ভোগ ব্যয়
মানুষ অভাব পূরণে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার ব্যবহার করে থাকে। ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার উপযোগ লাভ করাকে অর্থনীতিতে ভোগ বলে। ভোগের জন্য দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা ক্রয়ে যে অর্থ ব্যয় হয়, তাকে ভোগ ব্যয় বলে অভিহিত করা হয়। ভোগ ব্যয় নানাবিধ বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেমন- আয়, দাম, রুচিতও অভ্যাস, সুদের হার, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি।
ভোগ ব্যয়ের প্রকারভেদ
ভোগ ব্যয়কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। স্বয়ম্ভূত ভোগ
শূন্য (০) আয় স্তরের ভোগকে স্বয়ম্ভূত ভোগ বলা হয়। স্বয়ম্ভূত ভোগ আয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। স্বয়ম্ভূত ভোগ রেখা ভূমি অক্ষের সমান্তরাল হয়ে থাকে।
২। প্ররোচিত ভোগ
আয়ের উপর যে ভোগ নির্ভরশীল, তাকে প্ররোচিত ভোগ বলে। আয়ের পরিবর্তনে এ ভোগের পরিবর্তন ঘটে থাকে। প্ররোচিত ভোগ রেখা মূলবিন্দু থেকে ডান দিকে উর্ধ্বগামী হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: জাতীয় আয়ের চক্রাকার প্রবাহ কি?
ভোগ ব্যয়ের নির্ধারকসমূহ
যেসব বিষয় দ্বারা ভোগ ব্যয় প্রভাবিত হয়, সেসব বিষয়কে ভোগ ব্যয়ের নির্ধারক বলা হয়। ভোগ ব্যয় বস্তুগত, অবস্তুগত, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক নানাবিধ বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। নিচে প্রধান প্রধান বিষয় আলোচনা করা হলো-
১। আয়
আয়ের উপর ভোগ ব্যয় নির্ভরশীল। আয় বাড়লে বা কমলে ভোগ ব্যয় বাড়ে বা কমে। আয়কে ভোগ ব্যয়ের মৌলিক নির্ধারক বলা হয়।
২। সাধারণ দামস্তর
সাধারণ দামস্তর ভোগ ব্যয়কে প্রভাবিত করে। সাধারণ দামস্তর বাড়লে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায় এবং সাধারণ দামস্তর কমলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৩। আয় বন্টন
আয় বন্টনের বৈষম্য ভোগ ব্যয়কে প্রভাবিত করে। মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বেশির ভাগ আয় কেন্দ্রীভূত হলে সামগ্রিক ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়।
৪। ভোগপ্রবণতা
ভোগপ্রবণতার উপর ভোগ ব্যয় বহুলাংশে নির্ভরশীল। আয় কম হলেও উচ্চ ভোগপ্রবণতা ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি করে। বিপরীতভাবে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়।
৫। সঞ্চয়প্রবণতা
সঞ্চয়প্রবণতা ভোগপ্রবণতা হ্রাস করে ভোগ ব্যয় কমিয়ে দেয়। বিপরীতভাবে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৬। মজুরি
শ্রমিকদের মজুরির উপর ভোগ ব্যয় নির্ভর করে। মজুরি হ্রাস পেলে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায় আর মজুরি বৃদ্ধি পেলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৭। কর
ভোগ ব্যয় কর দ্বারা প্রভাবিত হয়। করের পরিমাণ বেশি হলে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়্ অন্যদিকে, করের পরিমাণ কম হলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৮। সুদের হার
অধিক সুদের হার মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে। ফলে ভোগ ব্যয় কমে যায়। অন্যদিকে, সুদের হার কম থাকলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৯। প্রত্যাশা
প্রত্যাশা দ্বারা ভোগ ব্যয় প্রভাবিত হয়। ভবিষ্যতে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, আয় বাড়তে পারে, ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধি পেতে পারে- এরূপ প্রত্যাশা ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি করে। বিপরীত প্রত্যাশায় ভোগ ব্যয় কমে যায়।
১০। রুচি, অভ্যাস ও পছন্দ
উন্নত রুচি, অভ্যাস ও পছন্দ ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি করে। আবার নিম্নমানের রুচি, অভ্যাস ও পছন্দ ভোগ ব্যয় কমিয়ে দেয়।
১১। তারল্য
মানুষের নিকট তরল সম্পদ যত বেশি থাকে ভোগ ব্যয় তত বেশি হয়।
১২। সামাজিক নিরাপত্তা
অবসর ভাতা, বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সামাজিক নিরাপত্তার এসব বিষয় মানুষকে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা প্রদান করে। ফলে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও ভোগ ব্যয় প্রদর্শন প্রভাব, বিজ্ঞাপন, সামাজিক মান-মর্যাদা, উৎসব-অনুষ্ঠান ও স্থান-কাল-পাত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, স্বল্পকালে এসব বিষয় দ্বারা ভোগ ব্যয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও দীর্ঘকালে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।