Home » ভোগ অপেক্ষক কি? ভোগ অপেক্ষক কত প্রকার ও কি কি?
ভোগ অপেক্ষক কি? ভোগ অপেক্ষক কত প্রকার?

ভোগ অপেক্ষক কি? ভোগ অপেক্ষক কত প্রকার ও কি কি?

by TRI

ভোগ অপেক্ষক

অর্থনীতিবিদ লর্ড কেইনস ভোগ অপেক্ষক ধারণাটির প্রবর্তক। ভোগ ব্যয় ও আয়ের মধ্যকার নির্ভরশীলতার সম্পর্ককে ভোগ অপেক্ষক বলে। কেইনস বলেন, “আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়, আবার আয় কমলে ভোগ ব্যয় কমে। তবে আয় যে হারে বৃদ্ধি পায় ভোগ ব্যয় সে হারের চেয়ে কম হারে বৃদ্ধি পায়।” ফলে ভোগ অপেক্ষক দ্বারা আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে ধনাত্মক বা সমমুখী সম্পর্ক নির্দেশিত হয়।

নিচে ভোগ অপেক্ষককে প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হলো-

C =f(Y)

এখানে,

C = ভোগ ব্যয়

Y = আয়

f = অপেক্ষকের চিহ্ন

অপেক্ষকে প্রকাশ পায় যে, অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে ভোগ ব্যয় (C) আয় (Y) এর সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত। আয় বাড়লে ভোগ ব্যয় বাড়ে তবে আয় যতটুকু বাড়ে ভোগ ব্যয় তার চেয়ে কম বাড়ে।

আরও পড়ুন:  ভোগ ব্যয় কি? ভোগ ব্যয়ের প্রকারভেদ ও নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর

ভোগ অপেক্ষকের প্রকারভেদ

ভোগ অপেক্ষককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১) স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক

স্বল্পকালীন সময়ে আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে যে কার্যকরী সম্পর্ক বিরাজ করে, তাকে স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে। এখানে স্বল্পকাল বলতে এমন সময়কে নির্দেশ করা হয়, যে সময়ে ভোগকে প্রভাবিত করে এমন কিছু উপাদান স্থির থাকে। স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে অ-আনুপাতিক সম্পর্ক বিরাজ করে। এ সময়ে শূন্য আয় স্তরেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোগ বজায় থাকে।

স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে প্রকাশ করা হয়ে থাকে-

C = a + bY

এখানে,

C = ভোগ ব্যয়

a = স্বয়ম্ভূত ভোগ

b = প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা

Y = আয়

a ও b এর কাল্পনিক মান ধরে ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে দেখানো যায়-

C = 10 + 0.5 Y

উপরিউক্ত স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক থেকে নিচে ভোগ সূচি দেখানো হলো-

স্বল্পকালীন ভোগ সূচি

যে তালিকার মাধ্যমে স্বল্পকালে আয় ও ভোগ ব্যয়ের সম্পর্ককে প্রকাশ করা হয়, তাকে স্বল্পকালীন ভোগ সূচি বলে। স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক C = 10 + 0.5 Y থেকে একটি স্বল্পকালীন ভোগ সূচি তৈরি করে দেখানো হলো-

আয় (Y) ভোগ ব্যয় (C)
০ টাকা ১০ টাকা
১০ টাকা ১৫ টাকা
২০ টাকা ২০ টাকা
৩০ টাকা ২৫ টাকা
৪০ টাকা ৩০ টাকা
৫০ টাকা ৩৫ টাকা

সূচিতে দেখা যায়, শূন্য আয়স্তরে ভোগ ব্যয় ১০ টাকা। আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০, ২০, ৩০, ৪০ ও ৫০ টাকা হলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি যথাক্রমে ১৫, ২০, ২৫, ৩০ ও ৩৫ টাকা হয়। ফলে এটি ভোক্তার স্বল্পকালীন ভোগ আচরণ প্রকাশ করে।

২) দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক

দীর্ঘকালীন সময়ে আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে যে কার্যকরী সম্পর্ক বিরাজ করে, তাকে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে। এখানে দীর্ঘকাল বলতে এমন সময়কে বোঝানো হয়, যে সময় ভোগকে প্রভাবিত করে এমন সব উপাদান পরিবর্তনশীল। দীর্ঘকালে আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক প্রকাশ পায়। এ সময়ে শূন্য আয়ে ভোগ ব্যয় শূন্য হয়।

দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে প্রকাশ করা হয়-

C = bY

এখানে,

C = ভোগ ব্যয়

b = প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা

Y = আয়

b এর কাল্পনিক মান ধরে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে দেখানো যায়-

C = 0.5 Y

উপরিউক্ত দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক থেকে নিচে দীর্ঘকালীন ভোগ সূচি ও দীর্ঘকালীন ভোগ রেখা দেখানো হলো-

দীর্ঘকালীন ভোগ সূচি

দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করে দীর্ঘকালীন ভোগ সূচি পাওয়া যায়। দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে C = 0.5 Y থেকে একটি দীর্ঘকালীন ভোগ সূচি তৈরি করে দেখানো হলো-

আয় (Y) ভোগ ব্যয় (C)
০ টাকা ০ টাকা
১০ টাকা ৫ টাকা
২০ টাকা ১০ টাকা
৩০ টাকা ১৫ টাকা
৪০ টাকা ২০ টাকা
৫০ টাকা ২৫ টাকা

সূচিতে দেখা যায়, শূন্য আয়ে ভোগ ব্যয় শূন্য। আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১০, ২০, ৩০, ৪০ ও ৫০ টাকা হলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ টাকা হয়। এটি ভোক্তার দীর্ঘকালীন ভোগ আচরণ প্রকাশ করে।

Related Posts