মুদ্রা
মুদ্রা হলো এমন জিনিস, যার সহজ ও সর্বজনীন ব্যবহার, বিনিময় ও গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা কাজ করে। মুদ্রা এমন একটি বিনিময়ের মাধ্যম, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যার দ্বারা সব রকম লেনদেন তথা দেনা-পাওনা, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির হিসবা সম্পন্ন করা যায়। এর সর্বজনগ্রাহ্যতা ও আইনসিদ্ধ বাধ্যবাধকতা আছে।
বিভিন্ন দেশে মুদ্রার নাম বিভিন্ন। যেমন- বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা, ভারতের মুদ্রার নাম রুপি, আমেরিকার ডলার, জাপানের ইয়েন ইত্যাদি।
মুদ্রার সংজ্ঞা
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেন। যথা-
পল এ. স্যামুয়েলসন এর মতে, “অর্থ হলো দেনা-পাওনা মেটানোর উপায় অথবা বিনিময়ের মাধ্যম।”
অধ্যাপক জি. ক্রাউথার এর মতে, “যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সবার কাছে গ্রহণীয় এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে, তা-ই অর্থ।”
অতএব বলা যায়, যে বস্তু সরকার ও আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত, যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য, হস্তান্তরযোগ্য এবং মূল্যের নির্ধারক, সংরক্ষক, ঋণ লেনদেনের বাহক ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় তা-ই মুদ্রা।
আরও পড়ুন: সরকারি ব্যয় কি? সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণ গুলো কি কি?
মুদ্রার প্রকারভেদ
মুদ্রাকে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেন। যথা-
১। কাগজি মুদ্রা
আর্থিক কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কাগজের নোট বাজারে প্রচলন করে তা-ই কাগজি মুদ্রা। কাগজি মুদ্রা তিন প্রকার। যথা-
ক) প্রতিনিধিত্বমূলক কাগজি মুদ্রা
যেসব মুদ্রা স্বর্ণ, রৌপ্য বা বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে প্রচলন করা হয় তাকে প্রতিনিধিত্বমূলক কাগজি মুদ্রা বলে। এসব মুদ্রা সরকার বা সরকারের পক্ষে আর্থিক কর্তপক্ষ তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাপাতে পারে।
খ) পরিবর্তনশীল কাগজি মুদ্রা
যেসব মুদ্রার পরিবর্তে সরকার সমপরিমাণ স্বর্ণ, রোপ্য বা অন্য ধাতব মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য থাকে তাকে পরিবর্তনীয় কাগজি মুদ্রা বলে। বাংলাদেশের ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা হলো পরিবর্তনশীল কাগজি মুদ্রা।
গ) অপরিবর্তনীয় কাগজি মুদ্রা
যে কাগজি মুদ্রার পরিবর্তে ধাতব মুদ্রা পাওয়া যায় না তাকে অপরিবর্তনীয় কাগজি মুদ্রা বলে।
২। আইনগত মুদ্রা
আইনগত দিক দিয়ে মুদ্রা দুই প্রকার। যথা-
ক) বিহিত মুদ্রা
আইন দ্বারা প্রচলিত এবং বিনিময়মাধ্যম হিসেবে দেশের জনসাধারণ যা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে তাকে বিহিত মুদ্রা বলে। বিহিত মুদ্রা আবার দুই প্রকার। যথা-
- অসীম বিহিত মুদ্রা
যেকোন পরিমাণ লেনদেনের কাজ যে অর্থের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায় তাকে অসীম বিহিত মুদ্রা বলে। বাংলাদেশে প্রচলিত ১ টাকা, ২ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ইত্যাদি অসীম বিহিত মুদ্রা।
- সসীম বা সীমিত বিহিত মুদ্রা
যে মুদ্রার সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক লেনদেনের কাজ সম্পন্ন করা যায় না অর্থাৎ, যে মুদ্রার মাধ্যমে সীমিত পরিমাণ লেনদেনের কাজ সম্পন্ন করা যায় তাকে সীমিত বিহিত মুদ্রা বলে। বাংলাদেশে ১ পয়সা, ২ পয়সা, ৫ পয়সা ইত্যাদি সীমিত বিহিত মুদ্রা।
খ) ঐচ্ছিক মুদ্রা
যে মুদ্রা গ্রহণে জনসাধারণকে আইনত বাধ্য করা যায় না, অর্থাৎ যে অর্থ গ্রহণ করা জনসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে তাকে ঐচ্ছিক মুদ্রা বলে। যেমন- প্রাইজবন্ড, চেক, বিনিময় বিল, ট্রেজারি বিল ইত্যাদি ঐচ্ছিক মুদ্রা।
৩। প্রকৃতিগত মুদ্রা
প্রকৃতিগত মুদ্রা দুই প্রকার। যথা-
ক) প্রকৃত মুদ্রা
জনসাধারণের দৈনন্দিন লেনদেন কার্যাদি যে অর্থের সাহায্যে করা হয়ে থাকে তাকে প্রকৃত মুদ্রা বলে। যেমন: টাকা, ডলার, পাউন্ড-স্টার্লিং, ইউরো ইত্যাদি। প্রকৃত মুদ্রা দুই প্রকার। যথা-
- ধাতব মুদ্রা
যে মুদ্রা ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি হয় তাকে ধাতব মুদ্রা বলে। এ মুদ্রা আবার দুই ধরনের। যথা- স্ট্যান্ডার্ড মানি ও টোকেন মানি।
- প্রতিনিধিত্বমূলক ধাতব মুদ্রা
সমমানের স্বর্ণ, রৌপ্য বা বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষিত রেখে যে মুদ্রা প্রচলন করা হয় তাকে প্রতিনিধিত্বমূলক ধাতব মুদ্রা বলে। এ ধরনের মুদ্রা মূলত কাগজি নোট হয়ে থাকে এবং অতি সহজে গ্রহণযোগ্য ও বিনিময়যোগ্য।
খ) হিসাবি মুদ্রা
দেশের যাবতীয় দেনা-পাওনা এবং হিসাব-নিকাশ যে মুদ্রার নামে বা উপাধিতে রাখা হয় তাকে হিসাবি মুদ্রা বলে। যেমন- বাংলাদেশের টাকা, ভারতের রুপি, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ইত্যাদি হলো সংশ্লিষ্ট দেশের হিসাবি মুদ্রা।