকে প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিবেশ বলে। নিম্নে এর উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. প্রতিযোগী
বর্তমান প্রতিযোগীতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে প্রতিযোগীদের কর্মকাণ্ড ও কর্মকৌশল কোনো প্রতিষ্ঠান বা এর ব্যবস্থাপনার ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিযোগীরা সব সময়ই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট উপায়-উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে বাজার, প্রযুক্তি, পদ্ধতি, জনশক্তি ইত্যাদি মুখ্য। নতুন প্রতিযোগী, বিকল্প পণ্য ইত্যাদি নিয়েও এক্ষেত্রে ভাবতে হয়।
২. ক্রেতা বা ভোক্তা
অর্থের বিনিময়ে যারা পণ্য বা সেবা ক্রয় করে তারা ব্যবসায়ের বাহ্যিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে এই ক্রেতা বা ভোক্তা সাধারণের ইচ্ছা ও আগ্রহের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য নির্ভর করে। তাই তাদের চাহিদা পূরণে, আস্থা অর্জনে এবং কাছাকাছি পৌঁছাতে সবসময়ই প্রতিষ্ঠান সচেষ্ট থাকে।
৩. সরবরাহকারী
কাঁচামাল, পণ্য সরবরাহকারী, ব্যাংকার ইত্যাদি ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বাহ্যিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এরূপ ব্যবহারকারীদের সহযোগিতার ওপর ব্যবসায়িক সাফল্য নির্ভর করে। তাই সরবরাহকারীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আগ্রহ-অনাগ্রহকেও মূল্য দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
৪. মধ্যস্থ ব্যবসায়ী
কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি বাজারজাতকরণের নীতি গ্রহণ না করলে, ক্রেতা বা ভোক্তা সাধারণের নিকট পণ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেক্ষেত্রে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছ, আচার-আচরণ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব রাখে।
৫. কৌশলগত মিত্র
যেক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মিত্রতার বন্ধন গড়ে ওঠে বা জোটের সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে এরূপ মিত্রদের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠান বা এর ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। বর্তমানকালে বৃহদায়তন বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই দেশে-বিদেশে এ ধরনের মিত্র গড়ে তোলে।
৬. সরকারি সংস্থা
সরকার যখন কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায় খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারি সংস্থার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে তখন এরূপ সংস্থার ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রতিষ্ঠান বা এর ব্যবস্থাপনার ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া ব্যবসায়ের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে সরকারের আগ্রহ-অনাগ্রহ ও সরকারি নিয়ম-নীতি ব্যবসায়ে প্রভাব রাখে।