আধুনিক খাজনা তত্ত্ব
রিকার্ডো প্রদত্ত খাজনাতত্ত্বের ত্রুটিগুলো দূর করে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ খাজনা সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা আধুনিক খাজনা তত্ত্ব নামে অভিহিত। আধুনিক খাজনা তত্ত্বে Mrs. Joan Robinson, Boulding, G. Stigler, Shephered, P. A. Samuelson – এর অবদান বিশেষভাবে স্বীকৃত। খাজনার আধুনিক সংজ্ঞায় Mrs. Joan Robinson বলেন, “উৎপাদেনের কোনো উপাদানকে যে ন্যূনতম দামে কাজে নিযুক্ত করানো যায়, তা অপেক্ষা যে উদ্বৃত্ত পারিশ্রমিক পায়, তাকে খাজনা বলে।”
আধুনিক খাজনা তত্ত্ব অনুযায়ী খাজনাকে উদ্বৃত্ত আয় গণ্য করলেও তা রিকার্ডোর বক্তব্য থেকে ভিন্ন। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, জমির মতো অন্যান্য উপাদানও খাজনা অর্জন করতে পারে। অন্যান্য উপাদানের মতোই জমির চাহিদা ও যোগান দ্বারা এর খাজনা নির্ধারিত হয়। খাজনার আধুনিক তত্ত্ব দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। যথা- ১) অপ্রাচুর্যজনিত খাজনা ও ২) স্থানান্তর আয়।
আরও পড়ুন: রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব সমালোচনা সহকারে আলোচনা
১. অপ্রাচুর্যজনিত খাজনা
আধুনিক খাজনা তত্ত্ব অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় জমির অস্থিতিস্থাপক যোগানের কারণেই খাজনার সৃষ্টি হয়। ব্যক্তির ক্ষেত্রে জমির যোগান কিছুটা স্থিতিস্থাপক। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমাজের জমির যোগান বাড়ানো বা কমানো যায় না বলে তা অস্থিতিস্থাপক। ফলে এর কোনো যোগান দাম নেই। সবটাই জমির উদ্বৃত্ত আয়। জমির এই আয়ই অপ্রাচুর্যজনিত খাজনা। জমির চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতার কারণেই এ ধরনের খাজনার উদ্ভব ঘটে।
২. স্থানান্তর আয়
আধুনিক খাজনা তত্ত্বানুযায়ী উৎপাদনের যেকোনো উপাদান খাজনা অর্জন করতে পারে। তাই এ ধারণা অনুযায়ী খাজনা শুধু জমির ক্ষেত্রে নয়, উৎপাদনের অন্য যেকোনো উপাদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। প্রত্যেক উপাদানের যোগান দাম বিদ্যমান। যে দামের কমে উপাদানের যোগান সৃষ্টি হবে না, সে দামকে নিম্নতম যোগান দাম বলে। একটি শিল্পে বিভিন্ন শ্রমিকের যোগান দাম বিভিন্ন হয়। কেননা, সব শ্রমিকের দক্ষতা ও যোগ্যতা সমান নয়। আবার, শ্রমিকের কাজের বিভিন্নতার কারণে এক কাজ থেকে অন্য কাজে নিয়োগ করতে হলে ত্যাগকৃত কাজের আয়ের সমপরিমাণ আয় তাকে দিতে হবে। অন্যথায় সে কাজ করবে না। কোনো বিশেষ কাজে নিয়োগের জন্য এই আয়ই উক্ত উপাদানের নিম্নতম আয়। এই আয়কে স্থানান্তর আয় বা সুযোগ আয় বলা হয়। কোনো উপাদান এই স্থানান্তর আয়ের অতিরিক্ত আয় করলে তাকে খাজনা বলে।