Home » শিল্প বিরোধ বলতে কী বুঝায়? শিল্প বিরোধের ধরন আলোচনা কর।

শিল্প বিরোধ বলতে কী বুঝায়? শিল্প বিরোধের ধরন আলোচনা কর।

by TRI

শিল্প বিরোধ কি?

সাধারণ ভাষায় শ্রম-ব্যবস্থাপনার মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে যে মতবিরোধ বা মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় তাকে শিল্প বিরোধ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, শ্রমিকগণ যখন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় তখন তাকে শিল্প বিরোধ বা শিল্প সংঘাত হিসেবে অভিহিত করা হয়।

শিল্প বিরোধের ধরন বা প্রকারভেদ

শিল্প বিরোধের ধরনকে দুভাবে বর্ণনা করা যায়। একটি হলো শ্রমিক কর্তৃক গৃহীত কৌশল এবং অন্যটি ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত কৌশল। নিম্নে দুই ধরনেরই আলোচনা করা হলো-

ক. শ্রমিক কর্তৃক গৃহীত কৌশল

শিল্প বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর এমন কতিপয় কৌশল রয়েছে যা শ্রমিক কর্তৃক সম্পাদিত হয়। এগুলোকে শ্রমিক কর্তৃক গৃহীত কৌশল বলা হয়। নিম্নে এসব কৌশল পর্যায়ক্রমিকভাবে আলোচনা করা হলো-

১. ধর্মঘট

শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের একটি গণতান্ত্রিক কৌশল হল ধর্মঘট। এ ব্যবস্থায় শ্রমিকগণ কর্তৃক উত্থাপিত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে।

২. ঘেরাও আন্দোলন

বিরোধে লিপ্ত শ্রমিকগণ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে রাখে। সম্মিলিতভাবে চাপ প্রয়োগ করে দাবি মেনে নিতে কর্তৃপক্ষকে রাজি করানোর এটি একটি প্রচলিত কৌশল।

৩. অবস্থান ধর্মঘট

এরূপ ধর্মঘটে শ্রমিকগণ কর্মস্থলে উপস্থিত হয় ঠিকই, কিন্তু কোন কাজ করে না। এ ব্যবস্থায় শ্রমিকগণ দাবি-দাওয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল বা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে।

আরও পড়ুন:  যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি কে? যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধির ভূমিকা কী?

৪. ধীরে চল

শিল্প বিরোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এটি এমন এক অবস্থা যেখানে শ্রমিকরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয় এবং কাজও করে। তবে কাজের গতিশীলতা অত্যন্ত ধীর গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ডের অব্যাহত ধারা ব্যাহত হয়।

৫. টোকেন ধর্মঘট

শিল্প বিরোধ নিরসনে ব্যবস্থাপনাকে কিছুটা সময় দেয়ার সুযোগ হিসেবে এ ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়। টোকেন ধর্মঘটের সময় সাধারণত কয়েক ঘণ্ট বা ১ দিন হয়ে থাকে।

৬. পিকেটিং

পিকেটিং হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শ্রমিক সংঘ কর্তৃক আহূত ধর্মঘট সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজে যোগ না দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়। তাছাড়া এ ব্যবস্থায় কোন শ্রমিক যদি কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে সেক্ষেত্রে তাকে বাধাপ্রদান করা হয়।

৭. অবরোধ

এ ব্যবস্থায় শ্রমিকগণ তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে কর্মস্থলে কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে রাখে। এক্ষেত্রে দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ ব্যক্তির সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। শিল্প বিরোধের বহিঃপ্রকাশের এটি একটি আধুনিক রূপ।

৮. সাধারণ ধর্মঘট বা হরতাল

শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়। এরূপ ধর্মঘট ‘হরতাল’ নামেও সুপরিচিত। এ ব্যবস্থায় শিল্পীয় কর্মকাণ্ডসহ পরিবহন, দোকান-পাট ও অফিস-আদালতের কার্যক্রম অচল করে দেয়া হয়। এতে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।

খ. ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত কৌশল

শিল্প বিরোধের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ ব্যবস্থাপনা যেসব কৌশল গ্রহণ করে তাকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃক গৃহীত কৌশল বলা হয়। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে-

১. তালাবদ্ধকরণ

শ্রম-বিরোধ নিরসনের একটি বিশেষ কৌশল হলো তালাবদ্ধকরণ বা কারখানা বন্ধ করা। এ ব্যবস্থায় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সৃষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারখানায় তালাবদ্ধ ঘোষণা করে। অর্থাৎ শ্রমিকগণ যাতে কারখানায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কারখানার প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। এমতাবস্থায় শ্রমিকগণ ব্যবস্থাপনার দেয়া শর্তাদি মানতে বাধ্য হয়।

২. আদালতের নিষেধাজ্ঞাপত্র

শিল্প বিরোধ নিরসনে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অনেক সময় আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞাপত্র জারি করে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে পিকেটিং বা অবৈধ ধর্মঘট না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। উল্লেখ্য, শ্রমিক সংঘের আবেদনের প্রেক্ষিতেও আদালত নিষেধাজ্ঞাপত্র জারি করতে পারে।

Related Posts