এক মালিকানা ব্যবসায়
একজন মালিক যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, তখন তাকে এক মালিকানা ব্যবসায় বা এক মালিকানা কারবার বলে। অধ্যাপক R. O. Wheeler বলেন, “একক মালিকানা কারবার ঐ ধরনের ব্যবসার মালিকানা, যা মাত্র এক ব্যক্তির মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” এক্ষেত্রে মালিক একাই ব্যবসায়ের যাবতীয় দায়িত্ব ও ঝুঁকি বহন করেন। প্রাচীনকাল থেকেই একক মালিকানা প্রচলিত ছিল, যদিও বর্তমান বৃহদায়তন উৎপাদনের যুগে একক মালিকানা কমে আসছে।
এক মালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
এক মালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
১. স্বল্প মূলধন: এক মালিকানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তির স্বল্প মূলধনই ব্যবসায় শুরুর জন্য প্রধান ভূমিকা রাখে।
২. সহজ আইনগত প্রক্রিয়ায় গঠন: ব্যবসার শুরুতে শুধু স্থানীয় পৌরসভা বা নগর কর্তৃপক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। এরপর পুঁজি থাকলে যে কেউই ব্যবসা শুরু করতে পারে।
৩. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: মালিক ও পরিচালক একই ব্যক্তি হওয়ায় ব্যবসা-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত তিনি অতি দ্রুতই নিতে পারেন।
৪. মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: অল্প শ্রমিক থাকায় মালিক-শ্রমিকের সমস্যা নিজেই অবগত হয়ে কাজ করতে পারেন।
৫. স্বল্প উৎপাদন: উৎপাদনের পরিমাণ কম হয় এবং গড় ব্যয় বেশি হয়।
৬. নিজস্ব কর্তৃত্ব, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ: মালিক নিজে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন, ক্ষেত্রবিশেষে পরিবার/কর্মচারীদের সাহায্য নেন। ব্যবসায় তার একক নিয়ন্ত্রণ থাকে।
৭. অসীম দায়: ব্যবসার সর্বপ্রকার দায় মালিকের। যেকোনো দায় মেটানোর জন্য তিনি একাই দায়ী।
আরও পড়ুন: এনজিও কি? এনজিও এর ভূমিকা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন
এক মালিকানা ব্যবসায়ের সুবিধা
এক মালিকানা ব্যবসায়ের সুবিধাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
এক মালিকানা ব্যবসায়ে উদ্যেক্তা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কারও পরামর্শের উপর তার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে না। তাই তিনি দ্রুত এবং সহজে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
২. সহজ গঠন
এ ধরনের ব্যবসার শুরুতে আইনগত জটিলতা কম থাকায় সামান্য পুঁজিতেই যে কেউ এ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
৩. উৎসাহ
এক্ষেত্রে মালিক একাই সব মুনাফা ভোগ করেন। তাই ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার উৎসাহ সর্বদাই বেশি থাকে। মালিকের উদ্যোগ, পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার ফলে সহজেই ব্যবসার উন্নতি হয়।
৪. মূলধন গঠন
স্বল্প মূলধনে ব্যবসা শুরু হলেও উদ্যোক্তা এক্ষেত্রে তার উদ্বৃত্ত থেকে সঞ্চয় এবং সঞ্চয় থেকে মূলধন গঠন করে থাকেন, যা ব্যবসার উন্নতি ঘটায়।
৫. হিসাবের সুবিধা
মালিক নিজের সুবিধামতো যেকোনো উপায়ে হিসাব সংরক্ষণ করার ব্যাপারে স্বাধীন। হিসাবরক্ষণে কোনো জটিল পদ্ধতি অনুসরণ যেমন বাধ্যতামূলক নয়, একইভাবে হিসাবরক্ষণজনিত আইনগত কোনো জটিলতাও এক্ষেত্রে হয় না।
৬. অপচয় কম হয়
মালিক নিজেই ব্যবসা তদারক করে। ফলে কাঁচামাল ব্যবহার থেকে চূড়ান্ত দ্রব্য উৎপাদন এমনকি বাজারজাতকরণ পর্যায় পর্যন্ত অপচয় কম করার ব্যাপারে মালিক উদ্যোগী হয়। সেই সাথে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট দ্রব্য তৈরি নিশ্চিত করা হয়।
৭. গোপনীয়তা রক্ষা
এক মালিকানা ব্যবসায় মালিক ব্যবসার গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে অনেক পরিকল্পনা ও কৌশল গোপন রাখতে হয়।
৮. সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা
এক মালিকানা ব্যবসায়ে মালিক একজন বিধায় তিনি নিজে ব্যবসায়ের জন্য মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। ফলে ব্যবসায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হয়।